সোমবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

১৫৪ বার ধুম-৩ দেখে কিশোরের ব্যাংক ডাকাতি!

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

স্কুলছাত্র ‘কৌশিক’। যেমন সুদর্শন তেমন তুখোড় মেধাবী। অ্যাডভেঞ্চারে দারুণ নেশা। আধুনিক বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে মাথায় সব জাদুকরী জ্ঞান। দুনিয়ার সব বাঘা বাঘা সাইবার অপরাধীর সঙ্গে তার সখ্য। ভুয়া ৫২টি ফেসবুক আর ২২টি ই-মেইল আইডি দিয়ে নিয়ন্ত্রিত তার অপরাধের নেটওয়ার্ক। আর ডার্কওয়েব জগতের নিষিদ্ধ গলিপথটাও তার চেনা। হোয়াইট ডেভিল নামের হ্যাকিং গ্রুপের চতুর এই সদস্য বগুড়া শহরের বিস্ময়কর বালক। বগুড়ার গাবতলীর একটি ব্যাংক ডাকাতির দুর্বৃত্ত খুঁজতে গিয়ে পুলিশ আবিষ্কার করেছে এই কিশোরকে।

ওই ডাকাতির ঘটনার ১৮ দিন পর পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া কৌশিকের (তার প্রকৃত নাম ব্যবহার করা হয়নি) বয়স সবে ১৬। এই বয়সেই অপরাধ দুনিয়ার নানা দরজায় ঘুরে ফেরা এই কিশোর নিজ মুখেই জানান দিয়েছে তার ভয়ংকর সব কীর্তির কথা। পিলে চমকানো এসব তথ্য জেনে শুধু হতভম্বই নন, ভ্যাবাচেকা খেয়েছেন বগুড়া পুলিশের অপরাধ বিশেষজ্ঞরাও।

বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বসার কথা কৌশিকের। পড়াশোনার পাশাপাশি সে স্কাউটিং, বিএনসিসি, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও তথ্য-প্রযুক্তিতে দারুণ দক্ষ। ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ডসহ রাজশাহী বিভাগের সেরা স্কাউটের খেতাব পায় কৌশিক। তার বাবা বগুড়া শহরের নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী। বাড়ি শহরতলীর মাটিডালি এলাকায়। তার বড় বোনের বিয়ে হয়েছে বগুড়ার গাবতলীতে। সেই টানে কৌশিক প্রায়ই গাবতলী যেত। ঠিক এ কারণেই সেখানকার ব্যাংকে ডাকাতির চিন্তা মাথায় আসে তার।

গাবতলীর ডাকাতি ছিল কৌশিকের অ্যাডভেঞ্চারের অংশ। এ কারণে অত্যাধুনিক ভিজ্যুয়াল ইফেক্টসে তৈরি বলিউডের ছবি ‘ধুম-৩’ গুনে গুনে ১৫৪ বার দেখে সে নিজেকে প্রস্তুত করে। মূলত এই ছবি দেখে এবং সাইবার অপরাধে বিচরণ করে বেড়ানো কৌশিকের সাধ জাগে ব্যাংক ডাকাতির ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাডভেঞ্চারের।

গত ৫ জানুয়ারি বগুড়ার গাবতলীতে ছুরিকাঘাত ও দাহ্য পদার্থ ছুড়ে দুই নিরাপত্তারক্ষীকে আহত করে রূপালী ব্যাংকের একটি শাখায় ডাকাতির চেষ্টা করে কৌশিক। মুখোশ পরা অবস্থায় তার নিক্ষিপ্ত দাহ্য পদার্থ ও ছুরিকাঘাতে ক্ষতবিক্ষত হন দুই আনসার সদস্য। ওই দিন ভোরে সে মুখোশ এবং হাতে বিশেষ রুফটপ গ্লাভস পরে প্রথমে ছাদে ওঠে। এই গ্লাভস ব্যবহার করলে স্পাইডারম্যানের মতো দেয়ালে উঠতে মই ব্যবহার করতে হয় না। এরপর কাটার দিয়ে ছাদের সিঁড়িঘরের তালা কেটে ভিতরে ঢোকে কৌশিক। শেষে ব্যাংকের ভিতরের ভল্ট ভাঙার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় সে। ঘটনার ১৮ দিন পর গাজীপুরের টঙ্গীর চাচার বাড়ি থেকে কৌশিককে গ্রেফতার করে বগুড়া পুলিশের একটি বিশেষ দল।

কৌশিক পুলিশকে জানায়, সে ডার্কওয়েব থেকে নেওয়া অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ব্যাংক ডাকাতির সময় সেখানে পাহারারত আনসারের গায়ে নাইট্রোজেন সলিউশন ছুড়ে মারে। এটি শরীর পুড়ে ফেলার পাশাপাশি প্রচ- ধোঁয়ার সৃষ্টি করে। কাঁদানে গ্যাসের মতো এই অ্যাসিডও কৌশিকের নিজের ল্যাবে তৈরি। এ ছাড়া সে ব্যাংকের দেয়াল ও মেঝের ওপর এসিটোন আল অ্যালকাইন সলিউশন ঢেলে দেয়। যাতে দেয়াল ও মেঝে পিচ্ছিল হয়ে যায়। এভাবেই বিশ্ব কাঁপাতে চেয়েছিল কৌশিক।

গত শনিবার সন্ধ্যায় পুলিশের পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেফতারের পর ওই স্কুলছাত্র ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তিতে অত্যন্ত দক্ষ ওই শিক্ষার্থী পড়ালেখার পাশাপাশি স্কাউটিংও করে। তবে তার বয়স ১৮ বছরের নিচে হওয়ায় আইন অনুযায়ী তার নাম ও পরিচয় প্রকাশ করা যাচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর