শুক্রবার, ১২ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

আউটার রিং রোডে বদলাবে চট্টগ্রাম

ফৌজদারহাট থেকে ভাটিয়ারী পর্যন্ত সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে, ভাটিয়ারী থেকে ৩০ কিলোমিটার করছে বেজা

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

আউটার রিং রোডে বদলাবে চট্টগ্রাম

পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত থেকে হালিশহরের দিকে পাঁচ কিলোমিটার এবং পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘চিটাগাং সিটি আউটার রিং রোডের’ ব্যাপ্তি আরও বিস্তৃত হচ্ছে। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামের ক্রমবর্ধমান আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের চাপ মোকাবিলা করতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) বন্দর ঘিরে চালিয়ে যাচ্ছে আউটার রিং রোড নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। এবার দ্বিতীয় ফেইজে এ রোডের সাগরিকা থেকে ভাটিয়ারী পর্যন্তও করতে যাচ্ছে সিডিএ। ভাটিয়ারী থেকে মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটারের দীর্ঘ অংশটি ‘মেরিন ড্রাইভ সড়ক’ নামে বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা)। আপাতত দুই লাইনের নির্মাণকাজ চালিয়ে গেলেও আগামী বছর থেকে পুরোটাই চার লাইনে উন্নীত হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বৃহৎ এই প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হলে চট্টগ্রাম বন্দর ও ইপিজেডমুখী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান এবং লরির মতো ভারী যানবাহন যেমন নগরীর অভ্যন্তরীণ রুট ব্যবহার করবে না, তেমনি বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের যোগাযোগ হবে অত্যন্ত মসৃণ ও যানজটবিহীন। নির্মাণাধীন কর্ণফুলী টানেলের সঙ্গেও যুক্ত হবে এই রিং রোড। শুধু তা-ই নয়, নগর পরিকল্পনাবিদরা মনে করছেন, চট্টগ্রাম বন্দর, সিইপিজেড, কেইপিজেড ও মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মূল চালিকাশক্তিতে পরিণত হবে চট্টগ্রামের এই আউটার রিং রোড। সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, আউটার রিং রোড কর্ণফুলী টানেলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাঁশখালী, মহেশখালী, কক্সবাজার অর্থনৈতিক জোন থেকে বন্দরে সহজে পণ্য পরিবহন করা যাবে। একইভাবে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর থেকে পণ্যপরিবাহী যানবাহনও দ্রুততম সময়ে দক্ষিণ কাট্টলী হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে যাতায়াত করতে পারবে। এতে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে গতিশীলতার পাশাপাশি বাড়বে দেশি-বিদেশি পর্যটক। আবার শহর রক্ষা বাঁধ হিসেবেও কাজ করবে আউটার রিং রোড। আউটার রিং রোড প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএর ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস জানান, দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনি ঘাট থেকে পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি পর্যন্ত সাগরপাড়ের প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকায় আউটার রিং রোড ও উপকূলীয় বেড়িবাঁধ মজবুতকরণ প্রকল্পের কাজ চলছে। ৯০ ফুট চওড়া ও সমুদ্র-সমতল থেকে ৩০ ফুট উঁচু এই সড়ক নির্মাণের কাজ ইতিমধ্যে ৯০ শতাংশ শেষ করেছে ঠিকাদারি সংস্থা এসইএল-কেএনআর জেবি।

কাজী হাসান বিন শামস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ফৌজদারহাট থেকে ভাটিয়ারী পর্যন্ত সম্প্রসারিত আউটার রিং রোডের সঙ্গে নতুন করে প্রকল্পে যুক্ত হবে আরও দুটি ফিডার রোড এবং দুটি সার্ভিস রোড। ভাটিয়ারী পর্যন্ত সম্প্রসারিত রোডের সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু করেছে সিডিএ কর্তৃপক্ষ। সম্ভাব্য যাচাই শেষে এর প্রস্তাব আগামী জুনের মধ্যে একনেক সভায় উত্থাপন করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) সহযোগিতায় ১ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম আউটার রিং রোড নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। তৃতীয় দফায় আরও একবার ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ছে ‘চিটাগাং সিটি আউটার রিং রোড নির্মাণ’ প্রকল্পের। আগামী জুনে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত একনেকের বৈঠকে ‘চিটাগাং সিটি আউটার রিং রোড (তৃতীয় সংশোধনী)’ অনুমোদিত হয়েছে। এ পর্যায়ে ব্যয় বাড়ছে ১৬৫ কোটি টাকা। একই সঙ্গে প্রকল্পের সময় ছয় মাস বাড়িয়ে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২ হাজার ৬৭৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকার খরচ করছে ২ হাজার ৩২ কোটি ৪০ লাখ ৪২ হাজার টাকা এবং জাইকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ৬৪৩ কোটি ৫৫ লাখ ৮ হাজার টাকা। এদিকে বেজার চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘‘সিডিএর অংশের বাইরে ‘মেরিন ড্রাইভ সড়ক’ নামে আমরা ইতিমধ্যে সীতাকুন্ড অংশের ৯ কিলোমিটার কাজ শেষ করেছি; আরও ৬ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণকাজ চলছে। ধাপে ধাপে মিরসরাই ‘বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর’ পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সড়কটি আমরা অর্থাৎ বেজা কর্তৃপক্ষ করব। আপাতত দুই লাইনের কাজ চললেও আগামী বছর থেকে এটি চার লাইনে উন্নীত করা হবে। সে লক্ষ্যেই আমাদের পরিকল্পনামতো কাজ হচ্ছে। এটি বাস্তবায়িত হলে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও দেশের অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন আসবে।’’ এদিকে নগর থেকে বিমানবন্দরগামী রোডের ওপর যানবাহনের চাপ কমাতে গত আগস্টে আউটার রিং রোডে আংশিকভাবে যান চলাচলের অনুমতি দেওয়া হলেও চলতি বছর শেষে পুরোদমে তা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘প্রকল্পের ৯০ থেকে ৯২ শতাংশ কাজ শেষ। ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজের মেয়াদ থাকলেও এর আগেই পুরোদমে যান চলাচল করতে পারবে বলে আমরা আশাবাদী। এটি চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দর, নগরীর বিভিন্ন শিল্প-কারখানা ও বিমানবন্দরগামী যানবাহন এ রোড দিয়ে চলাচল করতে পারবে এবং মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত একই মহাসড়কের আওতায় চলে আসবে। তাই দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এই রোড হবে একটি অন্যতম মাইলফলক।

সর্বশেষ খবর