সোমবার, ৮ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

তিস্তার চরে সম্ভাবনাময় সূর্যমুখী

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

তিস্তার চরে সম্ভাবনাময় সূর্যমুখী

তিস্তা বৈচিত্র্যময়। বর্ষায় এ নদীর মিলিত বান ভাসিয়ে নেয় জেলার বিস্তীর্ণ প্রান্তর। বর্ষা শেষে জমে থাকা পলি কৃষিজমিকে করে তোলে উর্বর। জেলার কৃষি খাতে তিস্তার চর একদিকে যেমন চ্যালেঞ্জের জন্ম দিয়েছে, অন্যদিকে দিয়েছে সম্ভাবনার হাতছানি। চরের জমির কার্যকর ও পরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে স্থানীয় কৃষকদের আয় বাড়ানো সম্ভব। এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের চরাঞ্চলের পতিত জমিতে সূর্যমুখী চাষে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। সূর্যমুখী চাষের ব্যাপক প্রসার ও সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা সম্ভব হলে এতে বদলে যেতে পারে অবহেলিত চরগুলোর দৃশ্য। এবারের মৌসুমে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় চরের ধু-ধু  জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন কৃষক মনির মিয়া। সরকারিভাবে বীজ ও সার সহায়তা দেওয়া হয়েছে তাকে। কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তিনি হাতে-কলমে সূর্যমুখীর চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এরপর চার শতক জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন মনির মিয়া। পাচ্ছেন প্রয়োজনীয় পরামর্শ। ফলে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে চরের জমিতে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ বাড়তে শুরু করেছে। কৃষক মনির মিয়া বলেন, ‘তিস্তা নদীর রুদ্রেশ্বর চরে এ বছর ৪ শতক জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। সহায়তা ও পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। সূর্যমুখীর বাণিজ্যিক চাষ নিয়ে কোনো ধারণা ছিল না। আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের সহযোগিতায় চরের পতিত জমিতে চাষ শুরু করি। শুরুর দিকে চিন্তায় ছিলাম। মনে হয়েছিল, আর্থিকভাবে লোকসানে পড়ব। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। এখন জমিজুড়ে হলুদ সূর্যমুখী ফুল দেখে মন ভরে গেছে। আশা করছি, বিক্রি করে মুনাফা ঘরে তুলতে পারব। এবার লাভ হলে পরবর্তী সময়ে আরও বেশি বীজ বপন করব।’ তিনি বলেন, হারভেস্ট মেশিন ছাড়া সূর্যমুখী বীজ সংগ্রহ করতে সমস্যা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকিমূল্যে হারভেস্ট মেশিন সরবরাহ করা হলে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সহজ হবে। একই সঙ্গে সূর্যমুখী বীজের বাজারমূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হলে প্রান্তিক কৃষকদের লাভ হবে। স্থানীয় অনেকেই জানালেন, রুদ্রেশ্বর চরে এসব আগে কোনো দিন দেখননি তারা। এবার প্রথম আনু মিয়াকে চাষ করতে দেখলেন। তার ফসল ভালো হলে পরবর্তী সময়ে সূর্যমুখী চাষে সিদ্ধান্ত নেবেন তারা। স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, চরের জমির উর্বরতা ও আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষের জন্য উপযুক্ত। এ সুবিধা কাজে লাগিয়ে চরাঞ্চলে সহজেই ফসলটির বাণিজ্যিক আবাদ বাড়ানো সম্ভব। এ জন্য উন্নত মানের বীজের নিশ্চয়তা দিতে হবে। বাজারব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তবেই চরাঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক হারে সূর্যমুখীর বাণিজ্যিক চাষ বাড়ানো সম্ভব হবে। এ বিষয়ে স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, সূর্যমুখীর বাণিজ্যিক চাষ তিস্তা চরের চেহারা বদলে দিতে পারে। এ সম্ভাবনা বাস্তবে রূপ দিতে সরকারের পক্ষ থেকে স্থানীয় কৃষকদের ফসলটি চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এক কেজি সূর্যমুখী বীজ থেকে আধা লিটার ভোজ্য তেল উৎপাদন করা যায়। আশা করা হচ্ছে, মনির মিয়ার কার্যক্রম দেখে এখানকার কৃষকরা সূর্যমুখী চাষে পদক্ষেপ নেবেন। বদলে যাবে চরের চেহারা। লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, এ জেলার তিস্তা-ধরলায় ৬৩টি চর রয়েছে । চরের জমি উর্বর হওয়ায় প্রতিবছর বাড়ছে সূর্যমুখীর চাষাবাদ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর