শুক্রবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

জনপ্রিয় হচ্ছে বহুতল কার পার্কিং

জিন্নাতুন নূর

জনপ্রিয় হচ্ছে বহুতল কার পার্কিং

রাজধানী ঢাকায় এবার জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে ডিজিটাল বা মেকানিক্যাল কার পার্কিং। উন্নত বিশ্বে এ ব্যবস্থা গ্রিন পার্কিং নামেও পরিচিত। সংশ্লিষ্টরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, এ পদ্ধতিতে গাড়ির সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। এতে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণও        কম। অল্প জায়গায় একসঙ্গে অনেকগুলো গাড়িও পার্ক করা যায়। বাংলাদেশে এ পদ্ধতির ব্যবহার শুরু হলে যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে। এ ছাড়া এর ব্যবহারে গাড়িচালকের জ্বালানি খরচ ও পার্কিংয়ের সময়ও কম লাগবে। এরই মধ্যে রাজধানীর মৎস্য ভবন, পুলিশ কন্ট্রোল অ্যান্ড কমান্ড সেন্টার, চট্টগ্রামে বিপণিবিতান এলাকায় ডিজিটাল কার পার্কিংয়ের বহুতল ভবন ব্যবহার শুরু হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকায় আরও কয়েকটি ডিজিটাল কার পার্কিং নির্মাণের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। সরেজমিন সম্প্রতি ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের বিপরীতে অবস্থিত পুলিশ রমনা কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, পুলিশ বাহিনীর ব্যবহারের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে ১৬ তলাবিশিষ্ট ডিজিটাল কার পার্কিং। এর নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আশা করা হচ্ছে আগামী মাসের শেষে এটি ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হবে। পুলিশ কমপ্লেক্স এলাকায় প্রায় ২ হাজার স্কয়ার ফিট জায়গায় এখন যে ১৬ তলাবিশিষ্ট পার্কিং ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছে সেখানে একসঙ্গে ৯০টি পুলিশ পিকআপ সাইজের গাড়ি রাখার ব্যবস্থা থাকছে। অথচ সাধারণভাবে ৯০টি গাড়ি রাখতে একটি ফুটবল মাঠের অর্ধেক পরিমাণ জায়গা প্রয়োজন হয়। এ স্থাপনাটি নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান আজিজ অ্যান্ড কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মইনুল হক বলেন, কম্বিং টাওয়ার সিস্টেমে এ বহুতল কার পার্কিংয়ের অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। এ পদ্ধতি দেশে আগে কখনো ব্যবহার করা হয়নি। এ পদ্ধতি ব্যবহার করে সর্বোচ্চ ৩৫ তলা পর্যন্ত নির্মাণ করা সম্ভব। এ পদ্ধতিতে কম জায়গায় একসঙ্গে অনেক গাড়ি রাখা সম্ভব। জানা গেছে, এ ছাড়া ঢাকা বিমানবন্দর এলাকার পাশে পুলিশ বাহিনি আরেকটি ১৬ তলাবিশিষ্ট ডিজিটাল কার পার্কিং স্থাপনা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। রাজারবাগেও আরেকটি ডিজিটাল কার পার্কিংয়ের অবকাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। বেসরকারিভাবে অনেক প্রতিষ্ঠান নতুন এ পদ্ধতি সম্পর্কে ক্রমেই আগ্রহী হয়ে উঠছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশে জমির স্বল্পতা বেশি হওয়ায় শহর এলাকায় বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে কারখানা সব কিছুই এখন ঊর্ধ্বমুখী। স্বল্প স্থানের সর্বোত্তম ব্যবহারই হচ্ছে মেকানিক্যাল কার পার্কিংয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য। এ ব্যবস্থা পুরোপুরিভাবে অটোমেটেড। সাধারণত এ পদ্ধতিতে মানুষের সাহায্য ছাড়াই যে কেউ গাড়ি পার্ক করতে পারবেন। এতে ব্যবহারকারীকে একটি আরএফআইডি (রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেনটিফিকেশন) কার্ড ব্যবহার করতে হবে। কেউ এ স্থাপনায় গাড়ি পার্ক করতে চাইলে কার্ড ভেন্ডিং মেশিনে চাপ দিলে আরএফআইডি কার্ড পাবেন। নির্দিষ্ট কার্ড রিডারে স্পর্র্শ করা মাত্র ব্যবহারকারীর গাড়ি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারিত স্থানে পার্ক হয়ে যাবে এবং পুনরায় গাড়িটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিচে নেমেও আসবে। প্রায় সাত বছর আগে রাজধানীর মৎস্যভবন এলাকায় দেশের প্রথম ডিজিটাল কার পার্কিং অবকাঠামো তৈরি করা হয়। মৎস্য অধিদফতর কর্তৃপক্ষ আজিজ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডকে ডিজিটাল কার পার্কিং তৈরির কাজ দেয়। সে সময় মৎস্য ভবনের গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গার স্বল্পতা থাকায় সংস্থাটি এ পদ্ধতিতে গাড়ি পার্কিংয়ে উৎসাহিত হয়। সেখানে পাঁচতলা ভবনে মোট ২১টি গাড়ি পার্কিং করা যায়। এরপরে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিপণিবিতান এলাকায় আরেকটি মেকানিক্যাল কার পার্কিং ভবন গড়ে তোলা হয়। সেখানে সাধারণ মানুষও গাড়ি রাখার সুবিধা পান। এ স্থাপনায় সাততলায় মোট ২৯টি গাড়ি রাখার ব্যবস্থা আছে।

এরপর ঢাকার রেলওয়ে ভবনের পাশে বাংলাদেশ পুলিশ কন্ট্রোল অ্যান্ড কমান্ড সেন্টারে প্রায় আড়াই বছর আগে আটতলা ভবনে ৩৬টি গাড়ি রাখার সুবিধা নিয়ে আরেকটি ডিজিটাল কার পার্কিং অবকাঠামো তৈরি হয়। ডিজিটাল এ কার পার্কিং নির্মাণে অভিজ্ঞ আজিজ অ্যান্ড কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মইনুল হক বলেন, এ স্থাপনায় দুর্ঘটনা ঝুঁকি এড়াতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রকৌশলীরা আছেন, যারা সর্বক্ষণিক সেবা দিতে প্রস্তুত। এ ছাড়া এর রক্ষণাবেক্ষণসহ পরের ২০ বছর পর্যন্ত এর যাবতীয় যন্ত্রের দেখভালের দায়িত্ব আমাদের। সাধারণত যেসব দেশে স্থানের স্বল্পতা- যেমন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এবং জাপানে ডিজিটাল কার পার্কিং ব্যবস্থা বেশ জনপ্রিয়। এ পদ্ধতিতে যে যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে তা পুরোপুরি চীন থেকে আমদানি করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর