শুক্রবার, ১২ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে শিশু নির্যাতনে শিক্ষক কারাগারে

কী ব্যবস্থা জানতে চায় হাই কোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের সেই শিশুশিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক হাফেজ মো. ইয়াহিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। হাটহাজারী পৌরসভার আল মারকাযুল কোরআন ইসলামিক একাডেমির ওই শিক্ষকের হাতে আট বছরের শিশুশিক্ষার্থী মো. ইয়াসিন অকথ্য নির্যাতনের শিকার হয়। গতকাল চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জিহান সানজিদা অভিযুক্ত শিক্ষককে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে বুধবার বিকালে রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা গ্রাম থেকে হাটহাজারী থানার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গতকাল সকালে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। অভিযুক্ত মো. ইয়াহিয়া রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা এলাকার মোহাম্মদ ইউনুসের ছেলে। এদিকে মাদরাসায় শিশুশিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের পরিদর্শক (প্রসিকিউশন) এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘শিশু নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেফতার আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। তবে আসামিকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন ছিল না এবং আসামিপক্ষ থেকে জামিনের আবেদনও করা হয়নি। তাই আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে।’ জানা যায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আল মারকাযুল কোরআন ইসলামিক একাডেমি মাদরাসায় শিশু ইয়াসিনকে দেখতে যান মা পারভিন আক্তার ও বাবা মো. জয়নুল। ওই দিন ছিল শিশু ইয়াসিনের জন্মদিন। কিন্তু দেখা হওয়ার পর মা বাড়ির পথে রওনা দিলে শিশু ইয়াসিনও মায়ের পিছু পিছু ছোটে। এ সময় শিশুটি কেন মায়ের সঙ্গে চলে যেতে চাইল, এ কারণে মাদরাসার শিক্ষক মো. ইয়াহিয়া তাকে নির্মম প্রহার করেন। পরে এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, শিক্ষক ইয়াহিয়া শিশু ইয়াসিনকে প্রথমে হাত ধরে, পরে পা ধরে একাধারে পেটাচ্ছেন। বিষয়টি জানতে পেরে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ রুহুল আমিন রাতেই পুলিশ নিয়ে ওই মাদরাসায় যান। সেখানে শিক্ষক ইয়াহিয়াকে পুলিশের হাতে তুলে দেন তিনি।

শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চায় আদালত : মাদরাসায় আট বছর বয়সী শিশুশিক্ষার্থীকে পিটিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসন কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট। আগামী ১৪ মার্চের মধ্যে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে। গতকাল রাষ্ট্রপক্ষ বিষয়টি আদালতের নজরে আনলে বিচারপতি নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি শাহেদ নূর উদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, চট্টগ্রামে মাদরাসায় শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা আগামী ১৪ মার্চের মধ্যে জানাতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত খবর এবং ভিডিও আদালতের নজরে আনলে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেয় হাই কোর্ট।

শুনানিতে আদালত মন্তব্য করে বলেন, এ ধরনের ঘটনা মাদরাসার শিক্ষাব্যবস্থার ইমেজ ক্ষুণœ করেছে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষক ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থা সম্পর্কে আদালত জানতে চেয়েছেন। এ ছাড়া শিশুটির পরিবারকে কোনো চাপ দেওয়া হয়েছে কি না, মাদরাসাটি যে অধিদফতরের অধীনে, সেই অধিদফতর কর্তৃপক্ষকে পুরো বিষয় তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর