রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

খুনের নেপথ্যে পরকীয়া

মির্জা মেহেদী তমাল

খুনের নেপথ্যে পরকীয়া

তিন বছর আগে পাবনার সাঁথিয়ার করমজা চতুরবাজারে খুন হন শহিদুল ইসলাম। থানা পুলিশের পর সেই মামলা তদন্ত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। কিন্তু আসামিদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি তারা। এজাহারভুক্ত দুই আসামিকে পলাতক দেখিয়ে আদালতে চার্জশিট দেয় সিআইডি। আর হত্যাকান্ডের মোটিভ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল আর্থিক লেনদেন। বাদীর নারাজির পরিপ্রেক্ষিতে সেই মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। তিন বছর পর সেই হত্যাকান্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করেছে তারা।

স্ত্রীর ‘পরকীয়া’র জের ধরে ঠান্ডু নামে এক ব্যক্তি তার ভাগনে হায়াতকে সঙ্গে নিয়ে শহিদুলকে হত্যা করে। পিবিআই হায়াতকে গ্রেফতারের পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। বলেছে, মামা ঠান্ডু র পরিকল্পনায় অংশ নিয়ে মামি সালমার সঙ্গে প্রেমের জের ধরে পরিকল্পিতভাবে শহিদুলকে হত্যা করে তারা। ঘটনাটি ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবরের।

মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পিবিআই আর্থিক লেনদেনের বদলে ‘পরকীয়া’র জের ধরে হত্যাকান্ডটি ঘটেছিল বলে জানতে পারে। পরে অভিযান চালিয়ে ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর এলাকা থেকে হায়াত আলী নামে এক যুবককে গ্রেফতারের পর সে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের বর্ণনা দেয় ও কারণ জানায়। অপর আসামি ঠান্ডু পালিয়ে ওমান চলে যায়। এ ছাড়া ঠান্ডু র স্ত্রী সালমা আদালত

থেকে জামিন নিয়েছে।  মামলার তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত সূত্র জানায়, নিহত শহিদুলের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ধুবাউড়া থানাধীন চারুয়াপাড়া বাজার এলাকায়। একই এলাকায় আসামি ঠান্ডু মোল্লার শ্বশুরবাড়ি। ঠান্ডু ওমানে থাকা অবস্থায় তার স্ত্রী সালমা খাতুনের সঙ্গে শহিদুলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ছুটিতে দেশে ফিরে জানতে পারে। ক্ষুব্ধ ঠান্ডু তার ভাগনে হায়াতকে নিয়ে শহিদুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ঠান্ডু পরিকল্পনা অনুযায়ী সালমাকে দিয়ে ঘটনার দিন শহিদুলকে ময়মনসিংহ থেকে পাবনার বেড়া সিঅ্যান্ডবি স্ট্যান্ডে যেতে বলে। ঠান্ডু ও হায়াত আগে থেকেই ওই এলাকায় অবস্থান নেয়। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সালমার কথামতো শহিদুল ময়মনসিংহ থেকে বাসযোগে পাবনা সিঅ্যান্ডবি স্ট্যান্ডে পৌঁছায়। এরপর সালমা কৌশলে শহিদুলকে করমজা বাজারের কাছে নিয়ে গেলে সন্ধ্যার পর তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে পালিয়ে যায় ঠান্ডু ও হায়াত। গ্রেফতারকৃত হায়াত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছে, পরিকল্পনা মতো সালমা ও শহিদুল সাক্ষাৎ করে একে অপরের হাত ধরে একসঙ্গে হাঁটতে থাকে। খানিক পর অন্ধকার নামলে পরিকল্পনা অনুযায়ী সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টার দিকে তারা পেছন থেকে শহিদুলকে জাপটে ধরে। ঠান্ডু র সঙ্গে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে শহিদুলের বুকে ও পেটে একাধিক ছুরিকাঘাত করে। শহিদুলের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে গেলে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। তদন্ত কর্মকর্তা জানান, ঘটনার পরপরই আহত অবস্থায় শহিদুলকে স্থানীয় লোকজন প্রথমে বেড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক দিন পর তার মৃত্যু হয়। তদন্ত সূত্র জানায়, ঘটনার পরপরই আসামি ঠান্ডু আবার ওমান চলে যায়। ঠান্ডুর স্ত্রী সালমা ও ভাগনে হায়াতও আত্মগোপনে চলে যায়। মামলাটির তদন্ত চলাকালে অর্থ লেনদেনের কারণে ঠান্ডু তাকে হত্যা করেছে উল্লেখ করে ঠান্ডু ও হায়াতের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছিল। মামলা থেকে অপর দুজনসহ সালমাকে অব্যাহতি দেওয়ার কারণে তারা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়ে নেয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর