সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

খাদ্যপণ্যের মজুদ বাড়াচ্ছে সরকার

১০ লাখের বেশি প্রবাসী ফিরে আসায় খাদ্যের ওপর চাপও বেড়েছে

মানিক মুনতাসির

খাদ্যপণ্যের মজুদ বাড়াচ্ছে সরকার

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী শুরুর প্রাক্কালে খাদ্য মজুদ বাড়িয়েছিল সরকার, যা ছিল মূলত খাদ্য সংকট এড়ানোর কার্যকর উদ্যোগ। এর ফলে বিশ্বের অনেক দেশে খাদ্যপণ্যের সংকট দেখা দিলেও বাংলাদেশে তেমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। তবে গত এপ্রিল-জুনে দাম কিছুটা বেড়েছিল। বছরের ব্যবধানে করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলেও পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ফলে বিশ্বের সব দেশই তাদের অভ্যন্তরীণ খাদ্য মজুদ পরিস্থিতি বাড়াচ্ছে। খাদ্য মজুদ বাড়াচ্ছে বাংলাদেশও। এর অংশ হিসেবে স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজার থেকেও প্রায় ৭ লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানি করছে সরকার। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী ২০২১-২২ বাজেটেও থাকবে এমন কিছু উদ্যোগ, যার মাধ্যমে কৃষকদের সরাসরি ভর্তুকি দেওয়া হবে। পাশাপাশি ভর্তুকিমূল্যে সার, ডিজেলসহ কৃষি সরঞ্জাম পৌঁছে দেবে সরকার। এদিকে সাম্প্রতিক সময়ের বাজারে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। সামনে যাতে চালের বাজার কেউ অস্থিতিশীল করতে না পারে সেদিকেও তীক্ষè দৃষ্টি রাখছে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো। এদিকে করোনা মহামারীকে কেন্দ্র করে জীবন বাঁচাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১০ লাখের বেশি প্রবাসী দেশে ফিরে এসেছেন। তবে বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার হিসাবে গত দুই বছরে দেশে ফিরে এসেছেন অন্তত ৩০ লাখ প্রবাসী, যারা আর কাজে ফিরে যেতে পারেননি। এর ফলে দেশে খাদ্য চাহিদা বেড়েছে। অথচ উৎপাদন সে হারে বাড়েনি। এতে খাদ্য মজুদ পরিস্থিতির ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া করোনা পরিস্থিতির কারণে নতুন করে ২২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪২ শতাংশ। এসব মানুষের আয় কমে গেছে। এতে তাদের খাদ্যাভ্যাসেও এসেছে পরিবর্তন। খরচ কমাতে মানুষ আগের চেয়ে বেশি পরিমাণে ভাত ও রুটি খাচ্ছে। এতে প্রধান প্রধান খাদ্যপণ্য হিসেবে চাল-গম বা ভাত ও রুটির চাহিদা অনেকখানি বেড়েছে বছরের ব্যবধানে। এর ফলে খাদ্য মজুদ কমে আসছে।

সূত্র জানায়, ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত খাদ্যশস্যের সরকারি মোট মজুদ ছিল ৭ লাখ ৮ হাজার টন। এর মধ্যে চাল ৫ লাখ ৪৮ হাজার টন এবং গম ১ লাখ ৫৬ হাজার টন। অথচ ছয় মাস আগেও খাদ্যপণ্য মজুদ ছিল ১০ লাখ টনের বেশি। এদিকে আশঙ্কা করা হচ্ছে, করোনা-পরবর্তী বিশ্বজুড়ে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৪০ থেকে ৬০ কোটি বাড়তে পারে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ১৬ কোটি ৫০ লাখ জনসংখ্যার ৩ কোটি ৩০ লাখ দরিদ্র। এর মধ্যে আবার ১ কোটি ৭০ লাখ অতিদরিদ্র। তবে বেসকারি গবেষণা সংস্থাগুলোর মতে, দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৪ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। জাতিসংঘ আশঙ্কা করছে, করোনার পরবর্তী দিনগুলোতে বিশ্বমন্দার ভয়াল থাবার পাশাপাশি হানা দিতে পারে দুর্ভিক্ষ। ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য দূর করার লক্ষ্য পূরণ করতে বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। এই যখন সার্বিক প্রেক্ষাপট তখন কৃষি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে কৃষিপ্রধান দেশ বাংলাদেশকে। এসডিজির ১৭টি অভীষ্টের মধ্যে ১০টি অভীষ্টই কোনো না কোনোভাবে কৃষির সঙ্গে জড়িত। ফলে সামনের দিনগুলোতে খাদ্য সংকট হতে পারে এমন আশঙ্কাকে আমলে নিয়েই মজুদ ও উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

সূত্র জানায়, দেশে প্রতিবছর চালের চাহিদা প্রায় সাড়ে তিন কোটি টন। সেখানে সরকার বছরে কম-বেশি মাত্র ১০-১২ লাখ টন চাল অভ্যন্তরীণভাবে সংগ্রহ করে, যাকে মোট উৎপাদনের তুলনায় যৎসামান্যই বলা যায়। এর পরও সরকারিভাবে ধান-চাল মজুদের গুরুত্ব রয়েছে। বিশেষ করে কৃষকের উৎপাদিত শস্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ, খাদ্যশস্যের বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখা, নিরাপত্তা মজুদ গড়ে তোলা, ত্রাণ বিতরণ, স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে খোলাবাজারে বিক্রি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিসহ নানা চ্যানেলে চাল সরবরাহের কারণে সরকারিভাবে সন্তোষজনক খাদ্যশস্য মজুদ রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ কারণে সরকার প্রতিবছরই নিরাপদ খাদ্য মজুদ গড়ে তুলতে বোরো ও আমন মৌসুমেই কম-বেশি চাল-গম অভ্যন্তরীণভাবে সংগ্রহ করে। আর সরকারের গুদামে নিরাপদ খাদ্য মজুদ না থাকলে বাজার স্থিতিশীল রাখাও কঠিন হয়ে পড়ে। কোনো কারণে চালের দাম বাড়লে সরকার যদি বাজার নিয়ন্ত্রণে খোলাবাজারে চাল বিক্রি, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় চাল বিতরণ না করে, তাহলে চাল-আটার মূল্য নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন হয়ে পড়ে।

এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘দেশে খাদ্যের উৎপাদন ও ভোগের তথ্যে ঘাটতি থাকতে পারে। নয় তো বাজারে এভাবে যখন-তখন ধান-চালের দাম বাড়ত না। আবার খাদ্যের চাহিদাও বেড়েছে। ফলে আমরা চেষ্টা করছি একটা সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান পেতে, যার মাধ্যমে নির্ণয় করা যাবে খাদ্যের চাহিদা ও মজুদ আর উৎপাদনের প্রকৃত পরিসংখ্যান।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর