রবিবার, ১৪ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

এক বছর বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দরজা

আকতারুজ্জামান

প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দরজা। দীর্ঘ ১২ মাস বন্ধ থাকার পর ছাত্র-ছাত্রীদের এখন সময় কাটছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার অপেক্ষায়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা সামনে রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদেরও। সরকারের পক্ষ থেকেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েই গেছে।

তথ্যমতে, গত বছর ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর ১৬ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। প্রথম দফায় গত বছর ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ করা হয় স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়। নির্ধারিত ছুটি শেষ হওয়ার আগেই বাড়ানো হয় ছুটি। করোনা সংক্রমণ বন্ধ না হওয়ায় এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বেড়েছে ধাপে ধাপে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ৩০ মার্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ২৪ মে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়া হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়ে খোলা হবে আবাসিক হলগুলো। আর প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের টিকা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের নির্দেশনা পেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে গত ফেব্রুয়ারি থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজ। রাজধানীর সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা পেয়ে স্কুল খোলার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি আমরা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা উচিত। এক বছর বন্ধ থাকার পর স্কুল-কলেজ আরও বন্ধ রাখলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় একেবারেই পিছিয়ে পড়বে।’ ছুটি না বাড়িয়ে স্বাস্থ্যবিধি   মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানান তিনি। তিনি বলেন, অন্তত এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া উচিত।

শিক্ষাবিদসহ শিক্ষা-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ এক বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা থেকে ক্রমে দূরে সরে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে পড়াশোনায় একটা অনীহা তৈরি হচ্ছে। তবে করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ক্ষেত্রে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ক্ষেত্রে শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করাসহ যাবতীয় প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন সরকারের কাছে কোনো বেতন বা আর্থিক সুবিধা না পাওয়া বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অত্যন্ত দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন স্কুল-কলেজের ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা। সরকারের কাছে এমপিও সুবিধা না পাওয়া এ শিক্ষকরা আগে প্রাইভেট টিউশনি করে সংসার চালিয়ে নিলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সে পথও বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক শিক্ষক বিপদে পড়ে চলমান সময়ে পেশা পরিবর্তন করেছেন। কেউ বিক্রি করছেন রাস্তার ধারে ফলমূল বা কেউ কেউ করছেন দিনমজুরের কাজ। কিন্ডারগার্টেন স্কুল থেকে উচ্চশিক্ষার স্তরে অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের অনেক শিক্ষক এমপিওভুক্ত না হওয়ায় বর্তমানে অত্যন্ত সংকটে জীবন পার করছেন। বন্ধ থাকায় দেশের কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো করোনাভাইরাসের এই সময়ে পড়েছে অস্তিত্ব সংকটে। অধিকাংশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল ভাড়াবাড়িতে পরিচালিত হওয়ায় করোনাকালে ভাড়া দিতে না পেরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দেশের স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরাও সংকটে রয়েছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায়। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশ শিক্ষক কোনো বেতন পাচ্ছেন না। অল্প কিছু শিক্ষক নামকাওয়াস্তে কিছু টাকা পান সরকারের কাছ থেকে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রাইভেট টিউটররাও। চরম অর্থকষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে, তা অব্যাহত থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে। করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বগতি থাকলে জাতীয় পরামর্শক কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করব।’ দীপু মনি বলেন, ‘আমরা প্রতিদিনই করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী ও অভিভাবকদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি আমাদের কাছে সবচেয়ে বিবেচনার।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর