বুধবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

গ্যাস সংকটে ভোগান্তি ঢাকায়

জিন্নাতুন নূর

শীতে প্রতি বছরই গ্যাস সংকটের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয় ঢাকাবাসীকে। তার ব্যতিক্রম হয়নি এবারও।  গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় এই শীত মৌসুমেও দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন নগরীর আবাসিক গ্রাহকরা। আর গ্যাসের অভাবে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি.-এর সংযোগ লাইন থাকার পরও গ্রাহকরা বিকল্প হিসেবে এলপিজি সিলিন্ডার কিনছেন। কেউ কিনছেন ইলেকট্রিক চুলা। এমনকি লাকড়ি জ্বালিয়েও রান্নাসহ প্রয়োজনীয় কাজ সারছেন। এতে গ্রাহকদের ভোগান্তির পাশাপাশি বেড়েছে সংসার খরচও। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মিরপুর, পল্লবী, ধানমন্ডির কিছু এলাকা, জিগাতলা, মগবাজার, বনশ্রী, বাড্ডা, রামপুরা, আগারগাঁও, যাত্রাবাড়ী, ধোলাইপাড়, গেন্ডারিয়া, লালবাগ ও পুরান ঢাকার কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা এখন তীব্র গ্যাস সংকটে ভুগছেন। তিতাস গ্যাস সূত্রে জানা গেছে, নগরীতে আবাসিক এলাকায় গ্যাস সরবরাহের লাইনগুলোতে ৫০ পিএসআই (প্রতি ইঞ্চি এক পাউন্ড) চাপে গ্যাস সরবরাহ করার জন্য নকশা করা হলেও বিগত কয়েক বছরে তা কমে ১০-১২ পিএসআই চাপে নেমে এসেছে। এমনকি কিছু এলাকায় গ্যাসের চাপ ০-২ পিএসআইতেও নেমে এসেছে। এতে এসব এলাকায় চুলা প্রায় জ্বলছেই না। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্টিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী ইকবাল মো. নুরুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সংকটের কারণে গ্যাস সংকট তীব্র হয়েছে। ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি পাওয়ার কথা থাকলেও গত সপ্তাহে আমরা পেয়েছি মাত্র ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি। বর্তমানে আমরা ১৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দিতে পারছি। শীতে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় পাইপলাইনে গ্যাস জমে যাওয়ায় সংকট আরও বাড়ে। যদি গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লি. এই পাইপলাইনগুলো হিট দেওয়ার ব্যবস্থা করত তাহলে অবস্থা কিছুটা ভালো হতো। ঢাকায় গ্যাসের নতুন পাইপলাইন প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে গ্যাস সংকটের কিছুটা উন্নতি হবে। তিনি বলেন, আপাতত এলএনজি সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হলেই সংকট কাটবে। গ্যাস সংকটের কারণে ঢাকার ভুক্তভোগী কয়েকজন গ্রাহক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দিনে তো বটেই এমনকি রাতেও গ্যাসের দেখা মিলছে না। বিশেষ করে গত কয়েকদিনে শীত বেড়ে যাওয়ায় গোসল করার জন্য গরম পানির ব্যবস্থা করতে না পেরে ঠান্ডা পানিতেই তারা গোসল সারছেন। আবার ব্যাচেলরদের কেউ কেউ হোটেল থেকে খাবার কিনে খাচ্ছেন। পুরান ঢাকার চকবাজার এলাকার বাসিন্দা মামুনুর রশিদ বলেন, আমাদের এলাকায় বেশ কয়েকদিন যাবত গ্যাসের অভাবে রান্নাসহ প্রয়োজনীয় কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। বিরক্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত একটি ইলেকট্রিক চুলা কিনেছি। কিন্তু এতে বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যাচ্ছে। মিরপুর-১১ নম্বর এলাকার সি ব্লকেও ভোগান্তিতে আছেন তিতাসের গ্রাহকরা। এ এলাকার গৃহিণীরা জানান, দিনের বেলা প্রয়োজনীয় কাজ সারতে পারছেন না। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে বাসায় এলপিজি সিলিন্ডার নিয়ে এসেছেন। তারা জানান, সকালে গ্যাসের সামান্য চাপ থাকলেও দিন বাড়তেই সেই চাপ একেবারে কমে যায়। সংশ্লিষ্টরা জানান, এখন দৈনিক দেশে গ্যাসের চাহিদা তিন হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত গ্যাস দিয়েই চাহিদার বড় অংশের জোগান মেটানো হচ্ছে। বাকি অংশের চাহিদা মেটানো হয় আমদানিকৃত এলএনজি দিয়ে। গত বছরের শেষদিকে এলএনজির আমদানি কমে যাওয়ায় এই গ্যাস সংকট আরও তীব্র হয়েছে।

সর্বশেষ খবর