রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

বিচার চলছে টিনশেড ভবনে

প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল ও আপিল ট্রাইব্যুনাল

আরাফাত মুন্না

পুরনো একতলা টিনশেড ভবন। পর্যাপ্ত এজলাস না থাকায় আদালতের কার্যক্রম চলে ভাগাভাগি করে। বৃষ্টি হলেই পানি চুইয়ে পড়ে। মামলার নথিপত্র, রেকর্ড সংরক্ষণেও নেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। ফলে নষ্ট হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ নথি। চিত্রটি রাজধানীর সচিবালয়-সংলগ্ন ১৪ নম্বর আবদুল গণি রোডে অবস্থিত তিনটি প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের। এখানেই রয়েছে দেশের একমাত্র প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনাল। ২০০ বছর পুরনো চুন-সুরকি দিয়ে নির্মিত ভবনেই ঝুঁকি নিয়ে অফিস করেন আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও জনবলের অভাবের সঙ্গে নানা সমস্যা নিয়েই কার্যক্রম চলছে দেশের ১৪ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরি-সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে গঠিত এসব ট্রাইব্যুনালের। সরকারি চাকরিজীবীদের চাকরি, পদোন্নতি, অপসারণ ও অব্যাহতি, বিভাগীয় মামলাসহ বিভিন্ন ধরনের মামলার বিচার হয় দেশের মোট সাতটি প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে। এর মধ্যে ঢাকাতেই (১, ২ ও ৩) তিনটি। অপর চারটি চট্টগ্রাম, খুলনা, বগুড়া ও বরিশালে। এসব ট্রাইব্যুনালের রায়ের             বিরুদ্ধে আপিল নিষ্পত্তির জন্য রয়েছে একটি মাত্র প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনাল। এমএলএসএস থেকে সচিব পর্যন্ত সরকারি যে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের চাকরি নিয়ে প্রশাসনিক কোনো সংকটে পড়লে এই ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হয়ে থাকেন। এ ছাড়া আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরতদের চাকরিগত সমস্যা নিয়ে সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে মামলা করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ১৯৮২ সালে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল গঠনের কয়েক বছর পর আপিল ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রথম থেকেই এটি ছিল গণভবনে। পরে এটা ঢাকা জজ কোর্ট এলাকায় সরিয়ে নেওয়া হয়। ১৯৮৮ সালে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালটি স্থানান্তর করা হয় সচিবালয়-সংলগ্ন ১৪ নম্বর আবদুল গণি রোডে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনাল ও প্রাসনিক ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম চলছে এখানেই।

হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শওকত হোসেন প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রায় ২০০ বছরের পুরনো দোতলা ভবনের ওপরতলায় নিবন্ধন অধিদফতরের প্রধানের কার্যালয় এবং নিচতলায় প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও দুজন সদস্যের চেম্বার। ধসে পড়ার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে এ ভবনে অফিস করছেন তারা।

সরেজমিন দেখা গেছে, টিনশেড ভবনে স্থাপিত তিন নম্বর প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের এজলাস নেই। এক নম্বর ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে ভাগাভাগি করে বিচার পরিচালনা করা হচ্ছে। ফলে দারুণভাবে বিঘিœত হচ্ছে বিচার কার্যক্রম।

জানতে চাইলে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. আবদুর রহিম কাজল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল ভারতের ট্রাইব্যুনালের আদলে গঠন করা হলেও তাদের এবং আমাদের কার্যক্রমে অনেক পার্থক্য। ভারতে খুব আধুনিকভাবে চলে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম। আর আমাদের এখানে পর্যাপ্ত এজলাসই নেই। এজলাস সংকটের কারণে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সাংবিধানিক এসব ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম চলছে পুরনো টিনশেড ভবনে। নেই রেকর্ড রুমও।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আইনমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তিনি আমাদের এসব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। শিগগিরই তিনি আমাদের সঙ্গে বসবেন বলে জানিয়েছেন।’ প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের মর্যাদা ও নিরাপত্তার স্বার্থে স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ খুবই জরুরি বলে মনে করেন এই আইনজীবী।

ট্রাইব্যুনাল নেই তিন বিভাগে : মোট সাতটি প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের মধ্যে তিনটি ঢাকায়। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগের বগুড়ায়, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও খুলনায় একটি করে ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। তবে সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে কোনো প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল না থাকায় এসব বিভাগের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মামলা করতে অন্য বিভাগের ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। এতে এসব এলাকার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি।

হাই কোর্ট থেকে ১০ হাজার মামলা ফেরত : সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের যে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি-সংক্রান্ত বিষয়ে সংক্ষুব্ধ হলে প্রতিকার চেয়ে হাই কোর্টে রিট করতে পারতেন। তবে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে না গিয়ে সরাসরি হাই কোর্টে রিট করার সুযোগ এখন বন্ধ। গত বছর মে মাসে আপিল বিভাগ এ-সংক্রান্ত একটি মামলা নিষ্পত্তি করে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে। ওই রায়ে আপিল বিভাগ বলেছে, চাকরির শর্তাবলিতে ক্ষুব্ধ হলেও সরকারি চাকরিজীবীরা এখন আর সরাসরি হাই কোর্টে রিট করতে পারবেন না। শুধু তা-ই নয়, হাই কোর্টে রিট হিসেবে বিচারাধীন প্রায় ১০ হাজার মামলা নিষ্পত্তির জন্য প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে ফেরত পাঠানোর আদেশও দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর