বুধবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
এমসি কলেজে গণধর্ষণে অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন

দায়িত্বে অবহেলা হোস্টেল সুপার ও প্রহরীদের, দায় এড়াতে পারেন না অধ্যক্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের ঘটনায় হোস্টেল সুপার ও প্রহরীদের দায়িত্বে অবহেলা ছিল। প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারেন না কলেজের অধ্যক্ষও। আলোচিত এমসি কলেজে তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় হাই কোর্টের নির্দেশে গঠিত অনুসন্ধান কমিটির মতামত অংশে এসব কথা বলা হয়েছে।

গণধর্ষণের ওই ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও দায় অনুসন্ধানে সিলেটের জেলা ও দায়রা জজকে প্রধান করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছিল হাই কোর্ট। বাকি তিন সদস্য হলেন অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মমিনুন নেসা, চিফ মেট্রোপলিটন

ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবুল কাশেম ও সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শারমিন সুলতানা। অনুসন্ধান শেষে সম্প্রতি ওই কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চে বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে বলে জানান সংশ্লিষ্ট আইনজীবী। অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনার সময় কলেজ বন্ধ থাকার পরও বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন ছাত্র হোস্টেলে অবস্থান করেন। একজন সাবেক ছাত্র ৫ নম্বর ব্লকের হোস্টেল সুপারের বাসভবন দখল করে থাকেন। সাবেক ওই ছাত্ররা অবৈধভাবে কলেজ হোস্টেলের সিট দখল এবং সাবেক ছাত্র সাইফুর রহমান কর্তৃক হোস্টেল সুপারের বাসভবন জোর করে দখল করে থাকার কারণেই তারা কলেজের হোস্টেল এলাকায় গণধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ করার সাহস পান। ফলে ঘটনার তারিখে হোস্টেল ক্যাম্পাসে ওই ঘটনার নেপথ্যে মূলত হোস্টেল সুপারদের তদারকির ঘাটতি ও দায়িত্বে অবহেলাই দায়ী। তবে প্রতিষ্ঠানপ্রধান হিসেবে কলেজের অধ্যক্ষের ওপরও এ দায়ভার চলে আসে। এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে সে জন্য ১৫ দফা সুপারিশ করেছে চার সদস্যের ওই কমিটি। যেখানে কলেজের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের চাহিদার ভিত্তিতে হোস্টেলে আসন নিশ্চিত করতে হবে এবং অছাত্র বা সাবেক ছাত্রদের হোস্টেলে বসবাস কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেট মহানগরের টিলাগড় থেকে স্বামীসহ এক তরুণীকে তুলে নিয়ে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের একদল কর্মীর বিরুদ্ধে। ওই তরুণীর স্বামী এ ঘটনায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মোট নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রাবাস দখল করে জঘন্য এ ঘটনায় দেশে ও বিদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।

গণধর্ষণের ওই ঘটনার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দিন। শুনানি নিয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়ার নেতৃত্বাধীন হাই কোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেয়। তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষের অবহেলা নিরূপণে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়ে তা অনুসন্ধান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে হাই কোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। ২০ অক্টোবর ওই কমিটি আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়।

সর্বশেষ খবর