শুক্রবার, ১২ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা
কৃষি

সবজিতে ভরপুর রাজশাহীর চর

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

সবজিতে ভরপুর রাজশাহীর চর

নানা সবজিতে ভরে উঠেছে রাজশাহীর চরাঞ্চল। জেলার চার উপজেলায় চরের বেলে দোআঁশ মাটিতে চাষিরা ফলিয়েছেন সোনার ফসল। চরাঞ্চলে সবজির প্রাচুর্য দেখে যে কারও চোখ জুড়াবে। চোখ জুড়াচ্ছে চাষিদেরও। শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে চাষিদের লাভ হচ্ছে কম। রাজশাহীর গোদাগাড়ী, পবা, চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় পদ্মার চর রয়েছে। এর মধ্যে চারঘাটের চরের পরিমাণ কম। চার উপজেলায় চরে জমির পরিমাণ ১৪ হাজার ৪৪ হেক্টর। এর মধ্যে আবাদী জমির পরিমাণ ৭ হাজার ৯৪৮ হেক্টর। বর্তমানে ৬৬৫ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। পবা উপজেলার চর মাজারদিয়াড়ে সরেজমিনে দেখা যায়- টমেটো, বাঁধাকপি, বেগুন, শিম, লাউ, পেঁপেসহ নানা সবজিতে ভরে আছে মাঠ। এই চরে পেয়ারা এবং ড্রাগন ফলেরও বাগান হয়েছে। পিঁয়াজ, রসুন, মাষকলাইসহ আরও নানা ফসল চাষ করেছেন চাষিরা। কৃষকরা জানিয়েছেন, বেলে দোআঁশ মাটিতে সার দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। পোকামাকড়েরও আক্রমণ কম। তাই খুব একটা কীটনাশক দেওয়ারও প্রয়োজন পড়ে না। শুধু পানি পেলেই চরে সব ফসলের আবাদ ভালো হয়। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে তারা সবজির দাম পান কম। চর মাজারদিয়া গ্রামের চাষি ফারুক হোসেন বলেন, নদী বড় থাকলে নৌকায় তাদের যোগাযোগ সহজ হয়। কিন্তু তখন পানি ঢুকে তাদের চাষের জমি কমে যায়। আবার পানি নেমে গেলে যে পলি পড়ে তাতে সবজির চাষ হয় ভালো। তখন নৌপথ কমে গিয়ে বেড়ে যায় পায়ে হাঁটার পথ। এই দুর্গম চর থেকে সবজি বাজারে নিতে নিতেই তাজা সবজি আর তাজা থাকে না। তখন পাইকারি ক্রেতারা দাম কম দেন। আবার অনেক ব্যবসায়ী চরে সবজি কিনতে আসেন। চর আর নদী পাড়ি দিয়ে সবজি নিয়ে যেতে হবে বলে তাদের কম দাম দেওয়া হয়। এতে ক্ষতি না হলেও লাভের পরিমাণ কমে যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কৃষির তিনটি মৌসুমের মধ্যে শুধু ‘রবি মৌসুম’-এ আবাদ করা সম্ভব হয়। রবি মৌসুম ১৬ অক্টোবর থেকে ১৫ মার্চ।

এই সময়ে পদ্মায় পানি না থাকায় রবি শস্য ফলানো সম্ভব হয়। আর খরিপ-১ ও খরিপ-২ এর ফসল বন্যার কারণে অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, রাজশাহী জেলায় কৃষি জমি আছে ১ লাখ ৮১ হাজার ২৮২ হেক্টর। এ ছাড়া রাজশাহীর পবা, গোদাগাড়ী, চারঘাট, বাঘা জুড়ে বিস্তীর্ণ চর এলাকা আছে। এই চরে মসুরের ডাল, ধান, গম, সরিষা, বাদাম, পিঁয়াজ, খেসারির ডাল, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ হয়। এসব ফসল চরের কৃষক ছাড়াও বিভিন্ন এলাকার কৃষক চরে গিয়ে আবাদ করেন।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) উম্মে সালমা জানান, গত মৌসুমে (২০২০) পদ্মার চরে চাষ হওয়া ফসলের উৎপাদন হিসেবে দেখা গেছে মসুরের ডাল ২ হাজার ৩১৮ মেট্রিক টন, গম ৯ হাজার ৮৩৬ মেট্রিক টন, সরিষা ৫১৮ মেট্রিক টন, ধান ২ হাজার ২০০ মেট্রিক টন, বাদাম ৪৪৬ মেট্রিক টন, পিঁয়াজ ৭ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন। এ বছর (২০২১) মসুরের ডাল চাষ হয়েছে ১ হাজার ৫২৫ হেক্টর, গম ২ হাজার ৬৯৫ হেক্টর, সরিষা ৩৫০ হেক্টর, ধান ৫৫০ হেক্টর, বাদাম ২০০ হেক্টর, পিঁয়াজ ৫৭০ হেক্টর জমিতে।

আয়েন উদ্দিন এমপি বলেন, চরাঞ্চলের সবজির স্বাদ ভালো হওয়ার কারণ এখানে সার-কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। শুধু পানি পেলেই চরে খুব ভালো সবজি উৎপাদন হয়। কিন্তু এত ভালো সবজি উৎপাদন করেও চাষিরা ভালো মূল্য পান না। নদীপাড় থেকে চরের গ্রাম পর্যন্ত যদি পাকা রাস্তা নির্মাণ করা যায় তাহলে চাষিদের কষ্ট অনেক কমে যাবে। চাষিরা অন্তত সহজে নদীপাড় পর্যন্ত তাদের ফসল নির্বিঘ্নে নিয়ে যেতে পারবেন। চর মাজারদিয়া এলাকায় আমরা এ রকম একটা রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর