শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

যে কারণে প্রেমিককে পাঁচ টুকরো করেন নারী

সাখাওয়াত কাওসার

রাজধানীর ওয়ারীতে সজীব হাসান হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে শাহনাজ পারভীন আদালতে স্বীকারোক্তি দিলেও এখনো অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। প্রকৃতপক্ষে নেপথ্য থেকে হত্যাকান্ডে কেউ ইন্ধন জুগিয়েছেন কিনা তদন্তে তাও ঘুরেফিরে আসছে। কারণ হিসেবে তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিন দিন আগে থেকেই নিখোঁজ ছিলেন শাহনাজ। এ নিয়ে তার স্বামী ৯ ফেব্রুয়ারি ওয়ারী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন (নম্বর ৪৬৩)। এর বাইরেও নিহত সজীব গ্রেফতার শাহনাজের কলেজ পড়ুয়া মেয়ের দিকে নজর দিয়েছিলেন- এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, স্বীকারোক্তিতে শাহনাজ বলেছেন, মেয়েকে স্কুলে দিতে গিয়ে রাস্তায় শ্যামলী কাউন্টারের স্টাফ সজীবের সঙ্গে তার পরিচয়। পরে প্রেমের সম্পর্কে তারা জড়িয়ে যান। এর পর থেকে পাঁচ বছর সজীব হাসানের সম্পর্কে ছিলেন তিনি। তাকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে স্বামীবাগের ১৭/১ কে এম দাস লেনের চার তলায় বাসাও ভাড়া নেন। প্রায় প্রতিদিন দিনের বেলা ওই বাসায় এসে সময় কাটাতেন আর সন্ধ্যায় স্বামীর বাসায় ফিরতেন। বুটিকসের কাজ শেখার কথা বলে নিয়মিত বের হতেন তিনি। সাধ্যানুযায়ী সজীবের নানা চাহিদা পূরণ করেছেন। তবে সর্বশেষ তিনি তার স্বামীর সংসার ছেড়ে একেবারে সজীবের কাছে চলে এসেছিলেন। তিন দিন তার সঙ্গেই ছিলেন। সঙ্গে পর্যাপ্ত টাকা-পয়সা, সোনার অলঙ্কার কেন আনেননি এ নিয়ে সকাল ১০টার দিকে সজীবের সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। সজীব তাকে বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে তার শরীরে চাকু ঠেকান। আত্মরক্ষার চেষ্টার সময় উল্টো সজীবের পেটেই চাকু ঢুকে যায়। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তার হাতে ছুরির আঘাত লাগে। পরে লাশ গুম করার জন্য তিনি সজীবের দুই হাত ও পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করেন নিজেই।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শাহনাজের বয়স ৪৫। তবে পরকীয়ায় জড়ান তার থেকে ১৩ বছরের ছোট সজীবের সঙ্গে। রাজধানীর ওয়ারীর স্বামীবাগের একটি বাড়ির চার তলার ছোট্ট কক্ষ বছর পাঁচেক আগে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ভাড়া নিয়েছিলেন তারা। তবে সজীব তার পরকীয়া প্রেমিকা শাহনাজের কলেজ পড়ুয়া মেয়ের দিকে কুনজর দিতেন। এ ছাড়া একাধিক নারীর সঙ্গে সজীবের সম্পর্ক ছিল বলে জানতে পারেন শাহনাজ। এসব কারণে সজীবকে হত্যা করে পাঁচ টুকরো করেন শাহনাজ।

পুলিশকে শাহনাজ আরও জানিয়েছেন, সম্পর্কের কথা অন্যদের বলে দেওয়ার হুমকি দিয়ে সজীব প্রায়ই টাকা আদায় করতেন। সম্প্রতি তার মেয়ের ওপরও কুনজর পড়েছিল সজীবের। আরও কয়েক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। তিনি যে কোনো সময় তাদের সম্পর্ক কাউকে জানিয়ে দিতে পারেন এ ভয় থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন। আবার স্বামীর সঙ্গেও তার সুসম্পর্ক ছিল না। দুজন প্রায়ই ঝগড়ায় জড়াতেন। গত সোমবার স্বামী ও তিন সন্তান রেখে সজীবের বাসায় ওঠেন শাহনাজ। তার খোঁজ না পেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়। পুলিশ জিডির তদন্তও শুরু করে। প্রযুক্তিগত ও অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে পুলিশ বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার দিকে তার অবস্থান নিশ্চিত করে। এরই মধ্যে হত্যাকান্ডের পর শাহনাজ তার স্বামী জসীমকেও ফোন করে জানান খুব বিপদে আছেন। তাকে উদ্ধারের জন্য অনুরোধ করেন। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। বিকাল ৩টার দিকে পুলিশ স্বামীবাগের ওই বাসায় যায়। সেখানেই দুই হাত ও দুই পা কেটে বিচ্ছিন্ন করা লাশ উদ্ধার হয়। লাশের টুকরোগুলো স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে রাখা হয়েছে। পুলিশ জানায়, শাহনাজ গৃহিণী। তার বাবার বাড়ি চাঁদপুর। আর ঝিনাইদহের গ্রামে থাকা মা-বাবা ও পরিবারের কারও সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল না সজীবের। স্বজনরা জানতেন ঢাকায় এক বয়স্ক নারীকে বিয়ে করে সংসার করছেন। শাহনাজের তিন সন্তানের মধ্যে একমাত্র মেয়ে কলেজে পড়েন। আর দুই ছেলে চাকরি করেন। স্বামী ব্যবসা করেন। পুলিশের ওয়ারী জোনের সহকারী কমিশনার হান্নানুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে ঘটনাটি তদন্ত করছি। শাহনাজ ছাড়া আরও যদি কারও সম্পৃক্ততা থাকে তা বেরিয়ে আসবে। ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা ছুরি ও শিলপাটা উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্তের আগে এ বিষয়ে বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।’ প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার দিকে ১৭/১ কে এম দাস লেনের চার তলার একটি বাসা থেকে সজীব হাসান (৩২) নামে এক যুবকের লাশের পাঁচ টুকরা উদ্ধার করে পুলিশ। লাশের টুকরার পাশে বসে থাকা শাহনাজ পারভীন নামে একজনকে আটক করা হয়। হত্যার পর লাশ টুকরো টুকরো করে তা নিয়ে পাঁচ ঘণ্টা বসে ছিলেন তিনি।

সর্বশেষ খবর