সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

তৃণমূলের আগ্রহ নেই স্থানীয় সরকারে

বিএনপির কেন্দ্র থেকে আছে চাপ, দলীয় রাজনীতি মাঠে টিকিয়ে রাখার কৌশল

মাহমুদ আজহার

তৃণমূলের আগ্রহ নেই স্থানীয় সরকারে

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আগ্রহ নেই বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। দিন যতই যাচ্ছে ভোটে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। ২০২০ সাল থেকে ঢাকা সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা দিয়ে শুরু হওয়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রথম দিকে উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যায় দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের। জাতীয় সংসদের কয়েকটি উপনির্বাচনেও অংশ নেয় বিএনপি। সর্বশেষ চার ধাপে পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে সরকারি দল, নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকায় ‘হতাশ’ বিএনপি মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে, দলীয় প্রতীক নিয়ে ভোট করতে চান না বিএনপির যোগ্য প্রার্থীরা। এ নিয়ে তারা কেন্দ্রকে নিজেদের অপারগতার কথা জানিয়েছেনও। কিন্তু দলীয় রাজনীতির কৌশল হিসেবে নির্বাচনে যেতে কেন্দ্র থেকে চাপও দেওয়া হচ্ছে প্রার্থীদের। অবশ্য অজনপ্রিয় ও অযোগ্যদের একটি অংশ বিএনপির দলীয় প্রার্থী হয়ে সরকারি দলের সঙ্গে সমঝোতা করে তাদের ‘ডামি প্রার্থী’ হিসেবে ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত থাকছে। সরকারি দলের প্রার্থীর সঙ্গে সমঝোতা করে আবার কয়েকটি এলাকায় বিএনপির প্রার্থী হয়েও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতও হয়েছে। এসব নিয়ে তদন্ত করছে বিএনপির হাইকমান্ড। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ পৌরসভায় আগেরবার নির্বাচন করেন স্থানীয় বিএনপি নেতা আজাদুল করীম প্রামাণিক। ওই বছর তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্র্থীর সঙ্গে তীব্র প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করেন। এবার দ্বিতীয় ধাপে পৌরসভা ভোটে অংশ নিতে কেন্দ্র থেকে তাকে অনুরোধ জানানো হলেও তিনি ভোটে অংশ নেননি। এরপর ভোট করেন সুন্দরগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি মশিউর রহমান সবুজ। তিনি মাত্র ২০০ ভোট পান। এ প্রসঙ্গে আজাদুল করীম প্রামাণিক বলেন, ভোটের ফলাফল কী হবে তা আগে থেকেই জানি। জোর করে ভোট ছিনিয়ে নেওয়া হবে-এটা জানার পর কেন ভোটে যাব। এ ছাড়া নতুন করে হামলা-মামলায় জড়ানো হবে। আর্থিকভাবে তো ক্ষতিগ্রস্ত হবই। সব মিলিয়ে আমি ভোটে যেতে রাজি হইনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির কেন্দ্রীয় একজন সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, তার বিভাগের অনেক যোগ্য মেয়র প্রার্থী জানিয়েছেন, তারা স্থানীয় সরকারের ভোটে অংশ নিতে চান না। তাদের যেন দলীয় প্রার্থী না করা হয়, এ জন্য কেন্দ্রকে অনুরোধ করা হয়। এর কারণ হিসেবে সম্ভাব্য ওইসব প্রার্থী জানিয়েছেন, স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী যে কোনো মূল্যে বিজয়ী হবেন। ভোটের প্রস্তুতি নেওয়ার পুরো অর্থ নষ্ট হবে। এটা কাটিয়ে ওঠা অনেক কষ্টকর হবে। তাছাড়া নেতা-কর্মীদের ওপর নতুন করে মামলা-হামলার খড়গ নেমে আসবে। অনেকেই ঘরবাড়ি ছাড়া হবেন। নতুন করে তারা কোনো ঝামেলায় জড়াতে চান না। এটা শুনে হতাশ হন ওই সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বিস্ময় প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে ওই সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, একটা সময় এমন ছিল, প্রার্থী হওয়ার জন্য একজনের বিপরীতে ৫-৭ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতেন। আমাদের একজনকে বেছে নিতে খুবই কষ্ট হতো। এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। যোগ্য প্রার্থীরা ভোট করতেই চান না। তাদের অনুরোধ করলেও অনাগ্রহ দেখান। এ দিকে বিএনপির একটি সূত্র জানায়, পিরোজপুর সদর, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, পাবনার ভাঙ্গুরা ও নারায়ণগঞ্জের তারাব-এ চার পৌরসভায় মেয়র পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত আওয়ামী লীগের প্রার্থী। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে এসব স্থানে বিএনপির একজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। বাকি তিনজনের মনোনয়নপত্রে তথ্য গরমিলের কারণে প্রার্থিতা বাতিল হয়। এ ঘটনাকে ‘রহস্যজনক’ আখ্যা দিয়ে স্থানীয় নেতারা কেন্দ্রের কাছে চিঠি দিয়েছেন। এতে ওই চার প্রার্থীর বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ করেছেন তারা। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে তদন্ত করছে বিএনপি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ চার পৌরসভার তৃণমূল নেতারা জানান, কেউ কেউ দলীয় মনোনয়নে নির্বাচনে অংশ নেয় আবার শেষ মুহূর্তে প্রত্যাহার করেন। অনেকেই আছে মনোনয়নপত্র বাতিল হলে তার বিরুদ্ধে আপিলও করেন না। ‘হামলা-মামলার ভয়ভীতি প্রদর্শন’ এগুলোকে তারা অজুহাত হিসেবে দাঁড় করায়। প্রতিটি নির্বাচনেই বিএনপির নেতা-কর্মীরা ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের হাতে নির্যাতন, হামলা-মামলার শিকার হচ্ছেন। তাই বলে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে থাকবে না। আসলে তারা ক্ষমতাসীন দলের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে ধানের শীষের মনোনয়ন নিয়েছেন। পরে মনোনয়নপত্রে ইচ্ছে করে ভুল তথ্য দিয়েছে যেন বাতিল হয়ে যায়। তৃণমূলের নেতারা মনে করেন, এর সঙ্গে তাদের ব্যাপারে যারা সুপারিশ করেছেন সেই নেতারাও জড়িত। অবশ্য প্রার্থীরা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিঙ্গাপুরে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চার প্রার্থীর বিষয়টি কেন্দ্র খতিয়ে দেখছে। তবে সারা দেশে যেভাবে এখন ভোট হচ্ছে, তাতে জনগণের মতামত প্রকাশিত হয় না। দেশে এখন গণতন্ত্র নেই, কথা বলার অধিকার নেই। বর্তমান অযোগ্য নির্বাচন কমিশনের কারণে নির্বাচন ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতা হারিয়ে ফেলেছে। তারপরও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। নির্বাচনে অংশ নিয়ে গণতান্ত্রিক যে সুযোগ বা স্পেস তা ব্যবহার করতে চাই। দেশে গণতন্ত্র চাই, দেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতে চাই আমরা।

সর্বশেষ খবর