সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

লাশ পুঁতে মুরগির খামার

মির্জা মেহেদী তমাল

লাশ পুঁতে মুরগির খামার

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের সলিমপুর। সেখানকার লাল মিয়ার কলোনিতে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করেন নূর উদ্দিন। হঠাৎ করেই নূর উদ্দিন নিখোঁজ। তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ কোনো খবরও বলতে পারছেন না। তার স্ত্রী ঘরে বসে একা একা কান্না করেন। নূর উদ্দিনের নিখোঁজের সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। স্থানীয় লোকজন আসে নূর উদ্দিনের বাসায়। সান্ত্বনা দেন তার স্ত্রীকে। কেউ কেউ জিজ্ঞেস করেন নূর উদ্দিন কেন নিখোঁজ হলেন। তার স্ত্রী কাউকে সন্দেহ করছেন কি না। কিন্তু এসব বিষয়ে নূর উদ্দিনের স্ত্রীর কোনো সন্দেহ নেই। কাউকে তিনি সন্দেহও করেন না। বিষয়টি পুলিশও জানতে পারে। কিন্তু নূর উদ্দিনের নিখোঁজের বিষয়ে কোনো অভিযোগ না করায় পুলিশও তদন্ত শুরু করতে পারছে না। তবে এলাকার লোকজন নূর উদ্দিনের প্রতিবেশী রুমেন মিয়াকে সন্দেহ করছেন। তারা বলছেন, রুমেন মিয়ার গতিবিধি বেশ সন্দেহজনক। কিন্তু নূর উদ্দিনের স্ত্রী রুমেনের বিষয়টি যেন পাত্তাই দিতে চাচ্ছিলেন না। লোকজনকে তিনি বলেন, রুমেন মিয়াকে তার স্বামী আপন ছোট ভাইয়ের মতো দেখতেন। রুমেন কোনো ক্ষতি করবে না। কিন্তু এলাকাবাসীর মন থেকে সন্দেহ যেন দূর হচ্ছে না। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও খবর পেয়ে নূর উদ্দিনের বাসায় যান। তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। তিনি নূর উদ্দিনের নিখোঁজের পেছনে কেউ থাকতে পারে কিনা জিজ্ঞাসা করেন। নূর উদ্দিনের স্ত্রী প্রথমবারের মতো রুমেনের নাম বলেন। তাকে সন্দেহ হয় বলে জানান নূর উদ্দিনের স্ত্রী। স্থানীয় লোকজনও রুমেনকে সন্দেহ করছিলেন আগে থেকেই। নিখোঁজের দুই দিন পর রুমেন মিয়াকে এলাকার লোকজন ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু তিনি ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান। এক পর্যায়ে তাকে লোকজন মারধর করে। তখন তিনি জানান, নূর উদ্দিনকে তিনি খুন করেছেন। লাশ উঠানোর মাটি খুঁড়ে পুঁতে রেখেছে। তার ওপর গড়ে তুলেছে মুরগির খামার। লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে রুমেনকে গ্রেফতার করে। পুলিশ সেই রাতেই তার দেওয়া তথ্য মতে নূর উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করে। গত বছরের ১৩ আগস্ট হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান নূর উদ্দিন। এরপর থেকে তার স্ত্রী আনোয়ারা, দুই সন্তানসহ প্রতিবেশীরা সম্ভাব্য সব স্থানে তাকে খুঁজেও সন্ধান পাননি। এরই মধ্যে বাড়ির পাশে একটি জমিতে মাটি ফেলে মুরগির খামার তৈরি করে রুমেন মিয়া। নূর উদ্দিন নিখোঁজের পর থেকে রুমেনের আচরণে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করেন অন্য বাসিন্দারা। আটকের পর পুলিশের জেরায় রুমেন জানিয়েছেন, নূর উদ্দিন তার স্ত্রী আনোয়ারাকে মারধর করতেন। এসব মারধর দেখে তার ভালো লাগত না। তাই তিনি নূর উদ্দিনকে হত্যা করেছেন! এতে পুলিশের মধ্যে খটকা লাগে। তার কেন ভালো লাগবে না, এ নিয়ে পুলিশের তদন্ত এগিয়ে যায়। নিহতের স্ত্রীকে পুলিশ জেরা করে। জেরায় তিনি জানিয়েছেন, রুমেনকে নিজ ভাইয়ের মতো রেখেছিলেন নূর উদ্দিন। থাকা-খাওয়ার বিনিময়ে রুমেন কিছু টাকা দিতেন নূরকে। কিন্তু গত কয়েক মাসে টাকা না দেওয়া নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝগড়া বাধে। এর জের ধরে নূরকে গলা কেটে হত্যা করেন রুমেন। এ সময় নূরের স্ত্রী বাধা দিলে তার শরীরেও ধারালো অস্ত্রের আঘাত লাগে। কিন্তু রুমেন তাকে ভয় দেখিয়ে বলেন, ঘটনা কাউকে জানালে তার সন্তানদেরও হত্যা করবেন রুমেন। তাই দুই দিন ঘটনা চেপে রাখলেও শনিবার নূরের স্ত্রী সব কিছু প্রকাশ করেন। পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমে ভিন্ন তথ্য খুঁজে পান। পুলিশ জানতে পারে নূর উদ্দিনের স্ত্রী আনোয়ারার সঙ্গে রুমেনের সম্পর্ক ছিল। যে কারণে আনোয়ারার সঙ্গে নূর উদ্দিনের সম্পর্ক খারাপ ছিল। মারধর করতেন আনোয়ারাকে। যা পছন্দ করত না প্রেমিক রুমেন। যে কারণে তারা খুনের পরিকল্পনা আঁটে। জবাই করে খুনের পর স্ত্রী আনোয়ারা তার স্বামীর লাশ মাটিতে পুঁতে রাখতে সহায়তা করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর