সোমবার, ৮ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

ইতিহাসকে মুছে ফেলা যায় না

৭ মার্চের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইতিহাসকে মুছে ফেলা যায় না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে গতকাল ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মোনাজাতে অংশ নেন -পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণটা নিষিদ্ধ ছিল। এ ভাষণ বাজানো যাবে না। অলিখিত একটা নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। কিন্তু ইতিহাসকে এত সহজে মুছে ফেলা যায় না।

গতকাল বিকালে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ২০২১’ উদযাপন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণটি প্রদর্শন করা হয়। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রান্তে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মুজিববর্ষ উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব বদরুল আরেফীন। পরে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত থেকে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার সংগ্রাম বা যুদ্ধটা যে স্বাধীনতার যুদ্ধ হবে, সেই কথাটা কিন্তু বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণেই স্পষ্ট বলে গেছেন। কাজেই এটা একদিক দিয়ে বলতে গেলে ৭ মার্চই         তো প্রকৃত স্বাধীনতার ঘোষণা। তিনি বলেন, সত্যকে কখনো দাবিয়ে রাখা যায় না। আর বাঙালিকে দাবায়ে রাখা যায় না, এটা তো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই বলে গেছেন তাঁর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে। তাই দাবায়ে রাখতে পারে নাই। তিনি বলেন,  আজকে সত্য উদ্ভাসিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ বিশ্ব স্বীকৃতি যেমন পেয়েছে, তেমনি জাতিসংঘের প্রতিটি ভাষায় এই ভাষণটা অনুবাদ করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়েই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালি জাতি আজকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। ইনশা আল্লাহ, জাতির পিতার স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষা আমরা পূরণ করব। বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তি পাবে। সেই মুক্তির পথে আমরা অনেক দূরে এগিয়ে গেছি। তিনি বলেন, জাতিসংঘের প্রতিটি ভাষায় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণটা অনুবাদ প্রচার করা হচ্ছে। ইউনেস্কো সেই পদক্ষেপটা নিয়েছে। প্যারিসে আমাদের রাষ্ট্রদূত এটা জানিয়েছেন। ৭ মার্চের ভাষণের পটভূমি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি জাতির জন্য বঙ্গবন্ধু শুধু রণকৌশলই দিয়ে যাননি, তিনি নিজের জীবনটাকেও উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন। তিনি বলতেন, যা কিছু হোক দেশ স্বাধীন হবেই। শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে না, যুদ্ধের রণকৌশলে তাঁর এই ঐতিহাসিক বক্তৃতা কত যে কার্যকর এবং তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ যে কত বাস্তবমুখী সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট বাঙালির জীবনে একটা কালো অধ্যায় হিসেবে এসেছে। কারণ যারা পরাজিত হয়েছিল তারা বসে ছিল না। তারা সর্বক্ষণ ষড়যন্ত্রেই ব্যস্ত ছিল। তাই যখন একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে অর্থনৈতিক মুক্তির পথে জাতির পিতা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, সেই সময় ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে বাঙালির জন্য জাতির পিতা নিজের জীবনটাকেও উৎসর্গ করেছেন, যে বাঙালির জন্য সারা জীবনের সব স্বাদ-আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছিলেন, দিনের পর দিন কারাগারের অন্তরালে নির্যাতন ভোগ করেছেন, যে বাঙালিকে আত্মপরিচয়ের সুযোগ দিয়ে গেছেন, একটা রাষ্ট্র দিয়ে গেছেন, একটা জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন- কী দুর্ভাগ্য যে তাদের (বাঙালি) হাতেই বঙ্গবন্ধুকে জীবন দিতে হলো। শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই নন, গোটা পরিবারকে হত্যা করা হলো। আমরা দুই বোন বিদেশে ছিলাম বলে বেঁচে ছিলাম।

দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে আমরা দেখে যেতে পারলাম যে, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ আজ বিশ্বস্বীকৃতি পেয়েছে এবং বাংলাদেশের মানুষও আজকে এটা শুনতে পাচ্ছে, জানতে পারছে, চর্চা করতে পারছে আর আগ্রহ বাড়ছে। এর অন্তর্নিহিত অর্থ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। এখানেই তো সব থেকে বড় সাফল্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ভাষণের ভিতরে আপনারা তিনটা স্তর পাবেন। একটা ঐতিহাসিক পটভূমি আছে যে বাঙালির বঞ্চনার ইতিহাস, অত্যাচার-নির্যাতনের ইতিহাস, তখনকার বর্তমান অবস্থাটা এবং কীভাবে সেই পাকিস্তানি সামরিক জান্তারা গুলি করে মানুষকে হত্যা করেছে, কীভাবে মানুষ ভোট দিয়েছে। তাদের সেই অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করছে, সেই বঞ্চনার ইতিহাসও। সেই তখনকার নির্যাতনের ইতিহাস বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই ভাষণের মধ্য দিয়ে তিনি (বঙ্গবন্ধু) একটা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার সকল নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। কারণ একটা গেরিলা যুদ্ধ হবে এবং সেই গেরিলা যুদ্ধ হতে হলে কী কী করতে হবে, সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলা থেকে শুরু করে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে বলেছেন বঙ্গবন্ধু।

ঐতিহাসিক সেই প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এটাও জানতেন, যেই মুহূর্তে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণাটা অফিশিয়াল দেবেন, সেই মুহূর্তে হয়তো তিনি বেঁচে নাও থাকতে পারেন। সেজন্য তাঁর এই ঐতিহাসিক ভাষণের ভিতরেই কিন্তু তিনি স্বাধীনতার ঘোষণাটা দিয়ে গেলেন। তিনি বলে গেলেন যে, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তিনি বলেন, ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু দু-দুবার করে এ কথা বলেছেন এবং ভাষণের শেষে সব থেকে জোর দিয়ে বলেছেন। অর্থাৎ এটা যে স্বাধীনতার সংগ্রাম আর এই যুদ্ধটা যে স্বাধীনতা যুদ্ধ হবে- সে কথাটাই কিন্তু বঙ্গবন্ধু স্পষ্ট বলে গেছেন। কাজেই এটা একদিক দিয়ে বলতে গেলে ৭ মার্চের ভাষণই তো প্রকৃত স্বাধীনতার ঘোষণা। এই ঘোষণার পর থেকে পূর্ববঙ্গ কীভাবে চলবে জাতির পিতা সেই নির্দেশনাও দিয়েছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ মার্চ কোনো লিখিত ভাষণ ছিল না। জাতির পিতা তাঁর জীবনের সমস্ত সংগ্রামের যেই অভিজ্ঞতা এবং তাঁর বাঙালি জাতিকে নিয়ে যেই লক্ষ্য, সেই লক্ষ্য স্থির করেই কিন্তু তিনি এই ভাষণটা দিয়েছিলেন। আর এই পরামর্শটা আমার মা-ই (বঙ্গমাতা) দিয়েছিলেন। জাতির পিতা ৭ মার্চের ভাষণ দেওয়ার আগে অনেকের অনেক ধরনের পরামর্শ ছিল, যা ছাত্র সংগ্রাম ও আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকায় শেখ হাসিনা জানতেন বলেও তিনি অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তখন আমাদের ছাত্রনেতাদের অনেকে, বিশেষ করে নাম বলতে আপত্তি নেই যেমন- সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদসহ অনেক ছাত্রনেতা ৩২ নম্বরে এসেছেন। সিরাজুল আলম খান বারবার জানাতে চাইছিল যে, আজকে স্বাধীনতার ঘোষণাটা দিতেই হবে। সেই সময় অনেক বুদ্ধিজীবী লিখতেন, পয়েন্ট দিয়ে যেতেন আবার কেউ পরামর্শ দিয়ে যেতেন বঙ্গবন্ধুকে, কী করে বলতে হবে বা কী বলতে হবে। সিরাজুল আলম খান যখন এই কথাগুলো বঙ্গবন্ধুকে বলেন, তখন বঙ্গবন্ধু তাকে একটি কথা বলেছিলেন, যা আমার কানে এখনো বাজে। ‘...কী করতে হবে আমি জানি। তোমরা তোমাদের কাজ করে যাও।’ ঠিক সিঁড়ির গোড়ায় এই কথাটা বলে বঙ্গবন্ধু ঘরে ফিরে আসেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে অর্থাৎ সংগ্রাম ও আন্দোলনের ক্ষেত্রেও একটা পরিমিতিবোধ কিন্তু থাকতে হয়। ৭ মার্চের ভাষণ বঙ্গবন্ধু যখন দিতে যাবেন, তখন আমার মায়ের একটাই পরামর্শ ছিল। বঙ্গবন্ধুকে ডেকে আমার মা বলেছিলেন, ‘সারাটা জীবন সংগ্রাম করেছো তুমি। তোমার মনে যেই কথা আছে, তুমি ঠিক সেই কথাটাই বলবে। কারও কথা শুনবার তোমার প্রয়োজন নাই।’ বঙ্গবন্ধু ঠিক সেভাবেই সম্পূর্ণ অলিখিত এক ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে প্রকারান্তরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার সংগ্রাম বা যুদ্ধটা যে স্বাধীনতা যুদ্ধ হবে, সেই কথাটা কিন্তু বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে স্পষ্ট বলে গেছেন। কাজেই ৭ মার্চ তো প্রকৃত স্বাধীনতার ঘোষণা। এরপর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যে নির্দেশনা দিতেন, সেই নির্দেশনায়ই দেশ চলত। সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তখন ওই ৩২ নম্বরে।

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালিত : যথাযথ মর্যাদায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ৫০তম বার্ষিকী দিবস পালিত হয়েছে। এবারই প্রথম দিনটি জাতীয় দিবস হিসেবে উদ্যাপিত হলো। সরকারিভাবে নানা কর্মসূচির পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন দিনটি উপলক্ষে কর্মসূচির আয়োজন করে। এর মধ্যে ছিল- বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা, আবৃত্তি ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, দুস্থদের মাঝে খাদ্য বিতরণ, দোয়া ইত্যাদি। এসব কর্মসূচিতে মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষে সব অপশক্তিকে পরাজিত করে মুক্তিযুদ্ধের ভাবাদর্শে ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক সুখী-সমৃদ্ধ, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।  দিনটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনসহ দেশব্যাপী সব দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করে। ভোর সাড়ে ৬টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন ও আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকালে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করে আওয়ামী ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন। সকাল ৯টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারপ্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। জাতির পিতার ছোট কন্যা এবং প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এরপর দুই বোন পিতা-মাতাসহ শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন। পরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। দিবসটি উপলক্ষে গতকাল ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয় এবং সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায়। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা মিছিল করে ৩২ নম্বর সড়কের পূর্ব ও পশ্চিম পাশের মোড়ে জমায়েত হতে থাকে। সকাল ৯টার মধ্যেই সর্বস্তরের মানুষের ভিড়ে পূর্ণ হয়ে যায় ৩২ নম্বর সড়ক ও আশপাশের এলাকা। হাজার হাজার নারী-পুরুষ বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে দলের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর কেন্দ্রীয় ১৪ দল, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণসহ দলের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী-সমর্থক এবং সর্বস্তরের মানুষ সারিবদ্ধভাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন। এ ছাড়াও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, আওয়ামী যুবলীগ, বাংলাদেশ কৃষক লীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, বাংলাদেশ তাঁতী লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগের নেতা ও কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন ছাড়াও বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, শেখ রাসেল শিশু সংঘ, আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন শ্রমিক কর্মচারী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ, আওয়ামী শিল্পী গোষ্ঠী, ঢাকা আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ আওয়ামী যুব আইনজীবী পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানায়।

এদিকে এবারই প্রথমবারের মতো জাতীয় দিবস হিসেবে উদ্যাপন করা হয় ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। এ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান এবং দেশব্যাপী জেলা-উপেজলায় ব্যাপক কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ কর্তৃক একটি স্যুভেনির শিট ও উদ্বোধনী খাম অবমুক্ত করা হয়।

এ ছাড়া ঐতিহাসিক ৭ মার্চ জাতীয় দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে সব অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ৭ মার্চে প্রদত্ত ভাষণ নির্দিষ্ট সময় প্রচার করা হয়। গণপূর্ত অধিদফতর প্রতিবারের মতো এবারও গুরুত্বপূর্ণ সড়কদ্বীপ সজ্জিত করে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজন করা হয় আতশবাজির। এ ছাড়াও গতকাল সারা দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালিত হয়েছে। 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর