বৃহস্পতিবার, ৪ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

মামলা তদন্তে বছরের পর বছর

সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

বছরের পর বছর ধরে তদন্তের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে চট্টগ্রামের কিছু আলোচিত হত্যা মামলার তদন্ত। এসব মামলার তদন্ত দীর্ঘকাল অতিবাহিত হয়ে গেলেও উন্মোচন হয়নি খুনের আসল রহস্য। গ্রেফতার হয়নি ঘটনার মাস্টারমাইন্ড। মামলার তদন্ত দীর্ঘায়িত হওয়ায় তদন্ত সংস্থার দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা। অপরাধবিজ্ঞানী ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির যুগে কোনো ঘটনার রহস্য উন্মোচন কিংবা আসামিদের চিহ্নিত করা কঠিন কাজ নয়। তদন্ত সংস্থা আন্তরিক হলে অল্প সময়ের মধ্যে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে রহস্য উন্মোচন সম্ভব। তদন্ত দীর্ঘায়িত হওয়ার অর্থই হচ্ছে তাদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা। তদন্ত দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’ মানবাধিকার নেতা ও চট্টগ্রাম বারের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান বলেন, ‘তদন্ত ধীরগতিতে হওয়ার কারণে অনেক সময় ঘটনার সাক্ষী ও আলামত নষ্ট হয়ে যায়। এতে করে অনেক আসামিকে বিচারের আওতায় আনা যায় না। ঘটনার সুষ্ঠু বিচারে নিশ্চিত প্রয়োজন দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করা।’ জানা যায়, ২০১৬ সালের ৫ জুন নগরীর জিইসির মোড় এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আকতারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে। এ খুনের পর দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। অল্প সময়ের মধ্যে কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া কয়েকজন গ্রেফতার এবং বন্দুকযুদ্ধে দুজন নিহত হন। কিন্তু একসময় থমকে যায় মামলার তদন্ত। প্রায় পাঁচ বছরে গ্রেফতার করা হয়নি প্রধান সন্দেহভাজন মুছা সিকদার ও কালুকে। উন্মোচিত হয়নি আসল রহস্য। দীর্ঘ এ সময় ধরে চলছে এর তদন্ত। চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ হয়ে বর্তমানে মামলার তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সর্বশেষ ২ ডিসেম্বর মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার তদন্তের অগ্রগতি দাখিল করে উচ্চ আদালতে সময় বৃদ্ধির আবেদন করে মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআই। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৬ মে পর্যন্ত আদালত সময় দিয়েছে তদন্ত সংস্থাকে। মামলার বর্তমান অগ্রগতি নিয়ে তদন্ত সংস্থা পিবিআইর পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে খুনের মূল রহস্য উন্মোচনের জন্য কাজ শুরু করা হয়েছে। তদন্তের বেশ অগ্রগতি হয়েছে। আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে চার্জশিট দিতে পারব।’ অন্যদিকে ২০১৮ সালের ১ আগস্ট নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন ফরিদার পাড়া এলাকায় নিজ বাসায় খুন হন আইনজীবীপত্নী বিবি রহিমা। আলোচিত এ হত্যাকান্ডের পর আড়াই বছর অতিক্রম হলেও এখনো কিনারা হয়নি রহস্যের। এমনকি গ্রেফতার হয়নি কোনো             আসামি। মামলাটি থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ হয়ে পিবিআইর কাছে ন্যস্ত হয়েছে তদন্ত। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর        পরিদর্শক মোহাম্মদ আনোয়ার উল্লাহ বলেন, ‘এ মামলার উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই। আসামিদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’

এর আগে ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি নগরীর পাঁচলাইশ থানার চকবাজার এলাকার নিজ বাসার গলির মুখে খুন হন চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজের শিক্ষিকা অঞ্জলী রানী দেবী। দেশব্যাপী তোলপাড় করা এ হত্যাকান্ডের ছয় বছরেও উন্মোচিত হয়নি রহস্য। এমনকি গ্রেফতার হয়নি কোনো আসামি। থানা পুলিশ হয়ে বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এদিকে ২০১৯ সালের ২৬ আগস্ট কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুন হন স্কুলছাত্র জাকির হোসেন ওরফে সানী। এ ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেফতার করা হলেও এখনো উন্মোচন করা যায়নি খুনের আসল রহস্য। থানা পুলিশ হয়ে বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) মুখপাত্র ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, ‘অঞ্জলী রানী দেবী ও সানী হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচনে সর্বাত্মক কাজ করছে গোয়েন্দা পুলিশ। আশা করছি অচিরেই রহস্য উন্মোচন করে চার্জশিট দেওয়া হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর