রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

ঐতিহাসিক চেহেলগাজী মাজার

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

ঐতিহাসিক চেহেলগাজী মাজার

পৌরাণিক কাহিনির জেলা দিনাজপুরে সাড়ে ছয় শ বছর আগের ঐতিহাসিক চেহেলগাজী মাজার। আবার কেউ বলেন চল্লিশ গাজীর মাজার। আজও পর্যটকসহ বিভিন্ন মানুষের দোয়া-মানত এর জন্য আকর্ষণীয় এই মাজার। বিভিন্ন ধর্মীয় দিবসে এখানে ভক্তদের ভিড় লক্ষণীয়। চেহেল ফারসি শব্দ, অর্থ চল্লিশ। চেহেলগাজী মাজার নিয়ে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ মনে করেন ৪০ গজ লম্বা পীরের মাজার তাই চেহেলগাজী। তাদের মতে কথাটি হবে চেহেলগাজী। দিনাজপুর জেলার সদরের চেহেলগাজী গ্রামে এবং শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার উত্তরে মহাসড়কের পশ্চিম পার্শ্বে চেহেলগাজী মসজিদ ও মাজারের অবস্থান। চেহেলগাজী মাজার নিয়ে রয়েছে নানান কথা। স্থানীয় জনশ্রুতি রয়েছে, ৪০ জন গাজীকে (ধর্মযোদ্ধা) একত্রে এখানে সমাহিত করা হয়। এ জন্য এ স্থানের নাম হয়েছে চেহেল (চল্লিশ) গাজী। গোপাল নামক এক স্থানীয় হিন্দু রাজার বিরুদ্ধে উক্ত গাজীরা যুদ্ধ করে শহীদ হন। মনে করা হয় সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ এর কামরুপ অধিকারের সময় (১৩৫৮) এ যুদ্ধ হয়। এরকম কান্তনগরে (গড় মল্লিকপুর) এবং খানসামায় আরও দুটি যুদ্ধ সংঘটিত হয় ও নিহত সৈনিকদের যৌথভাবে সমাহিত করা হয় এখানে।

এর প্রায় ১০০ বছর পরে ১৪৬০ সালে এ মাজারটি মেরামত হরা হয়। মাজারের ওপর কোনো ছাদ বা আচ্ছাদন ছিল না। ১৯৬৮ সালে এ মাজারের ওপরে ছাউনি নির্মাণ করা হয়। এর চারপাশে দেওয়াল তৈরি করে মাজারটিকে মূল্যবান রেশমি কাপড়ে আবৃত করা হয় এবং নির্মিত হয় তোরণ। মাজার ঘরটির আয়তন ২৫.১৫ মি.। ছাদের নিচে কবরকে ঘিরে আরেকটি রেলিং সংযুক্ত করা হয়। মাজার সংলগ্ন পূর্বদিকে একটি, দক্ষিণ দিকে তিনটি বাঁধানো প্রাচীন কবর রয়েছে। এর দক্ষিণ পশ্চিম কোনে চেহেলগাজী মসজিদ। মসজিদের দক্ষিণে আরও একটি নতুন মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। উত্তর পশ্চিম কোনে একটি প্রাচীন পুকুরও রয়েছে। পূর্বদিকে এর চেয়ে ছোট আরও একটি প্রাচীন পুকুর রয়েছে। আর মাজারের পশ্চিম দিকে রয়েছে শালবন। মসজিদের সময়কাল নির্দেশক তিনটি শিলালিপির একটি দিনাজপুর জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এ শিলালিপি থেকে জানা যায়, ৮৬৫ হিজরির ১৬ সফর (১৪৬০ইং সালের ১ ডিসেম্বর) মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। সুলতান রুকনুদ্দিন বারবক শাহ এর রাজত্বকালে (১৪৫৯-১৪৭৪ ইং সাল) তার উজির ইকরাব খানের নির্দেশে পূর্ণিয়া জেলার অন্তর্গত জোর ও বারুক (দিনাজপুর) পরগনার শাসনকর্তা উলুঘ নুসরত খান এ মসজিদটি নির্মাণ করেছেন। বর্তমানে মসজিদটির দেওয়াল ছাড়া আর কোনো অবশিষ্ট নেই। তবে মিহরাবের কাছে কিছু পোড়ামাটির ফলক রয়েছে। পোড়ামাটির ফলকগুলোতে ফুল, লতাপাতা এবং ঝুলন্ত মোটিফ লক্ষণীয়। এগুলোও খসে পড়েছে। বর্গাকার মসজিদটির মূল স্তম্ভের ওপর একটি এবং পূর্বদিকের বারান্দার ওপর সম্ভবত তিনটি গম্বুজ ছিল।

চেহেলগাজী মাজারের সময়কাল নির্দেশক কোনো শিলালিপি পাওয়া যায়নি। তৎকালীন দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মি. ওয়েস্টমেকট ১৮৪৭ সালে চেহেলগাজী মসজিদ থেকে তিনটি শিলালিপি উদ্ধার করেন। ওই শিলালিপি থেকে জানা যায়, ১৪৬০ খ্রিস্টাব্দে চেহেলগাজী মসজিদটি নির্মাণ করার সময় মাজারটি (রওজা) সংস্কার করা হয়। এদিকে চেহেলগাজী মাজারের প্রবেশ পথের বামদিকে রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধে ১৩৫ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর। এ কারণে চেহেলগাজী মাজার এলাকা আরও গুরুত্ব পায়।

সর্বশেষ খবর