শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

নিখোঁজ নারীকে খুঁজতে গিয়ে মিলল যুবকের পাঁচ টুকরা লাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

তিন দিন ধরে নিখোঁজ এক নারীর সন্ধান করতে গিয়ে পুলিশ পেয়েছে এক যুবকের পাঁচ টুকরা লাশ। গতকাল বিকালে পুরান ঢাকার ওয়ারীর স্বামীবাগ লেনের ১৭/১ নম্বর বাসার চতুর্থ তলায় মিলেছে সজীব হাসান (৩৪) নামের এই যুবকের লাশ। জানা গেছে, নিখোঁজ নারীর নাম শাহনাজ পারভীন (৪৭)। পুলিশ সজীবকে খুনের অভিযোগে এই নারীকে সেখান থেকেই গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটি রোমহর্ষক। স্বামী বয়স্ক, তাই ওই নারী জুটিয়ে নেন যুবক প্রেমিককে। দীর্ঘদিন ওই প্রেমিকের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক চালিয়ে আসছিলেন। হঠাৎ টাকা-পয়সা আর স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে তাদের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে প্রেমিকের বুকে ছুরি চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। এরপর প্রেমিকের হাত-পা কেটে লাশটি পাঁচ টুকরা করে বাসায় ফেলে রাখা হয়। দেহ রাখা হয় বিছানার পাশে মেঝেতে, আর দুই হাত এবং দুই পা রাখা হয় বাথরুমের ভিতরে। মূলত শাহনাজ পারভীন লাশ গুমের চেষ্টা করছিলেন।  প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে শাহনাজ পারভীন জানিয়েছেন, সুযোগ পেলেই তারা বিভিন্ন স্থানে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তেন। সজীব শ্যামলী পরিবহনে সুপারভাইজারি করতেন। তিনি পরিবার থেকে অনেক আগেই বিচ্ছিন্ন। আর ওই নারীর এক মেয়ে ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থী। পাঁচ বছর আগে কলেজে যাওয়া আসার পথে তার মেয়েকে প্রেম প্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করতেন সজীব। সজীবের এমন আচরণ বন্ধ করতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন ওই নারী। মোবাইলে এক কথা দুই কথার মধ্যে সজীবের সঙ্গে সুসম্পর্ক হয়ে যায়। উভয়েই পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এই সম্পর্কের সুযোগে সজীব ওই নারীর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিতে থাকেন। ওয়ারীতে ওই নারীর দুটি ফ্ল্যাট এবং একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে।

তার বুটিক হাউসে যাওয়ার কথা বলে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সজীবের এক রুমের বাসায় গিয়ে থাকতেন শাহনাজ। সম্প্রতি তার মেয়েকে আবারও উত্ত্যক্ত করা শুরু করেন সজীব। এটা বন্ধ করতে শাহনাজের কাছ থেকে টাকা-পয়সা এবং স্বর্ণালঙ্কার দাবি করেন সজীব। কথা অনুযায়ী এসব দিয়েও দেন এই নারী। এ অবস্থায় শাহনাজ তার পরিবারের মধ্যেই বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। স্বামী-মেয়ের সঙ্গে ঝগড়া হলে তিনি গত ৯ ফেব্রুয়ারি বাসা থেকে বেরিয়ে সজীবের বাসায় গিয়ে ওঠেন। ওই দিনই স্বামী জসিম উদ্দিন ওয়ারী থানায় নিখোঁজ হওয়ার কথা উল্লেখ করে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর জিডির সূত্র ধরে প্রযুক্তির সহায়তায় তদন্ত করতে গিয়ে সজীবের বাসায় লাশের সামনে ওই নারীকে খুঁজে পায় পুলিশ। নিহত সজীবের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে। তিনি বিবাহিত ছিলেন। তার স্ত্রী থাকতেন গ্রামের বাড়িতে। আর গ্রেফতার শাহনাজের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে। তিনি বুটিক হাউসে কাজ করতেন। বাড়ির মালিক আবুল হোসেন শেখ জানান, পাঁচ বছর আগে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে সজীব ও শাহনাজ তার বাসা ভাড়া নেন। সজীব সবসময় বাসায় থাকতেন। আর শাহনাজ মাঝে-মধ্যে আসতেন, কখনো সকালে, কখনো বিকালে।

সর্বশেষ খবর