সোমবার, ১ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

শিল্পকলায় পিঠা উৎসব

মোস্তফা মতিহার

শিল্পকলায় পিঠা উৎসব

হিমেল পরশের সঙ্গে পিঠা-পুলির স্বাদ অনন্য করে তোলে শীতের সকালকে। যার কারণে শীত এলেই আবহমান বাংলার ঘরে ঘরে পিঠা বানানো, খাওয়ানো ও খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। কিন্তু চিরায়ত বাংলার এই লোকজ সংস্কৃতি থেকে বঞ্চিত ইটকাঠের যান্ত্রিক এই নগরীর বাসিন্দারা। রাজধানীর বাসিন্দাদের পিঠা-পুলির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে গ্রামীণ এ ঐতিহ্যকে তুলে ধরার লক্ষ্যে ১৪ বছর ধরে পিঠা উৎসবের আয়োজন হচ্ছে শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে। এবারও শুরু হয়েছে জাতীয় পিঠা উৎসব। তবে, করোনার কারণে শীতের উৎসব এসে ঠেকেছে বসন্তের দিনে। শিল্পকলা একাডেমি ও জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদের যৌথ আয়োজনে ২৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছে ১০ দিনের এই উৎসব। গতকাল ছিল উৎসবের ষষ্ঠ দিন। এদিন বিকাল থেকে উৎসব প্রাঙ্গণ মুখরিত ছিল পিঠাপ্রেমীদের ভিড়ে। বিকালের সেই মুখরতা সন্ধ্যায় উৎসবমুখর পরিবেশে রূপ নেয়। পিঠা কেনা, খাওয়া ও স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেদেরকে মোবাইলের ক্যামেরায় বন্দী করে রাখতে ব্যস্ত ছিল আগত দর্শনার্থীরা। মাঠজুড়ে সাজানো স্টলে স্টলে পিঠা বিকিকিনি ও খাওয়ার পাশাপাশি কফি হাউসের মুক্তমঞ্চে চলছে নাচ, গান, নাটক, আবৃত্তিসহ নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম। পিঠা উৎসবে কথা হয় মোহাম্মদপুর থেকে আসা আমিনা অবন্তীর সঙ্গে। তিনি জানান, রাজধানীতে এমন একটি উৎসব নিঃসন্দেহে অনেক বেশি দরকার। যান্ত্রিক ও ব্যস্ত এই মহানগরীতে আমরা যখন নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে হাঁফিয়ে উঠেছি, তখন এই ধরনের একটি উৎসব কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দেয়। গ্রামীণ পিঠা-পুলির স্বাদ নিতে পারছি। উৎসব প্রাঙ্গণে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড থাকাতে আয়োজনটি অনেক প্রাণবন্ত লাগছে। দুই শতাধিক রকমের পিঠা দিয়ে সাজানো এই উৎসবের উল্লেখযোগ্য পিঠার মধ্যে রয়েছে- ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, ঝাল পিঠা, মালপোয়া, মেড়া পিঠা, মালাই পিঠা, মুঠি পিঠা, আন্দশা, কুলশি, কাটা পিঠা, কলা পিঠা, খেজুরের পিঠা, ক্ষীর কুলি, গোকুল পিঠা, গোলাপ ফুল পিঠা, লবঙ্গ লতিকা, রসফুল পিঠা, সুন্দরী পাকান, সরভাজা, পুলি পিঠা, পাতা পিঠা, পাটিসাপটা, পাকান পিঠা, নারিকেলের সেদ্ধ পুলি, নারিকেল জিলাপি, তেজপাতা পিঠা, তেলের পিঠা, তেলপোয়া পিঠা, চাঁদ পাকান পিঠা, ছিট পিঠা, পানতোয়া, জামদানি পিঠা, হাঁড়ি পিঠা, ঝালপোয়া পিঠা, ঝুরি পিঠা, ছাঁচ পিঠা, ছিটকা পিঠা, চিতই পিঠা, দুধ চিতই, বিবিখানা, চুটকি পিঠা, চাপড়ি পিঠা, ঝিনুক পিঠা, সূর্যমুখী পিঠা, ফুল পিঠা, বিবিয়ানা পিঠা, সেমাই পিঠা, নকশি পিঠা, নারিকেল পিঠা, নারিকেলের ভাজা পুলি, দুধরাজ, ফুলঝুরি পিঠা ইত্যাদি। জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শাহ আলম জানান, প্রায় ৫০টি স্টল দিয়ে বিন্যস্ত করা হয়েছে এবারের উৎসব প্রাঙ্গণ। আর এই স্টলগুলোতে শোভা পাচ্ছে দেশের ৪০টির মতো জেলার প্রায় ২০০ রকমের পিঠা। স্বাদ, নকশা, রং ও বৈচিত্র্যময়তায় একটি পিঠা থেকে আরেকটি পিঠা একেবারেই ভিন্নধারার। তিনি বলেন, পিঠার এই উৎসবটা যেন শুধু কেনা ও খাওয়ার উৎসব না হয়, সে জন্য উৎসব প্রাঙ্গণের মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৪ মার্চ শেষ হবে ১০ দিনের এই পিঠা উৎসব। সমাপনী দিনে পাঁচজন সেরা পিঠাশিল্পীকে পুরস্কৃত করবেন আয়োজকরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর