বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

গ্রামবাসীর উদ্যোগে নদীর ওপর ব্রিজ

লিয়াকত হোসেন, বোয়ালমারী (ফরিদপুর)

গ্রামবাসীর উদ্যোগে নদীর ওপর ব্রিজ

চন্দনা-বারাশিয়া নদীর ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি ছিল সাত গ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের। কিন্তু এলাকাবাসীর এ আকুতিতে মন গলেনি কোনো জনপ্রতিনিধির। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে  কেন্দ্র পর্যন্ত দায়িত্বশীল ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি দফতরে বারবার ধরনা দিয়েও মেলেনি সমাধান। এ অবস্থায় গ্রামবাসী সম্মিলিতভাবে নিজেদের উদ্যোগে শুরু করেছেন ব্রিজটির নির্মাণ কাজ।

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ‘বিলসড়াইল বটতলা’ নামক স্থানে চন্দনা-বারাশিয়া নদীর ওপর এ ব্রিজ নির্মাণের কাজ চলছে। ব্রিজটি দৈর্ঘ্যে ১০০ ফুট এবং সাড়ে ৩ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট। চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছেন গ্রামবাসী। গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ময়না ইউনিয়নের বিলসড়াইল, বান্দুগাম, ঠাকুরপুর, হাঁটুভাঙ্গা, মিরেরচর, কান্দাকুল ও ইচাখালী এই সাত গ্রামের জনসাধারণের যাতায়াত সহজ হয় ব্রিজটি নির্মাণ হলে। এই রাস্তা দিয়ে ওই এলাকার লোকজন সাতৈর বাজারসহ কয়েকটি হাট-বাজারে যাতায়াত করে। এই জায়গায় ব্রিজ না থাকায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কমপক্ষে এক থেকে দেড় কিলোমিটার ঘুরে অন্য রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয় ওই এলাকাবাসীর। ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে ওই সাতটি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ উপকৃত হবে। চন্দনা-বারাশিয়া নদী পাড়ি দিয়ে কেএফ করিম উচ্চবিদ্যালয়, সাতৈর উচ্চবিদ্যালয়, সাতৈর প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাতৈর দাখিল মাদরাসা, সাতৈর কিন্ডারগার্টেন, একতা একাডেমির বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ও সাতৈর বাজারের লোকজনসহ প্রায় সহস্রাধিক লোকজন প্রতিদিন যাতায়াত করে। বর্ষাকালে ওই জায়গায় বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হতে হয়। মাইক্রোবাস, অটোবাইক কিংবা মোটরসাইকেল ওই গ্রামগুলো থেকে বের হয়ে বোয়ালমারী উপজেলা সদর, ফরিদপুর শহরসহ বিভিন্ন জায়গায় যেতে তাদের ১ কিলোমিটার পথ ঘুরে এলানখালী-সাতৈর অথবা ময়না-বোয়ালমারী সড়ক দিয়ে যেতে হয়।  এলাকাবাসী জানান, গত ১৫ বছর ধরে তারা চন্দনা-বারাশিয়া নদীর ওই জায়গায় একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের কাছে ধরনা দিয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমনকি স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে তারা এ সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এ ছাড়া কয়েকবার আবেদন করেছেন উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। এ কাজে সরকারি-বেসরকারি কোনো সহায়তা না পেয়ে গ্রামবাসী নিজেরা স্বেচ্ছায় গ্রামে গ্রামে টাকা তুলে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। ব্রিজ নির্মাণের মূল উদ্যোক্তা বিলসড়াইল গ্রামের শেখ হারুন-অর রশিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রায় দুই মাস আগে এ ব্যাপারে এলাকাবাসীকে নিয়ে একটি সভা করি। ওই সভায় নিজেদের টাকায় ব্রিজটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই সভায় গ্রামের বিত্তশীলসহ সর্বস্তরের লোকদের কাছে ব্রিজ নির্মাণের জন্য আর্থিক সাহায্য চাওয়া হয়। ইতিমধ্যে ১০৫ জন গ্রামবাসীর মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা সংগ্রহ হয়েছে। এ অবস্থায় গত ২৯ জানুয়ারি থেকে ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। বালু, রড, সিমেন্ট, খোয়া দিয়ে নদীর ওপর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ব্রিজ নির্মাণের জন্য যে টাকা তোলা হয়েছে আমরা আশা করছি তাতে পিলারগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। পরবর্তিতে পাটাতন ঢালাই দেওয়ার জন্য আরও টাকার প্রয়োজন হবে। তবে আমাদের তহবিলে টাকা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ইচ্ছা করলে যে কেউ আমাদের এ কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির মো. সেলিম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে ব্রিজ নির্মাণের জন্য কোনো বাজেট নেই। গ্রামবাসী নিজেদের উদ্যোগে যে ব্রিজটি নির্মাণ করছেন এটি একটি শুভ উদ্যোগ। এ কাজে আমার কিছু করার থাকলে করব।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর