বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

বিস্ফোরক মামলা এখনো নিম্ন আদালতেই

১২৬৪ সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন মাত্র ১৮৫ জন, হত্যা মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায়

আরাফাত মুন্না

বিস্ফোরক মামলা এখনো নিম্ন আদালতেই

আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি। পিলখানায় বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) বিদ্রোহের এক যুগ পূর্ণ হচ্ছে। ২০০৯ সালের এই দিনে হঠাৎ গুলি ও বোমার বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে রাজধানী। সেদিন পিলখানায় বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) সদর দফতরকে রক্তাক্ত করে বাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্য। হত্যা করা হয় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে। টানা দুই দিন শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে আসে। পিলখানা বিদ্রোহের পর বিডিআরের নাম পরিবর্তন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) করা হয়। পরিবর্তন করা হয় বাহিনীর লোগো এবং পতাকা। এ বিদ্রোহ ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার মধ্যে হত্যা মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে দ্রুতগতিতেই। বিচারিক আদালত ও হাই কোর্ট হয়ে আসামির সংখ্যা ও মৃত্যুদন্ডের দিক দিয়ে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ মামলা এখন চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। তবে বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা অপর মামলার বিচার কাজ চলছে ঢিমেতালে। ঘটনার ১২ বছর পার হলেও এখনো নিম্ন আদালতই পেরোতে পারেনি মামলাটি। ১২৬৪ সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত শেষ হয়েছে মাত্র ১৮৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ। পিলখানা হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করেন ওই থানার তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক নবজ্যোতি খিসা। পরে মামলা দুটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তর করা হয়। এরপর ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর পুরান ঢাকার বকশীবাজার কারা অধিদফতর মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত রায়ে বিডিআরের সাবেক ডিএডি তৌহিদসহ ১৫২ জনকে মৃত্যুদন্ড এবং বিএনপির সাবেক এমপি নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু (প্রয়াত), স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ২৭৭ জনকে খালাস দেয় বিচারিক আদালত। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১৫২ আসামির মধ্যে ১৪ জন পলাতক। এ ছাড়া বন্দী অবস্থায় তোরাব আলীসহ দুই আসামি মারা গেছেন।

২০১৩ সালের নভেম্বরে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাই কোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ ঘটনার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ডিএডি তৌহিদসহ ১৩৯ আসামির মৃত্যুদন্ডের আদেশ বহাল রাখে। এ রায়ে ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন এবং ১৯৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয় হাই কোর্ট। খালাস পান ৪৯ আসামি। দুই বছরের বেশি সময় পর গত বছর ৮ জানুয়ারি ১১ দফা পর্যবেক্ষণসহ হাই কোর্টের ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় (ডেথ রেফারেন্স ও আপিল) প্রকাশিত হয়। বিচারপতি মো. শওকত হোসেন, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্টের বিশেষ বেঞ্চের বিচারকরা বাংলা ও ইংরেজিতে দেওয়া রায়ে ভিন্ন পর্যবেক্ষণ দেন। রায়ে মামলার প্রেক্ষাপট, ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা ও নৃশংসতার চিত্রও তুলে ধরা হয়। এ পর্যন্ত এ মামলায় প্রায় ৩০০ আসামির পক্ষে ৫১টি আপিল আবেদন সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় দাখিল করা হয়েছে। অন্যদিকে হাই কোর্টের রায়ে খালাস ও সাজা কম হওয়া আসামিদের বিষয়ে ২০টি লিভ টু আপিল আবেদন দাখিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এদিকে হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় দুটি ধাপ শেষ হলেও বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলাটি এখনো বিচারিক আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।

সর্বশেষ খবর