৩৬ বছর পর হাসিনা খাতুন (৪৬) ফিরে পেয়েছেন তার স্বজনদের। ১০ বছর বয়সে হারিয়ে যান তিনি। ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে স্বজনদের কাছে ফেরা হলো তার। শনিবার তিনি বড়াইগ্রাম পৌরসভার রয়না গ্রামে তার বাবা মৃত মখলেছুর রহমানের বাড়িতে ফিরে এলে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তাকে এক নজর দেখতে ভিড় জমান অনেকে।
স্বজনরা জানান, সহজ-সরল হাসিনার স্মৃতিশক্তি দুর্বল ছিল। কোনো কিছু ঠিকঠাক মনে রাখতে পারতেন না। প্রায় ৩৬ বছর আগে এক দিন হাসিনা কাউকে কিছু না বলে তার প্রতিবেশী এক নানীর সঙ্গে বনপাড়া বাজারে যান। এরপর তার খোঁজ মেলেনি। হাসিনা খাতুন জানান, তিনি বনপাড়া থেকে বাড়ি ফিরতে একাই বাসে উঠেন। ভুল বাসে ওঠায় চলে যান ঈশ্বরদী। পরে যান ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনে। ফিরবেন কীভাবে বুঝতে না পেরে বসে বসে কাঁদছিলেন। এ সময় আলমগীর হোসেন নামে রেলওয়ের একজন টিটি তাকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান। কিছুদিন চেষ্টা করে পরিচয় জানতে না পেরে হাসিনার আশ্রয় মেলে আলমগীরের দুলাভাই কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার কলাবাড়িয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেনের বাড়িতে। তারাই লালন-পালন করে গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে দেন। দীর্ঘ ১২ বছরেও কোনো সন্তান না হওয়ায় ভেঙে যায় সংসার। পুনরায় বিয়ে হয় কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ভাদালিয়া গ্রামের বাসিন্দা কুষ্টিয়া চিনিকলের পাওয়ার টারবাইন অপারেটর আবদুস সাত্তারের সঙ্গে। হাসিনার সঙ্গে আসা সোহেল রানা জানান, হাসিনার বর্তমান স্বামী সম্পর্কে তার দুলাভাই। বিয়ের পর তিনি প্রায়ই বাবা-মাকে দেখতে চাইতেন। ঠিকানা বলতে পারতেন না। তবে বাড়ি লক্ষ্মীকোল। বাবার নাম মখলেছ। বাড়ির পাশে বড়াল নদী- শুধু এতটুকুই বলতে পারতেন। গত তিন বছরে এটুকু তথ্যের ভিত্তিতেই সোহেল রানা ও তার দুলাভাই হাসিনার স্বজনদের খুঁজে পেতে নাটোরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছেন। কিন্তু খোঁজ পাননি। অবশেষে গত ১৫ দিন আগে তারা বড়াইগ্রাম পৌরসভার লক্ষ্মীকোলের পাশে রয়না গ্রামে এসে খুঁজে পান তাদের ঠিকানা। এরপর শনিবার তারা হাসিনাকে নিয়ে আসেন স্বজনদের কাছে। কিন্তু ইতিমধ্যেই হাসিনার বাবা মখলেছুর রহমান ও সৎমা দুজনেই মারা গেছেন। রয়েছে শুধু তার ছোট দুই বোন আর বাড়িসংলগ্ন মামি ও মামাতো ভাইবোনেরা। শনিবার শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িতে ফিরে এলে কান্নায় ভেঙে পড়েন হাসিনা ও তার স্বজনরা। বাবা-মা বেঁচে না থাকলেও তাদের স্মৃতি আর বেঁচে থাকা স্বজনদের বুকে জড়িয়ে দীর্ঘ তিন যুগ পর নতুন করে বাঁচার অবলম্বন পেলেন হাসিনা খাতুন। হাসিনার মামাতো ভাই আমজাদ হোসেন বলেন, অবশেষে তাকে পেয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। হাসিনা খাতুন বলেন, সব সময়েই বাবা-মাসহ স্বজনদের দেখতে ইচ্ছা করত। নীরবে কেঁদেছি। স্বামীর চেষ্টায় অন্তত তাদের মুখ দেখতে পেরেছি। এতেই আমার কলিজা ঠান্ডা হয়েছে। এখন এটুকু ভেবে শান্তি পাচ্ছি যে, পৃথিবীতে আমারও আপন বলে কেউ আছে।