বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

১৩ হাজার একর ভূমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল

সন্দ্বীপের চরে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

১৩ হাজার একর ভূমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল

বঙ্গোপসাগরের মেঘনার মোহনা। মোহনার চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের পশ্চিম উপকূলের প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সাগরের জলরাশির বুক চিরে জেগে উঠছে নতুন ভূমি। নতুন এ ভূমির প্রায় ২ কিলোমিটার অংশ জুড়ে সবুজ ঘাসের সমারোহ। জোয়ারের সময় দেখা যায় না সবুজ। কিন্তু ভাটায় দেখা মেলে সবুজ ঘাসের চরের পর চর। দেখা মেলে সন্দ্বীপের চরে অর্থনৈতিক নতুন সম্ভাবনার। ছয় মৌজায় জেগে উঠেছে প্রায় ১৩ হাজার একর ভূমি। বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা) এখানে তৈরি করবে নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখা বেজাকে জেগে ওঠা চর বরাদ্দ প্রদানের প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করছে। জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখা সূত্রে জানা যায়, সন্দ্বীপে ছয়টি মৌজায় মোট ১২ হাজার ৮৯৩ দশমিক ৮৫৭৩ একর জায়গায় ইকোনমিক জোন হওয়ার কথা। এর মধ্যে বাথানবাড়ী মৌজায় ২ হাজার ২৫২ দশমিক ৭১০৭ একর, কাঁকড়ার চর মৌজায় ২ হাজার ১৭৫ দশমিক ৩৯৪৪ একর, বোয়ালিয়া মৌজায় ২ হাজার ১৫৯ দশমিক ১৮০২ একর, বগার চর মৌজায় ১ হাজার ৯৫৯ দমমিক ৫৪২৩ একর, চিরিঙ্গা মৌজায় ২ হাজার ২৪০ দশমিক ৬১৬২ একর ও চর কাউনিয়া মৌজায় ২১০৬ দশমিক ৪১৩৫ একর। গত বছর ২০ অক্টোবর জায়গাগুলোর বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে তথ্য প্রেরণ করেছে জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাজমুল আহসান বলেন, ‘সন্দ্বীপে নতুন করে ইকোনমিক জোন করার প্রস্তাবিত জায়গাগুলো নিয়ে পরিবেশ অধিদফতর আপত্তি তুলছিল। তবে সেটি সমাধান হয়েছে। এখন জায়গাগুলো নিয়ে আর কোনো জটিলতা নেই। বিষয়টি বেজাকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে ভূমি মন্ত্রণালয়ে লিখিত প্রস্তাবনা দেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘এখানে নতুন করে ইকোনমিক জোন গড়ে তোলা হলে ওই অঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন হবে। তৈরি হবে বাস্তুহারা মানুষগুলোর কর্মসংস্থান। বলা যায়, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা।’ জানা যায়, বঙ্গোপসাগর-বেষ্টিত সন্দ্বীপ উপজেলার সবচেয়ে ভাঙনপ্রবণ এলাকা ছিল সন্তোপুর, আমানুল্লাহ ও দীর্ঘাপার ইউনিয়ন। এসব এলাকার হাজার হাজার মানুষ সন্দ্বীপ থেকে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। তবে সেই ভাঙন থেকে প্রায় তিন দশক আগে চরের দেখা মেলে সন্দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে। আর জেগে ওঠা সেই চরকে কেন্দ্র করে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করার পরিকল্পনা করছে সরকার। ইতিমধ্যে নানা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে বেজা। ভূমি জরিপের কাজ করেছে জিওলজিক্যাল সার্ভে বিভাগ। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সন্দ্বীপের উত্তর পশ্চিমে ষাটের দশকে জেগে ওঠা বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন উড়িরচরের দক্ষিণে জেগে উঠেছে আরও প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ চর। আবার দ্বীপের পশ্চিমে চর জাহাইজ্যা (স্বর্ণদ্বীপ), চর ক্যারিং, ঠ্যাংগার চর মিলে জেগে ওঠা নতুন ভূমির পরিমাণ সন্দ্বীপের প্রায় দ্বিগুণের চেয়ে বেশি হতে পারে বলে ধারণা স্থানীয়দের। অন্যদিকে সন্দ্বীপের পশ্চিম উপকূলে নোয়াখালী, হাতিয়া, সন্দ্বীপ জুড়ে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে জেগে ওঠা নতুন নতুন চরের আশপাশে পলি জমে বিস্তৃত হয়ে সাগর মোহনায় সাংগু গ্যাস ফিল্ডের কাছাকাছি চলে গেছে। ফলে প্রতিনিয়ত এ চর বিস্তৃত হচ্ছে। সন্দ্বীপে জেগে ওঠা সবুজ চরের উপকূলীয় অংশে আছে বিস্তীর্ণ চর। দেখা যায় মনজুড়ানো সবুজ ঘাস। চরে দিনভর থাকে গরু-মহিষসহ নানা গবাদিপশু। চরের বিভিন্ন জায়গায় ঘেরাও দিয়ে গড়া হয়েছে বাগান। কোথাও কোথাও ধান চাষও করছেন স্থানীয়রা। এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হলে তৈরি হবে শিল্প-কারখানা। হবে লাখো মানুষের কর্মসংস্থান। বদলে যাবে স্থানীয় জনসাধারণের অর্থনৈতিক চিত্র।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর