শিরোনাম
শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ওয়ারীতে গলা কেটে শিশু, বনানীতে কিশোরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

মোহাম্মদপুরে নারীর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে পৃথক ঘটনায় শিশু-কিশোরসহ তিনটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। ওয়ারীতে নিজ বাসায় মোহাম্মদ হাসান (১২) নামে এক শিশুকে গলা কেটে এবং বনানীতে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে মো. শাকিল গাজী (১৪) নামে এক কিশোরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া মোহাম্মদপুরে রাস্তা থেকে অজ্ঞাত এক নারীর (২৪) লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ বলছে, কাছের স্বজনদের দ্বারাই হত্যার শিকার হয়েছে শিশু হাসান এবং মারধরের প্রতিশোধ নিতেই ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় কিশোর শাকিলকে। এ ছাড়া অজ্ঞাত নারীর পরিচয় এখনো শনাক্ত হয়নি।

ওয়ারী থানার এসআই আসাদুজ্জামান জানান, গত বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় ওয়ারীর পদ্মনিধি লেনের ৮/১/এ নম্বর বাড়ির ষষ্ঠ তলার বাসা থেকে গলাকাটা অবস্থায় শিশু হাসানের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ওই বাসায় টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালংকার লুট করে শিশুটিকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। নিহতের চাচা সুবাহান বলেন, ছোট সময় থেকেই হাসানের বাবা মজনু অন্যত্র বিয়ে করে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। শিশু হাসানের মা ফাতেমা বেগম অন্যত্র থাকেন। হাসান তার নানা-নানির কাছে থাকত। পরে তারা মারা যাওয়ার পর বছরখানেক আগে ওয়ারীতে তার খালা আয়েশা আক্তার ববিতার কাছে আসে। হাসানের খালু জামাল মিয়ার ওয়ার্কশপ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সে ছিল। বুধবার সন্ধ্যায় হাসানের খালা কিছু জামা-কাপড় কেনার জন্য টিকাটুলির রাজধানী মার্কেটে যায়। খালাতো ভাই আজিজুল ইসলাম (১২) সন্ধ্যায় বাসার বাইরে ছিল। যতটুকু জানতে পেরেছি, তারা বাইরে থেকে ফিরে এসে ঘর তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পায়। তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে বিছানার খাটের ওপর গলাকাটা অবস্থায় হাসানকে দেখতে পেয়ে তারা পুলিশে খবর দেয়। নিহত হাসানের খালাতো ভাই আজিজ জানায়, বুধবার সন্ধ্যায় আমি কোচিংয়ে বের হয়েছিলাম। বৃহস্পতিবার আমাদের কক্সবাজারে পিকনিকে যাওয়ার কথা ছিল। সে কারণে আম্মা মার্কেট করতে রাজধানী মার্কেটে গিয়েছিলেন। বুধবার রাতে বাসায় এসে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসানকে দেখতে পাই। আমাদের বাসা থেকে টাকা ও সোনা লুট হয়ে গেছে। আজিজ আরও জানায়, হাসান অনেক আগে শনিরআখড়ায় একটি মাদরাসায় কিছু দিন ক্লাস করেছে। সেখানে তার শিক্ষক তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছিল। এ বিষয়ে একটি মামলা হয়েছিল। এরপর থেকে সে আর মাদরাসায় যায় না। বন্ধ রয়েছে তার লেখাপড়াও। তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের জাজিরায়। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে হাসান তৃতীয়। নিহতের খালু জামাল ভূঁইয়া জানান, বুধবার বিকালে তিনি বাসার বাইরে ছিলেন। স্ত্রী আয়েশা মার্কেটে এবং ছেলে আজিজ কোচিংয়ে যায়। বাসায় ফিরে তারা দরজায় তালা দেখেন। পরে তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে হাসানের গলাকাটা লাশ দেখতে পায়। বাসার ভিতরে সব আসবাবপত্র ভাঙা ছিল। পরে দেখা যায় বাসা থেকে আনুমানিক ৮৫ হাজার টাকা ও ৮/৯ ভরি স্বর্ণালংকার খোয়া গেছে। ওয়ারী থানার ওসি আজিজুর রহমান বলেন, শিশু হত্যার ঘটনায় এক যুবককে আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিষয়ে জানতে পেরেছি। তাদেরও আটকের চেষ্টা চলছে। অন্তত দুজন নিকটাত্মীয় ওই বাসায় চুরি করতে যায়। তাদের চিনে ফেলায় তারা হাসানকে খুন করে টাকা-পয়সা নিয়ে পালিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাসায় যাতায়াত রয়েছে এমন কেউ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। অপরদিকে নিহত শাকিলের বাবা জসিম গাজী জানান, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শাকিলের কয়েক বন্ধু বাসা থেকে তাকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে বনানী স্টার কাবাবের সামনে তাকে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে। আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় চারজনের নাম উল্লেখ করে তিনি বনানী থানায় একটি মামলা করেন। জানা গেছে, শাকিলের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার বরুড়া থানার ব্রাহ্মণ বাজারে। বর্তমানে বনানী কড়াইল বস্তি এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকত। সেখানে পাঠশালা বিদ্যালয় নামে একটি এনজিও স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করত শাকিল। তার বাবা জসিম গাজী স্থানীয় সেলুন দোকানি। দুই ভাইয়ের মধ্যে সে ছোট। লাশের ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে পাঠানো হয়। বনানী থানার ওসি মোহাম্মদ নুরে আযম মিয়া বলেন, এ ঘটনায় জড়িত চার কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিহত শাকিল গ্রেফতারকৃতদের আগে দুবার মারধর করেছিল। তাই তারাও শাকিলকে মারধর করার পরিকল্পনা করতে থাকে। গত বুধবার সন্ধ্যায় শাকিলকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। গ্রেফতার চারজনের বয়স ১৩-১৪ বছর। গতকাল চারজনের মধ্যে তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এদিকে, মোহাম্মদপুর থানার ওসি মো. আবদুল লতিফ বলেন, গত বুধবার রাতে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের ১২/১২ বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে অজ্ঞাত এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

 নিহতের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মৃত্যুর কারণও জানা যায়নি। লাশের ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ ছাড়া ওই নারীর পরিচয় শনাক্তে কাজ চলছে।

সর্বশেষ খবর