মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
ইউল্যাব ছাত্রীর মৃত্যু

রহস্যজট খোলেনি ১১ দিনেও

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাব ছাত্রীর মৃত্যুর জট এখনো খোলেনি। ১১ দিন ধরে বিষয়টি নিয়ে কাজ করলেও কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেননি তদন্তসংশ্লিষ্টরা। খুন নাকি বিষক্রিয়ায় মৃত্যু। যদিও নেহার পরিবারের অভিযোগ, ওই ছাত্রী মৃত্যুর আগে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তবে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে প্রয়োজনে কবর থেকে লাশ তোলা হতে পারে বলে জানিয়েছেন তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশীদ। অন্যদিকে এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেফতার এবং পাঁচ দিনের পুলিশি রিমান্ডে থাকা ফারজানা জামান ওরফে ডিজে নেহারের অন্ধকার জীবনের কাহিনি বেরিয়ে আসায় রীতিমতো অস্বস্তিতে ভুগছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, নেহা তার অনেক বন্ধুর দুর্বলতা পুঁজি করে তাদের অন্ধকার জগতে পাঠিয়েছেন। তাদের ব্যবহার করে অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তির থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন আর্থিকসহ নানা সুবিধা।

বৃহস্পতিবার গ্রেফতারের পর শুক্রবার পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে নেহাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। রবিবার রিমান্ডের তৃতীয় দিনে নেহার ফোনবুক থেকে পুলিশ ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ডজনখানেক শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীর ফোন নম্বর পেয়েছে। যেগুলো সাংকেতিকভাবে সংরক্ষণ করা। এসব ধনাঢ্যের অনেকের কাছে মদ, তরুণী সরবরাহ করতেন তিনি। কখনো কখনো নেহা নিজেই তাদের সঙ্গ দিয়েছেন। বিনিময়ে হাতিয়েছেন মোটা অঙ্কের অর্থ।

তদন্তসংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছেন, ডিজে নেহার পছন্দের মোবাইল ফোনে (আইফোন) টার্গেট ব্যবসায়ী ও ধনী যুবকদের নম্বর ‘ক্লায়েন্ট-১’, ‘ক্লায়েন্ট-২’, ‘ক্লায়েন্ট-৩’ এমন ধারাবাহিকভাবেই সংরক্ষণ করা আছে। জিজ্ঞাসাবাদে নেহা জানিয়েছেন, গত বছরের মার্চে চট্টগ্রামের এক গাড়ি ব্যবসায়ীর সঙ্গে একটি পার্টিতে তার পরিচয়। এরপর ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে কৌশলে ছয় মাসে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়েছেন। নেহার এসব কাজে সহযোগিতা করতেন তারই চাচাতো ভাই শাফায়াত জামিল বিশাল। বিশাল সর্বক্ষণ নেহার সঙ্গেই থাকতেন।

২৮ জানুয়ারি উত্তরার ব্যাম্বু স্যুট রেস্টুরেন্টে ইউল্যাব শিক্ষার্থীদের মদপান করাতে নেহা ও তার খুব কাছের বন্ধু আরাফাত পার্টির আয়োজন করেন। মদপানের পর অসুস্থ হয়ে আরাফাতও মারা গেছেন। সেদিন নেহার ফোনেই শাফায়াত জামিল ওরফে বিশাল এয়ারপোর্ট এলাকা থেকে মদ কিনে নিয়ে যান ওই রেস্টুরেন্টে।

নেহা পুলিশকে জানিয়েছেন, খদ্দেরদের তালিকা সংরক্ষণ করতেন বিশাল। এ ছাড়া দরদামে তিনি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মাধুরীর মৃত্যুর পর তার বাবার মামলায় অজ্ঞাত আসামি হিসেবে নিজেই আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন বিশাল। আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। এ ছাড়া ওই ছাত্রীর ছেলেবন্ধু আরিফ ও তাদের বাসায় আশ্রয়দাতা তাফসিরও এখন কারাগারে।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন অর রশিদ বলেছেন, নেহাকে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা অনেক তথ্য পেয়েছি। এসব যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে। তদন্তের স্বার্থে লাশ তোলার প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করে তোলা হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর