শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ইয়াবা পাচারের নতুন জোন আনোয়ারা

সমুদ্রপথে চালান এনে পাচার হয় সারা দেশে

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

ইয়াবা পাচারের নতুন জোন আনোয়ারা

ইয়াবা পাচারের নতুন জোনে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা। মিয়ানমার থেকে সমুদ্রপথে আসা ইয়াবার চালানগুলো আনোয়ারার ট্রানজিট পয়েন্ট হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ইয়াবার নতুন রুটের সন্ধান পাওয়ার পর আনোয়ারার উপকূলে বাড়ানো হয়েছে তৎপরতা। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মুজিবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘আনোয়ারার উপকূলে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তৎপরতা আমরা অবগত। তাই ওই এলাকায় আমাদের তৎপরতাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু চালান আটকও করা হয়েছে।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে আনোয়ারা উপজেলার একাধিক রাজনৈতিক নেতা বলেন, ‘ইয়াবা ব্যবসার কথা চিন্তা করলে আনোয়ারার কাছে এখন টেকনাফও হার মানবে। আনোয়ারা হয়েই এখন ইয়াবা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। ইয়াবা ব্যবসার বদৌলতে অনেকে কোটি টাকার মালিক। যে দিনমজুর একসময় কোনোভাবে সংসার চালাত সে এখন বাস করছে আলিশান বাড়িতে। চড়ে দামি গাড়িতে।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, কক্সবাজারের সীমান্ত এলাকা টেকনাফে প্রশাসন মাদকবিরোধী তৎপরতা বৃদ্ধি করার পর নতুন ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার উপকূল ব্যবহার করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান সমুদ্রপথে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ কিংবা পাশের সমুদ্র এলাকায় পৌঁছে দেয় মিয়ানমারভিত্তিক ইয়াবা সিন্ডিকেটগুলো। এরপর এর চালান ফিশিং ট্রলারে নিয়ে আসা হয় আনোয়ারার উপকূলে। চালানগুলো উপকূলের পারকি সিইউএফএল থেকে শুরু করে বরুমচড়া পর্যন্ত কমপক্ষে ১০টি পয়েন্টে খালাস হয়। এসব পয়েন্টের মধ্যে পারকি সমুদ্রসৈকত, গহিরা, দক্ষিণ গহিরা, গহিরা ঘাটকুল, বরুমচড়ার ভরাচর, উত্তর জুঁইদন্ডী অন্যতম। ইয়াবার ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে পরিচিতি পাওয়া আনোয়ারায় ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ইয়াবার বদৌলতে আগে যাদের ‘নুন আনতে পানতা ফুরাত’ সেই রিকশাচালক, ভ্যানচালক, সিএনজিচালক, জেলে, দিনমজুররা পরিণত হয়েছে কোটি টাকার মালিকে। তারা দু-এক বছরের ব্যবধানে তৈরি করেছে আলিশান বাড়ি, ব্যবহার করছে দামি গাড়ি। বাদ যাননি স্থানীয় রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধিরাও। এ কাজে আছেন বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত গণমান্য ব্যক্তিরাও। এরই মধ্যে কারও কারও নাম উঠে এসেছে প্রশাসনের তৈরি মাদক ব্যবসায়ী তালিকায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৈরি তালিকায় থাকা মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে আছেন আনোয়ারার তৌহিদুল ইসলাম, আবুল ফয়েজ, মো. সেলিম ওরফে পাগলা সেলিম, শেখ মোহাম্মদ, ইসহাক, নাজিম উদ্দিন, মো. রফিক, জাফর উদ্দিন, আবদুস ছবুর, সাদ্দাম হোসেনসহ অনেকে। পুলিশের এক কর্মকর্তার দাবি, আনোয়ারার উপকূলের শঙ্খ নদের মোহনায় দক্ষিণ গহিরা ঘাটকুল এলাকাটি প্যারাবনবেষ্টিত। যোগাযোগব্যবস্থাও নাজুক। তাই প্রশাসন চাইলেই এ এলাকায় অভিযান চালাতে পারে না। এ সুযোগ এলাকাটিকে ইয়াবার স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে। মিয়ানমার থেকে সবচেয়ে বেশি ইয়াবার চালান আসে    এ এলাকায়।

সর্বশেষ খবর