শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

টিকা নিতে বাড়ছে ভিড়

কেন্দ্রে নিবন্ধন বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

টিকা নিতে বাড়ছে ভিড়

টিকা নিতে আগ্রহী হচ্ছে মানুষ। কেন্দ্রগুলোতে বাড়ছে ভিড়। চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্বেচ্ছাসেবকরা। এ পরিস্থিতি বিবেচনায় কেন্দ্রে গিয়ে নিবন্ধন করে টিকা নেওয়ার সুবিধা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, নিবন্ধন না করেও অনেকে টিকা নিতে আসায় বিভিন্ন কেন্দ্রে অতিরিক্ত ভিড় তৈরি হচ্ছে। প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ, বিশেষ করে যাদের স্মার্টফোন নেই, তাদের জন্য টিকাদান কেন্দ্রে এসে নিবন্ধনের সুযোগ রেখেছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, এ পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি মানুষ টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন। ৩ লাখের বেশি মানুষ ইতিমধ্যে টিকা নিয়েছেন। কিন্তু টিকাদান কার্যক্রম ঠিকভাবে চালাতেই আপাতত ওই সুবিধা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। তিনি বলেন, আমরা চাই সুষ্ঠুভাবে টিকা নেওয়া হোক। আমরা বিভিন্ন রকমের জায়গা তৈরি করে দিয়েছি। এই সুন্দর পরিবেশ আমরা তৈরি করেছি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, যারা অনস্পট রেজিস্ট্রেশন করছেন- তাদের সংখ্যাই বেশি। আর যারা রেজিস্ট্রেশন করছেন, তারাই ঢুকতে পারছেন না। বয়স্ক লোকেরা যাচ্ছে, তাদের কষ্ট হচ্ছে। যারা টিকা দিচ্ছে- ডাক্তার, নার্স তাদের কষ্ট হচ্ছে। আমরা এই পরিস্থিতি চলতে দিতে চাই না।’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রেজিস্ট্রেশন যেহেতু সফলভাবে হচ্ছে, ১০ লাখের বেশি হয়ে গেছে, এ কারণে আমরা এখন অনস্পট রেজিস্ট্রেশন আর করব না।’ এখন থেকে যারা নিবন্ধন করে কেন্দ্রে যাবেন, শুধু তাদেরই টিকা দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে যদি টিকাদান কেন্দ্রে নিবন্ধনের প্রয়োজন পড়ে, তখন আবার জানানো হবে।’ টিকা নিয়ে অনেক ধরনের সমালোচনা হলেও মানুষের দ্বিধা কেটে গেছে এবং টিকা নেওয়ার আগ্রহ বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন জাহিদ মালেক। ‘আমি এখন দেখছি যে সমস্ত জায়গায় আগে ভিড় কম ছিল, এখন অনেক ভিড়। অনেক লোক যাচ্ছে, মানুষের আত্মবিশ্বাস বাড়ছে। টিকা নিয়েও নানা কথাবার্তা ছিল। মানুষের সমস্ত কথাবার্তা ভুল প্রমাণিত করে, তোয়াক্কা না করে এখন সবাই আস্থা নিয়ে টিকা নিতে যাচ্ছে।’ পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মাঠ কার্যক্রম ‘পেপারলেস’ করার ঘোষণা দিতে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানুও উপস্থিত ছিলেন। গতকাল সারা দেশে টিকা নিয়েছেন ২ লাখ ৪ হাজার ৫৪০ জন।

এর মধ্যে ঢাকা মহানগরে টিকা নিয়েছেন ২৪ হাজার ৪৫৩ জন। ঢাকা বিভাগে ৫১ হাজার ১৫৯ জন, ময়মনসিংহে ৯ হাজার ৩৩৭ জন, চট্টগ্রামে ৫২ হাজার ৮৬৯ জন, রাজশাহীতে ২৩ হাজার ১৮০ জন, রংপুরে ১৯ হাজার ৩৮০ জন, খুলনায় ২৩ হাজার ৪৭৯ জন, বরিশালে ৯ হাজার ৩৯৭ জন, সিলেটে ১৫ হাজার ৭৩৯ জন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকা নিয়েছেন ১ হাজার ৪৫৭ জন, সচিবালয় ক্লিনিকে ৩৬০ জন, সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে ৭৯১ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৯০০ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ হাজার ১৩৮ জন। ঢাকার মোট ৪৬টি কেন্দ্রে টিকা সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত টিকা কার্যক্রম চলেছে। শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে টিকা নিয়েছেন প্রশান্ত সাহা ও শিখা সাহা। প্রশান্ত সাহা বলেন, ‘আমার বয়স ৭১ চলছে আর আমার স্ত্রীর বয়স ৫৮। করোনা থেকে নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে আমরা টিকা নিয়েছি। আগে থেকেই নিবন্ধন করে আসায় অল্প সময়েই টিকা নিতে পেরেছি। টিকা দেওয়ার পরে কোনো ব্যথা বা কষ্ট কিছুই পাইনি। কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। আমরা ভালো আছি।’ গতকাল সকাল ১০টায় তেজগাঁওয়ে জাতীয় নাক, কান, গলা ইনস্টিটিউটে গিয়ে দেখা যায়, টিকা কেন্দ্রের নিচে নিবন্ধন ডেস্কে মানুষের জটলা। জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে অনেকেই এসেছেন কেন্দ্রে নিবন্ধন করে টিকা নিতে। তাদের নিবন্ধন করতে বেশ কিছুটা সময় লাগছে। আর এর মধ্যেই বাড়তে থাকে ভিড়। কেন্দ্রে এসে নিবন্ধনকারীদের ভিড়ে অপেক্ষা করতে হয় আগে থেকে নিবন্ধন করে আসা টিকাগ্রহীতাদেরও। তবে কেন্দ্রে সুশৃঙ্খলভাবে চলেছে টিকাদান। মহাখালীর বাসিন্দা নাসিমা আক্তার টিকা নিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, টিকা নিয়ে অনেক কথা শুনেছিলাম কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শে টিকা নিয়েছি। বুঝতেই পারিনি কখন টিকা দিয়েছি। আগে দুশ্চিন্তা হলেও এখন আর কিছুই মনে হচ্ছে না। ভয় না পেয়ে করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে সবার টিকা নেওয়া উচিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর