রবিবার, ৭ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

নওগাঁয় ঐতিহ্যের লাঠিখেলা

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

নওগাঁয় ঐতিহ্যের লাঠিখেলা

সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা। একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা, বাদ্যের তালে তালে চলছে লাঠিয়ালদের নাচ ও খেলা। আত্রাইয়ের মারিয়া গ্রামে রাতোয়াল, দিঘা ও বাগমারাসহ তিনটি লাঠিখেলার দল এ খেলায় অংশ নেয়। বাহারি ধরনের  পোশাক পরা লাঠিয়ালরা নেচে-গেয়ে নানা ধরনের শারীরিক কসরত প্রদর্শন করেন।

গ্রামে খেলার মাঠ না থাকায় একটি জমিতে এর আয়োজন করা হয়। প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা আর প্রতিপক্ষকে কাবু করায় আনন্দ লাঠিয়াল আর দর্শকদের। তবে বাদ্যের তালে তালে যারা নেচে-গেয়ে দর্শকের মনে আনন্দ জোগান তাদের জীবন-জীবিকা আজ সংকটাপূর্ণ।

গতকাল দুপুরে এ খেলা উপলক্ষে বসে গ্রামীণ মেলা। বাহারি  দোকানপাটের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন দোকানিরা। শিশু, নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ, পরিবার-পরিজন নিয়ে গোল হয়ে উপভোগ করেন খেলা। গ্রামবাংলা  থেকে বিলুপ্তপ্রায় এ খেলা বেশি করে আয়োজন করা হলে সমাজে বিভিন্ন ধরনের অপরাধপ্রবণতা কমার পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ে উঠবে। আত্রাই উপজেলার মারিয়া গ্রামে স্থানীয় একটি এনজিওর আয়োজনে আট বছর ধরে গ্রামবাংলা থেকে প্রায় বিলুপ্ত লাঠিখেলা, ঢেঁকি, শরীরের ওপর একাধিক ব্যক্তি উঠে দাঁড়ানো, খেজুর গাছে ওঠা, কলসি ভর্তি পানি দাঁত দিয়ে তোলাসহ বিভিন্ন খেলার আয়োজন করা হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন হেলাল জানান, গ্রামীণ খেলায় সরকারিভাবে সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। আগামীতেও এই গ্রামীণ খেলাগুলো ধরে রাখতে সব সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হবে। দর্শক মরিয়ম বেগম জানান, আমরা এই খেলাগুলো ভুলে গিয়েছিলাম। খুব ভালো লেগেছে। খেলায় অংশ নেওয়া লাঠিয়াল আমজাদ হোসেন, কবির শেখসহ অন্যরা জানান, গ্রামবাংলার সংস্কৃতির অন্যতম বিনোদনের নাম লাঠিখেলা।

তবে গ্রামীণ এলাকার সংস্কৃতির ধারক এই খেলা আজ বিলুপ্তির পথে। বংশপরম্পরায় এই ঐহিত্যবাহী খেলা শিখেছেন। এই খেলা ধরে রাখতে তাদের পরিবর্তী প্রজন্মকেও শিখিয়েছেন। স্থানীয় প্রবীণ শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান জানান, আগে এই খেলাগুলো প্রতি বছর বিভিন্ন গ্রামে অনুষ্ঠিত হতো। দেশে মাদক, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, বাল্যবিবাহ, কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে প্রায় বিলুপ্ত গ্রামবাংলার এ খেলাগুলো বেশি করে আয়োজনে সরকারি ও বেসরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা প্রয়োজন। মারিয়া গ্রামে পূর্ণিমা পল্লী উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক এস এম হাসান সেন্টু জানান, সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে গ্রামবাংলার বিলুপ্তপ্রায় এই খেলাগুলো আরও বেশি করে আয়োজন সম্ভব।

সর্বশেষ খবর