বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

বিশেষ বক্তা উপদেষ্টাসহ বিতর্কিত পোস্ট

নির্বাচন প্রশিক্ষণ নিয়ে ইসির খসড়া নীতিমালা

গোলাম রাব্বানী

নির্বাচনী প্রশিক্ষণের ব্যয় নিয়ে অডিট আপত্তির মুখে পড়ায় নীতিমালা তৈরি করছে নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। খসড়ায় ‘বিশেষ বক্তা’ ও ‘কোর্স উপদেষ্টা’, কোর্স পরিচালকসহ বিভিন্ন পদ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বাড়ানো হচ্ছে এসব পদের সম্মানী। যদিও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রশিক্ষণে ‘বিশেষ বক্তা’ ও ‘কোর্স উপদেষ্টা’ হিসেবে বক্তৃতা দিয়ে টাকা নেওয়ায় সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা অডিট আপত্তির মুখে পড়েছেন। ওই দুই নির্বাচনে এসব পদ তৈরি করে সারা দেশে প্রায় ৩ কোটি টাকার বেশি সম্মানীভাতা দিয়েছিল ইসি। এই ব্যয়ের পর্যালোচনায় স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট অধিদফতর বলেছে, নির্বাচনী প্রশিক্ষণের জন্য কোর্স উপদেষ্টা, বিশেষ বক্তাসহ ইসির তৈরি করা কয়েকটি পদ অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদিত নয়। ওই ভাতা দেওয়ায় রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ওই সময় বিশেষ বক্তার তালিকায় ছিলেন সিইসি এবং চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির তৎকালীন সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিবরা। আর কোর্স উপদেষ্টা ছিলেন তৎকালীন ইসি সচিব। খসড়া নীতিমালা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (ইটিআই) ব্যবস্থাপনায় পঞ্জিকাভুক্ত ও পঞ্জিকাবহির্ভূত প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষকের জন্য চারটি পদ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রশিক্ষক, সম্প্রসারণ বক্তা, বিশেষ বক্তা ও অতিথি বক্তা। অন্যদিকে প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনার জন্য রাখা হয়েছে আটটি পদ। তা হলো- কোর্স উপদেষ্টা, কোর্স পরিচালক, সুপারভাইজিং প্রশিক্ষক, কোর্স সমন্বয়ক, সহকারী কোর্স সমন্বয়ক, মনিটরিং কর্মকর্তা, মূল্যায়ন কর্মকর্তা ও সাপোর্ট স্টাফ।   

নীতিমালা অনুযায়ী সব নির্বাচনী প্রশিক্ষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনাররা ‘সম্প্রসারণ বক্তা’ হিসেবে থাকবেন। এ ছাড়া সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা মাঠ পর্যায়ের সব নির্বাচনী প্রশিক্ষণে ‘বিশেষ বক্তা’ হিসেবে থাকবেন। আর মাঠ পর্যায়ের সব নির্বাচনী প্রশিক্ষণে ‘অতিথি বক্তা’ হিসেবে থাকবেন সিনিয়র সচিব/সচিব/ভারপ্রাপ্ত সচিব, অতিরিক্ত সচিব এবং জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের মহাপরিচালক। নীতিমালায় বলা হয়েছে- সিনিয়র সচিব/সচিব/ভারপ্রাপ্ত সচিব অথবা অতিরিক্ত সচিব কোর্স উপদেষ্টা হিসেবে থাকবেন। তবে কম গুরুত্বপুর্ণ প্রশিক্ষণে ইটিআই মহাপরিচালক কোর্স উপদেষ্টা থাকবেন। এ ছাড়া ইটিআই বা নির্বাচন ভবনে অথবা ঢাকার কোনো ভেন্যুতে প্রশিক্ষণ হলে ইটিআই মহাপরিচালক অথবা কোনো পরিচালক কোর্স পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। বাড়ছে সম্মানী : নীতিমালার খসড়ায় দেখা গেছে, একটি প্রশিক্ষণ কোর্সে বক্তব্যের জন্য বিশেষ বক্তা/ সম্প্রসারিত বক্তার সম্মানী ধরা হয়েছে (দেড় ঘণ্টা) ৭ হাজার ৫০০ টাকা, তবে আগে এই পদের সম্মানী ছিল ৫ হাজার টাকা। অতিথি বক্তার জন্য সম্মানী রাখা হয়েছে ৭ হাজার টাকা (একটি কোর্সে সর্বোচ্চ একজন)। সুপারভাইজিং প্রশিক্ষকের সম্মানী রাখা হয়েছে প্রত্যেকের জন্য ৬ হাজার টাকা (একটি কোর্সে সর্বোচ্চ চারজন)। এ ছাড়া যুগ্ম-সচিব/সমপর্যায় ও তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের প্রতি ঘণ্টায় সম্মানী নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৫০০ টাকা, উপসচিব/সমপর্যায় ও তদনিম্ন কর্মকর্তারা ঘণ্টায় পাবেন ২ হাজার টাকা। অন্যদিকে প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিতদের সম্মানী হবে- কোর্স উপদেষ্টার জন্য ৮ হাজার টাকা (প্রতি কোর্সে), আগে এই পদের সম্মানী ছিল ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা। কোর্স পরিচালক ৬ হাজার টাকা (প্রতি কোর্সে), মনিটরিং কর্মকর্তা ৫ হাজার টাকা (প্রতি কোর্সে), মূল্যায়ন কর্মকর্তা ৪ হাজার টাকা (প্রতি কোর্সে), কোর্স সমন্বয়ক ৫ হাজার টাকা (প্রতি কোর্সে), সহকারী কোর্স সমন্বয়ক ৪ হাজার টাকা (প্রতি কোর্সে) ও কোর্স স্টাফ পাবেন সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা (তিনজন)। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের আলোকে ইসি সচিবালয়ের একটি কমিটি ‘নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের পরিচালনায় প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা ও বাজেট প্রমিতকরণ নীতিমালা-২০২০’ নামে এই নীতিমালা তৈরি করে। এই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন ইসির যুগ্ম-সচিব আবুল কাসেম, সদস্য ছিলেন যুগ্ম-সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান, আবদুল বাতেন ও ইটিআইয়ের তৎকালীন মহাপরিচালক নুরুজ্জামান তালুকদার। গত ৩ জানুয়ারি ইসির ৭৪তম সভায় এই নীতিমালার খসড়া উপস্থাপন করা হয়। আগামী কমিশন বৈঠকে এই নীতিমালা অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে। নতুন নীতিমালার বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক আবুল কাসেম কথা বলতে রাজি হননি।

এর আগে নীতিমালার বিষয়ে ইসির সদ্য বিদায়ী সিনিয়র সচিব  মো. আলমগীর বলেন, একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। তা কমিশনে উপস্থাপন করা হয়েছিল। আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এটি উপস্থাপন করতে বলেছেন। তবে বিশেষ বক্তা, কোর্স উপদেষ্টা পদ নিয়ে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি। নীতিমালা চূড়ান্ত হলে এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

সর্বশেষ খবর