শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

হিমায়িত খাদ্যের বাড়ছে চাহিদা

জিন্নাতুন নূর

হিমায়িত খাদ্যের বাড়ছে চাহিদা

দেশ-বিদেশে ক্রমেই বাংলাদেশি হিমায়িত খাবারের চাহিদা বাড়ছে। দ্রুত বদলে যাওয়া শহুরে জীবন, মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা, কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, কর্মব্যস্ততা, খাবারের স্বাদে বৈচিত্র্য আসা, একক পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে এসব খাদ্যের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু দেশের স্থানীয় বাজারে প্রতি বছর ৪০০ কোটি টাকার হিমায়িত খাবার বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি বছর বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ থেকে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার হিমায়িত মাছজাতীয় খাবার রপ্তানি করা হচ্ছে। এর বাইরে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশে তৈরি অন্য হিমায়িত খাবারের চাহিদাও বাড়ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশ-বিদেশে বাংলাদেশি হিমায়িত খাবারের জনপ্রিয়তা এক নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে।

প্রতি বছর হিমায়িত খাদ্যের ব্যবসা ২৫ শতাংশ করে বৃদ্ধি পেলেও করোনাকালে তা ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। জানা যায়, বিশ্বে হিমায়িত খাদ্যের বাজার ১৫ থেকে ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। এর মধ্যে বাংলাদেশের বাজারমূল্য ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার হিমায়িত মাছ রপ্তানি করা হচ্ছে। এর মধ্যে চিংড়ি, সামুদ্রিক মাছ ও চাষের মাছ আছে। তবে বিশ্ববাজারে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ বর্তমানে মাত্র ২ শতাংশ পণ্য রপ্তানি করতে পারছে। কারণ দেশীয় বাজারের চাহিদা মেটানোর পরই তা বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। মোট রপ্তানির ৭৩.৪ শতাংশ হিমায়িত চিংড়ি। জাপান, ইউকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দিন দিন চিংড়ির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। চিংড়ি ছাড়াও প্রক্রিয়াজাত বিভিন্ন খাবার যেমন- নদীর শুকনো ও হিমায়িত মাছ রপ্তানি হচ্ছে। দেশে মূলত ১২টি কোম্পানি ¯œ্যাকস জাতীয় হিমায়িত খাবারের ব্যবসা করছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এই কোম্পানিগুলো বিদেশেও খাবার রপ্তানি করছে। হিমায়িত খাদ্য তৈরির ব্যবসায় জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- গোল্ডেন হার্ভেস্ট এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লি., প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ লি., এজি ফুড লি., ফ্রোজেন ফুড লি., বিডি সিফুড লি., কাজী ফার্মস গ্রুপ ইত্যাদি। সাধারণত হিমায়িত খাবারের মধ্যে আছে রেডি টু ইট, রেডি টু কুক, রেডি টু ড্রিংকসহ বিভিন্ন হিমায়িত পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত করা খাবার। হিমায়িত খাদ্যের মধ্যে মাছ ছাড়া আরও আছে হিমায়িত ফল ও সবজি, রান্না করা হিমায়িত খাবার, হিমায়িত মিষ্টান্ন, হিমায়িত ¯œ্যাকস। সাধারণত দেশে সুপার মার্র্কেট, বড় জেনারেল স্টোর, অনলাইনে এসব খাবার বিক্রি হয়। মূলত অনলাইন থেকে সহজেই অর্ডার করার সুবিধা থাকায় মহামারীতে হিমায়িত খাদ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। বেসরকারি এনজিওর কর্মকর্তা সাবরিনা নাজনীন বলেন, কর্মজীবী মা হওয়ায় আমার সন্তানদের বিকালের নাস্তায় ঝটপট কিছু তৈরি করে দিতে হিমায়িত খাবারের বিকল্প নেই। কম সময়ে তৈরি করার পাশাপাশি সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রি হওয়া এসব হিমায়িত খাবার আমার বাচ্চাদেরও বেশ পছন্দের। গোল্ডেন হার্ভেস্টের অ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজার (করপোরেট সেলস) এ  কে এম আবদুল্লাহ আল মনসুর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনা সংক্রমণের কারণে গত ২০২০ সালে হিমায়িত খাবারের বিক্রি ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজধানীর বাইরে এবং অন্য শহরগুলোতে চট্টগ্রাম, খুলনা, কুমিল্লায় হিমায়িত খাবারের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদেশেও আমাদের হিমায়িত খাবারের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। হিমায়িত খাবারের মধ্যে ভেজিটেবল জাতীয় খাবার ও পরোটা রপ্তানি হচ্ছে। গোল্ডেন হার্ভেস্ট কর্তৃপক্ষ এখন এক থেকে দেড় কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করছে। কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে এই খাবার রপ্তানি করা হচ্ছে। বর্তমানে ১৯ থেকে ২০টি হিমায়িত খাবার রপ্তানি করছে গোল্ডেন হার্ভেস্ট। বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃপক্ষ জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ হিমায়িত চিংড়িসহ অন্যান্য হিমায়িত মাছ জাতীয় খাবারগুলো ইউকে, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, জার্মানি, ইন্ডিয়া, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, চীন, পর্তুগালে রপ্তানি করছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৪৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রপ্তানি করা হয়। বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি  শেখ সোহেল পারভেজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হিমায়িত খাদ্যের মধ্যে আমরা মাছ রপ্তানি করি। এর একটি চিংড়ি আর বাকিগুলো অন্য প্রজাতির মাছ। আমাদের রপ্তানি করা ৯০ শতাংশ পণ্যই চিংড়ি। এগুলো রেডি টু কুক বা রেডি টু ইট জাতীয় পণ্য। আমাদের মূল বাজার হচ্ছে এখন ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। আশা করছি পাইকগাছায় শিগগিরই ভেনামি চিংড়ির উৎপাদন শুরু হবে তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও এই চিংড়ি রপ্তানি করা যাবে। আমাদের যে কারখানাগুলো আছে তা আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই পণ্য রপ্তানি করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইন্সপেকশন টিম এসে কারখানাগুলোর উৎপাদিত মাছ পরীক্ষা করে যায়। মৎস্য অধিদফতর থেকেও আমাদের লাইসেন্স প্রতিবছর নবায়ন করা হয়।

সর্বশেষ খবর