বৃহস্পতিবার, ১১ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

পরিত্যক্ত কলাগাছ থেকে সুতা

জামান আখতার, চুয়াডাঙ্গা

পরিত্যক্ত কলাগাছ থেকে সুতা

ফল সংগ্রহের পর যে কলাগাছ এতদিন ফেলে দেওয়া হতো, সেই গাছ থেকে তৈরি হচ্ছে উন্নতমানের সুতা। এসব সুতা দিয়ে বিভিন্ন হস্তশিল্পের উপকরণ তৈরি হবে- দাবি উদ্যোক্তাদের। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার দুই তরুণ উদ্যোক্তা কলাগাছের সুতা তৈরির উদ্যোগ নিয়ে এলাকায় সাড়া ফেলে দিয়েছেন। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তির বিদ্যুৎচালিত মেশিন ব্যবহারের মাধ্যমে সুতা উৎপাদন করছেন তারা। দামুড়হুদা উপজেলার দেউলি গ্রামের আবু সাঈদ ও তার বন্ধু পাটাচোরা গ্রামের সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কর্ম জীবনের সফলতার আশায় দুই বন্ধু প্রায়ই নানা পরিকল্পনা করতেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিফল হতেন তারা। একপর্যায়ে ইউটিউবের একটি ভিডিও তাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ফেলে দেওয়া কলাগাছ থেকে সুতা তৈরির প্রযুক্তি তাদের উদ্বুদ্ধ করে। খোঁজখবর নিয়ে বগুড়া থেকে সংগ্রহ করেন সুতা তৈরির দেশীয় মেশিন। পাটাচোরা গ্রামের সাইফুলের বাড়িতে বসানো           হয়েছে মেশিন। গ্রামের কিশোর শ্রমিকদের দিয়ে সংগ্রহ করা হচ্ছে পরিত্যক্ত কলাগাছ। তারপর গাছের দুই মাথা কেটে পরিমাণ মতো কাজে লাগানো হচ্ছে। কলাগাছের খোলস বের করে দেওয়া হচ্ছে মেশিনে। তা থেকে বেরিয়ে আসছে সোনালি সুতা। প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ কেজি করে সুতা উৎপাদন করছেন তারা। উদ্যোক্তা সাইফুল ইসলাম জানান, কলাগাছের সুতার বিষয়ে বেশির ভাগ মানুষের ধারণা নেই। এ কারণে এ সুতার ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। তবে ভবিষ্যতে এ সুতার ব্যাপক চাহিদা তৈরি হবে। বর্তমানে সুতার দাম কম হওয়ায় নিজেরাই পণ্য উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এতে বেশি লাভ হবে বলে তাদের ধারণা। উদ্যোক্তা আবু সাঈদ বলেন, কলাগাছের সুতা দিয়ে হস্তশিল্পের বিভিন্ন ধরনের উপকরণ তৈরি করছেন গ্রামের নারীরা। সাইফুলের বাড়িতে বসে নারীরা সুবিধামতো সময়ে তাদের হাতের কাজ করছেন। আঁশযুক্ত সুতা দিয়ে তারা ব্যাগ, পাপোশ, টুপিসহ হস্তশিল্পের বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করছেন।

হস্তশিল্পের কাজ করে গ্রামের নারীদের আয়ও হচ্ছে। স্কুল-কলেজপড়ুয়া মেয়েরাও পড়াশোনার খরচ মেটাতে এ কাজে যুক্ত হচ্ছেন।

পাটাচোরা গ্রামের হালিমা খাতুন বলেন, তার মেয়েকে কলাগাছের সুতার হস্তশিল্পের কাজে দিয়েছেন। এতে তাদের কিছু বাড়তি আয় হচ্ছে। এ থেকে ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ উঠে আসছে।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সুফি মো. রফিকুজ্জামান জানান, পরিত্যক্ত কলাগাছ গরুর খাবার হিসেবে ব্যবহার হতো। কৃষকের মাঠ থেকে কলাগাছগুলো সরাতে বাড়তি খরচও হতো। পরিত্যক্ত এসব কলাগাছ থেকে সুতা তৈরি হচ্ছে। এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া দরকার। দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলারা রহমান বলেন, দেশে হাজার হাজার বেকার যুবক কর্মসংস্থানের জন্য হতাশ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আবু সাঈদ ও সাইফুল ইসলাম বেকারত্ব ঘোচাতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন। তাদের উদ্যোগ সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। কলাগাছের সুতা উৎপাদন প্রক্রিয়াটি পরিবেশবান্ধব হওয়ায় আমরা তাদের সহযোগিতা করতে চাই। এ সুতা দেশে মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে।

সর্বশেষ খবর