মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

আরও রোহিঙ্গা স্থানান্তর, রঙিন স্বপ্নের প্রত্যাশা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

আরও রোহিঙ্গা স্থানান্তর, রঙিন স্বপ্নের প্রত্যাশা

কক্সবাজারে শরণার্থী ক্যাম্প কুতুপালংয়ে আশ্রয় নেওয়া ষাটোর্ধ্ব মো. রফিক। তিনি ২৩ নম্বর ব্লকের নেতা। পরিবারের চার সদস্য। এর আগেই ভাসানচরে চলে গিয়েছিলেন অপর তিন সদস্য। জাহাজে ওঠার জন্য তিনি দাঁড়িয়েছেন লাইনে। তবে তার চোখেমুখে ছিল তৃপ্তির হাসি। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে দীর্ঘদিন কক্সবাজার ছিলাম। সরকার এখন আমাদের ভাসানচরে পাঠাচ্ছে। ইতিমধ্যে সেখানে পরিবারের অপর সদস্যরা চলে গেছে। তারা সেখানে ভালো আছে। আমরা এখন নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছি। সেখানে কর্মসংস্থান হবে। আশা করি স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। পরিবার নিয়ে বাঁচার একটা অবলম্বন তৈরি হলো।                 আর কোথাও স্থানান্তর হতে হবে না। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’ গতকাল সকালে চট্টগ্রাম বোট ক্লাব থেকে নৌবাহিনীর পাঁচটি জাহাজে করে রওনা দেওয়ার প্রাক্কালে রফিক এসব কথা বলেন। গতকাল সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে মিয়ানমার থেকে আসা কক্সবাজার শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া ২ হাজার ১৪ জন রোহিঙ্গাকে চতুর্থ দফায় নোয়াখালীর ভাসানচরে পাঠানো হয়েছে। এর আগে আরও তিন দফায় রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে পাঠানো হয়েছিল। গতকাল ভোর ৬টা থেকে রোহিঙ্গারা নৌবাহিনীর জাহাজে করে যাত্রার প্রস্তুতি শুরু করেন। জানা যায়, রবিবার বেলা সোয়া ১২টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ থেকে প্রথম দফায় ২২টি গাড়িতে ১ হাজার ১৫২ জনকে এবং বেলা ৩টায় দ্বিতীয় দফায় ১৭টি গাড়িতে করে ৮৬২ জনকে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। আজ মঙ্গলবার আরও ১ হাজার ৮০০ জনকে ভাসানচরে পাঠানোর জন্য চট্টগ্রামে আনার কথা। নৌবাহিনীর জাহাজ বিএনএস সন্দ্বীপ, ল্যান্ডিং ক্রাফট ইউনিট (এলসিইউ) ১, ২, ৩ ও ৪ নামের পাঁচটি জাহাজে করে তাদের ভাসানচরে পাঠানো হয়। গতকাল সকালে বোট ক্লাবে দেখা যায়, সবাই লাইন ধরে সুশৃঙ্খলভাবে উঠছেন জাহাজে। সবার মধ্যে দেখা যায় স্বস্তি ভাব। অনেক মায়ের কোলে আছে নবজাতক।

অনেকেই নিজ নিজ প্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে যাচ্ছেন কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে। ইসমাইল নামের একজন নিয়ে যাচ্ছেন আটটি মুরগির বাচ্চা। মো. শরীফ নামের একজন বললেন, ‘আমি কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পের একটি ব্লকের নেতা ছিলাম। আমার পাঁচ সদস্যের পরিবার। পরিবারের অপরাপর সদস্যরা আগেই ভাসানচরে চলে গেছে। সবাইকে পাঠিয়ে আমি সর্বশেষ যাচ্ছি। ভাসানচরে সবাই ভালো আছেন। তাদের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ আছে। তারা ভালো আছেন, তাই আমরাও চলে যাচ্ছি।’ অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এর আগে তিন দফায় কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ৬ হাজার ৬৮৮ জনকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়। প্রথম দফায় ২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর স্থানান্তর করা হয় ১ হাজার ৬৪২ জনকে, দ্বিতীয় দফায় ২৯ ডিসেম্বর ১ হাজার ৮০৪ জনকে, তৃতীয় দফায় চলতি বছরের ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি স্থানান্তর করা হয় ৩ হাজার ২৪২ জনকে। ভাসানচরের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে মোট ৯২ হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের পরিকল্পনা আছে সরকারের। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর হামলা শুরু হলে তারা বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেন। ইতিমধ্যে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। এর আগেও আসেন আরও কয়েক লাখ। বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ নিবন্ধিত রোহিঙ্গা রয়েছেন।

সর্বশেষ খবর