শনিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

যুক্তরাষ্ট্রে স্বস্তিতে অবৈধ বাংলাদেশিরা

কাগজপত্রহীনদের বহিষ্কারাদেশ স্থগিত ১০০ দিন

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

১০০ দিনের মধ্যে কোনো কাগজপত্রহীন অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হবে না। ২১ জানুয়ারি থেকে এ নির্দেশ কার্যকর হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্দেশে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে ২০ জানুয়ারি এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

এর ফলে বাইডেন কর্তৃক কংগ্রেসে প্রেরিত ১১ মিলিয়ন কাগজপত্রহীন অভিবাসীকে ওয়ার্ক পারমিটের পথ ধরে পাঁচ বছর পর গ্রিনকার্ড প্রদান এবং তারও তিন বছর পর সিটিজেনশিপ প্রদানের যে বিল (ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট অব ২০২১) পাসের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। তার আগ পর্যন্ত আর কাউকে বহিষ্কারের আতংকে দিনাতিপাত করতে হবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অপেক্ষায় যারা দক্ষিণের সীমান্তে অপেক্ষা করছেন, তাদের ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। এমনকি, যাদের অ্যাসাইলামসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে গ্রিনকার্ডের আবেদন পেন্ডিং রয়েছে তাদের কথাও নেই। শুধু যাদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে বহিষ্কারের আদেশ জারি হয়েছে অথবা সীমান্ত অতিক্রম করার পর কোনো প্রোগ্রামে আবেদনই করেনি, তেমন কাগজপত্রহীনরা এ সুবিধা পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। অভিবাসন ইস্যুতে জো বাইডেনের এসব পদক্ষেপকে অভিনন্দিত করে খ্যাতনামা অ্যাটর্নি ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার মঈন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সর্বশেষ সার্কুলারের সুবিধা সবচেয়ে বেশি পাবে মেক্সিকোসহ সেন্ট্রাল আমেরিকার বিভিন্ন দেশের লোকজন। বাংলাদেশির সংখ্যাও হাজার পঞ্চাশেক হতে পারে। তাই এই নির্দেশের পর কমিউনিটিতে স্বস্তি এসেছে। বিশেষ করে দায়িত্ব গ্রহণের পরই ২০ জানুয়ারি অপরাহ্ণের কংগ্রেসের প্রতি অভিবাসন-ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য যে আহ্বান জানানো হয়েছে, সেটি অবশ্যই যুগান্তকারী একটি ঘটনা। সেখানেও বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের কাগজপত্রহীনরা  খুব বেশি ফায়দা পাবে বলে মনে করছি না। এজন্য ২১ জানুয়ারি ইউএস সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাট সিনেটর চাক শুমারের অফিসে টেলিফোন করে অনুরোধ জানিয়েছে, শুধু কাগজপত্রহীনদের গ্রিনকার্ডের ব্যবস্থা হলে একইভাবে মেক্সিকোসহ সেন্ট্রাল আমেরিকানরাই পুরো সুবিধা পাবে।

অভিবাসন বিষয়ক প্রখ্যাত অ্যাটর্নি অশোক কর্মকার বলেন, সিএসএস-লুলাক কর্মসূচিতে যারা গ্রিনকার্ড পাননি, তারাও কাগজপত্রহীন হিসেবে ঘোষিত সুবিধা পাবেন। এ ছাড়া, যারা অ্যাসাইলামের পর শুধু ওয়ার্ক পারমিট পেয়েছেন তারা বহিষ্কারের বাইরে থাকলেও এই বিলের সুবিধা পুরোপুরি ভোগ করতে সক্ষম হবেন কিনা তা জানা যাবে বিলটি পাসের পর।

উল্লেখ্য, ট্রাম্পের আমলে ইমিগ্রেশন কোর্টে ঝুলে থাকা আবেদনের সংখ্যা ১৩ লাখ ছাড়িয়েছে। এগুলো পেন্ডিংয়ের গড় সীমা আড়াই বছরের বেশি। বাইডেনের প্রত্যাশা অনুযায়ী সবাইকে লিগ্যাল স্ট্যাটাস দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হলে পেন্ডিং আবেদনের সংখ্যা রাতারাতি কমে আসবে বলে অ্যাটর্নিরা মনে করছেন।

ট্রাম্পকে ফোন করার পরিকল্পনা নেই : সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফোন করার কোনো পরিকল্পনা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেই বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। বুধবার ট্রাম্প বাইডেনের উদ্দেশ্যে ‘অত্যন্ত উদার’ একটি চিঠি লিখেছেন বলে উল্লেখ করেন বাইডেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্পকে ফোন করার পরিকল্পনা বর্তমান প্রেসিডেন্টের আছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘কল করার কোনো পরিকল্পনা নেই।’

বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প উপস্থিত ছিলেন না, যা যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্টদের জন্য এক বিরল ঘটনা। সাকি বলেন, ‘তিনি (বাইডেন) যা বলতে চেয়েছেন তা হলো সাবেক প্রেসিডেন্টের অনুমতি ছাড়া তার ব্যক্তিগত চিঠি তিনি প্রকাশ করতে চান না। তবে আমি বলব না ফোন কলের মাধ্যমে তিনি এই অনুমতি চাইবেন, ব্যক্তিগত যে চিঠিটি পাঠানো হয়েছে সেটির ওপর তিনি শুধু শ্রদ্ধাশীল থাকার চেষ্টা করছিলেন।’

বাইডেনের হাত ধরে দরিদ্র দেশের ভ্যাকসিন : ক্ষমতা গ্রহণের প্রথমদিন থেকেই ট্রাম্প প্রশাসনের বিতর্কিত নীতিগুলো কাটাছেঁড়া শুরু করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। প্রেসিডেন্টের  চেয়াওে প্রথমবার বসেই বাতিল করেছেন মুসলিম দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা, যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়েছেন প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায়। এবার দরিদ্র দেশগুলোর জন্য করোনা ভ্যাকসিন নিশ্চিতকরণে  কোভ্যাক্স পরিকল্পনারও অংশ হতে চলেছেন তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান চিকিৎসা উপদেষ্টা ডা. অ্যান্থনি ফাউসি বৃহস্পতিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ডব্লিউএইচওর নির্বাহী  বোর্ডকে তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন শিগগিরই একটি নির্দেশনা জারি করবেন, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রেও কোভ্যাক্সে যোগদানের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

উল্লেখ্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, গ্যাভি ও সিইপিআইয়ের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত কোভ্যাক্সের মাধ্যমে বিশ্বের সব দেশের জন্য করোনা ভ্যাকসিন নিশ্চিতের চেষ্টা চলছে। কিন্তু এ পরিকল্পনার অংশ হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুধু তাই নয়, প্রথমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় অনুদান বন্ধ, পরে সংস্থাটি থেকেই যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে আনার ঘোষণা দেন ট্রাম্প।

সর্বশেষ খবর