শুক্রবার, ১২ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

পিপলস লিজিংয়ের হাজির না হওয়া খেলাপিদের ঠিকানা চায় উচ্চ আদালত

পি কে হালদারকে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে দুদক : হাই কোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

অবসায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিংয়ের ২৮০ জন ঋণ খেলাপির মধ্যে যারা আদালতের তলবের পরেও  উপস্থিত হননি তাদের ন্যাশনাল আইডি (এনআইডি) কার্ড যাচাই করে বর্তমান ঠিকানা জানানোর নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। ঠিকানা হাতে পাওয়ার পরে তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থার বিষয়ে আদেশ দেবে আদালত। গতকাল বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাই কোর্ট বেঞ্চ শুনানি শেষে এ আদেশ দেয়। হাই কোর্টের তলবে এ পর্যন্ত আদালতে হাজির হয়েছেন ২৪৩ জন ঋণখেলাপি। তাদের মধ্য থেকে কয়েকজন ২৪ লাখ টাকা পিপলস লিজিংয়ে ফেরত দেওয়ার জন্য আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে জমা দেন। এরপরে আদালত এই আদেশ দিল। এর আগে হাই কোর্ট তার আদেশে স্বশরীরে আদালতে হাজির হওয়ার পাশাপাশি এই ২৮০ জনকে ঋণখেলাপি হওয়ার কারণ দর্শাতেও বলেছিল। গতকাল আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন কাজী এরশাদুল আলম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল ওয়াহাব। কোম্পানির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মেজবাহুর রহমান। বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯৯৭ সালে পিপলস লিজিংকে অনুমোদন দেয়। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে মেয়াদি আমানত ও বিভিন্ন ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ধার করে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির আমানত ছিল ২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। আর পরিমাণ ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা, এর মধ্যে খেলাপিই ৭৪৮ কোটি টাকা। ঋণ আদায় করতে না পারায় আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে পিপলস লিজিং ।

পি কে হালদারকে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে দুদক : হাই কোর্ট বলেছে, বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত চিঠি ১৩ ঘণ্টা পর ইমিগ্রেশনে পাঠিয়ে পি কে হালদারকে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর              রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করে।  পি কে হালদার কান্ডে জড়িত আনান কেমিক্যাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের শুনানির সময় আদালত এ মন্তব্য করে। ইন্টারনেটের যুগে চিঠি পাঠাতে এত সময় লাগানোর কড়া সমালোচনাও করে আদালত। এ সময় আদালতে দুদকের পক্ষে অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সরোয়ার হোসেন বাপ্পী শুনানি করেন।

গত ১ মার্চ ইমিগ্রেশন পুলিশ হাই কোর্টকে জানায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নয়, যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে সড়কপথে দেশত্যাগ করেছেন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার।

ইমিগ্রেশন পুলিশ জানায়, ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর দুদক ইমিগ্রেশন পুলিশকে জানানোর জন্য বিশেষ শাখার (এসবি) সদর দফতরকে চিঠি দেয়, পি কে হালদার যেন দেশত্যাগ না করতে পারেন। এসবি সদর দফতর দুদকের ওই চিঠি হাতে পায় ২৩ অক্টোবর বিকাল সাড়ে ৪টায়। ওইদিন বিকাল ৫টা ৪৭ মিনিটে ইমিগ্রেশন পুলিশের সব শাখায় চিঠি পৌঁছে দেওয়া হয়। তবে চিঠি পাওয়ার ২ ঘণ্টা ৯ মিনিট আগেই (বিকাল ৩টা ৩৮ মিনিটে) পি কে হালদার বেনাপোল দিয়ে দেশত্যাগ করেন। পি কে হালদারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কীভাবে তিনি দেশত্যাগ করলেন তা জানতে চায় হাই কোর্ট। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

আদেশে পি কে হালদার যেদিন দেশত্যাগ করেছিলেন, সেদিন বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনের দায়িত্বরতদের এবং দুদকের দায়িত্বে কে কে ছিলেন তার তালিকা দাখিল করতে বলা হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের তিনটি বিভাগে ২০০৮ সাল থেকে কর্মরতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকার বিষয়ে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে তা জানাতে বলা হয়।

২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর বাংলাদেশ প্রতিদিনে ‘পি কে হালদারকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে দুদক’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে ১৯ নভেম্বর তাকে বিদেশ থেকে ফেরাতে এবং গ্রেফতার করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত আদেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি ওই আদেশ দেয় হাই কোর্ট।

জানা যায়, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা পাচার করে কানাডায় পাড়ি দেন পি কে হালদার।

সর্বশেষ খবর