শনিবার, ১৩ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

ইঞ্জিন গরম হয়ে বাসে আগুন, মালিক চালকের বিরুদ্ধে মামলা

কুমিল্লা প্রতিনিধি

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুরে ইঞ্জিন অতিরিক্ত গরম হয়ে যাত্রীবাহী বাসে আগুন লাগে। বাস চলন্ত থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। যাত্রীদেরও নামতে সময় লাগে। এতে দুই যাত্রী নিহত হন। বেশি দগ্ধ হন নয় যাত্রী। লাফিয়ে পড়ে অন্যরা আহত হন। এদিকে বাসে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে বাসের মালিক মিজানুর রহমান ও চালকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ওসি জহিরুল ইসলাম। এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি রওশন আরা কান্নাজড়িত কণ্ঠে স্বজনদের জানান, ‘চোখের সামনে নাতিডা পুইড়া গেল। আল্লায় আমারে নিয়া যাইত, আমার নাতিডারে বাঁচাইয়া রাইখা যাইত।’

দাউদকান্দি ফায়ার স্টেশন কর্মকর্তা ফয়েজ আহমেদ জানান, বাসের গ্যাসের সিলিন্ডারগুলো অক্ষত রয়েছে। সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হলে

গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ উড়ে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে পড়ত। বাসে অগ্নিকান্ডে নিহত হয় সাড়ে চার বছরের সাফিন। আর দগ্ধ হন তার দাদি রওশন আরা। তিনি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন। জানা গেছে, বড় নাতিকে নিয়ে বাবার বাড়ি যাচ্ছিলেন রওশন আরা। বাবার মৃত্যুবার্ষিকী। দোয়া অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। মা ও সন্তানকে অনেকটা পথ এগিয়ে দেন তার ছেলে সাইফুল ইসলাম। চাঁদপুরের মতলবে যাবেন। তাই মতলব সার্ভিসের বাসে ওঠেন। নাতিকে নিয়ে চালকের আসনের পাশে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে বসেন রওশন আরা। বাসটি চিটাগাং রোড থেকে ছেড়ে আসে। গৌরীপুর পৌঁছালে বাসে আগুন ধরে যায়। ইঞ্জিন থেকে আগুনের সূত্রপাত। কিছু বুঝে ওঠার আগেই নাতি সাফিনকে টেনে বের করতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যান। বাসের দরজা দিয়ে তিনি বের হন, তবে বাসে রয়ে যায় সাফিন। তার চোখের সামনে পুড়ে যায় নাতি সাফিন। এদিকে ছেলের লাশ নেওয়ার জন্য গতকাল সকাল থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অপেক্ষা করেন বাবা সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ছেলে আগুনে পুড়ে মারা গেছে। মা হাসপাতালে। আমার দুই ছেলের মধ্যে সাফিন বড়। রাতে কাজ শেষে যখন বাসায় যাইতাম আব্বু আব্বু কইয়া পোলাডা কোলে ঝাঁপাইয়া পড়ত। এখন কে আইব আমার কাছে।’ ছেলের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে তার গলা ধরে আসে, চোখ মুছতে থাকেন।

দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম খান জানান, এ ঘটনায় এখনো কোনো তদন্ত কমিটি গঠিত হয়নি। জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশনায় মারা যাওয়া দুজনের পরিবারের কাছে ২০ হাজার টাকা করে ৪০ হাজার এবং আহত নয়জনের জন্য ১০ হাজার করে মোট ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বৃহস্পতিবার বিকালে চলন্ত বাসে আগুন লেগে দগ্ধ হয়ে এক শিশুসহ দুই যাত্রী মারা যান। তারা হলেন দাউদকান্দির দলুয়াকান্দি গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে সাফিন (৪) ও তিনপাড়া গ্রামের আহাদ উল্লাহর ছেলে রফিকুল ইসলাম (৬০)। আহত হয়েছেন ২০ জন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর