মঙ্গলবার, ১৬ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

দুই খুন করে দিনমজুরের ছদ্মবেশ

মির্জা মেহেদী তমাল

দুই খুন করে দিনমজুরের ছদ্মবেশ

বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে বেরিয়ে আর বাসায় ফেরেনি আবুল কাশেম। বিভিন্ন স্থানে খোঁজখবর নেওয়া হলেও কাশেমকে পাওয়া যায়নি। পরদিন সকালে তার লাশ পাওয়া যায় বাসার অদূরে একটি হাসপাতালের কাছে। পুলিশ এসে তার লাশ উদ্ধার করে। কাশেমের শরীরে আঘাতের অসংখ্য চিহ্ন। কাশেমের বড় ভাই জাকির হোসেন এ ঘটনায় বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। আসামি করা হয় কাশেমের ছয় বন্ধুকে। পুলিশ তদন্ত শুরু করে। কিন্তু আসামিদের গ্রেফতার করতে পারে না পুলিশ। পুলিশের তৎপরতা থেমে যায়। ধামাচাপা পড়ে মামলার তদন্ত। জাকির হোসেন তার ভাইয়ের হত্যার বিচার চেয়ে বিভিন্ন স্থানে ধরনা দেন। থানা পুলিশ আদালত করতে করতে এক সময়ে হতাশায় ভুগতে থাকেন। একপর্যায়ে মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। গোয়েন্দারা নতুন করে মামলার তদন্ত শুরু করে। ঘটনাটি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার নাইঘর গ্রামের। এরই মধ্যে পেরিয়ে যায় সাড়ে পাঁচ মাস। আসামিরা কেউ গ্রেফতার হয় না। এক সকালে গ্রামের একটি ধানখেতে মেলে জাকির হোসেনের লাশ। ছোট ভাই খুনের মামলার বাদী জাকির হোসেনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। সাড়ে পাঁচ মাসের ব্যবধানে দুই ভাই খুনের পর গোটা এলাকায় তখন আতঙ্ক। ভাইয়ের খুনিদের গ্রেফতারের দাবি নিয়ে তিনি যখন তৎপর, তখন নিজেই হলেন খুনের শিকার। বাদী খুন হওয়ায় পুলিশ প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়। গোয়েন্দারা নড়েচড়ে বসে। খুনিদের গ্রেফতারে নানা তৎপরতা শুরু করে। জাকির হোসেন হত্যাকান্ডে থানায় মামলা করেন তার স্ত্রী ফারজানা। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আবুল কাশেম খুনের রহস্য উদঘাটনে চারদিকে সোর্স নিয়োগ করে গোয়েন্দারা। তাদের কাছে খবর আসে, কুমিল্লার কবির আহাম্মদ যিনি কাশেম হত্যা মামলার অন্যতম আসামি, তাকে সিলেটে দেখা গেছে। কখনো রিকশাচালক, কখনো দিনমজুর হিসেবে ছদ্মবেশ নিতে দেখা যাচ্ছে তাকে। এ খবর পেয়ে পুলিশ সিলেটের গোয়াইনঘাট থানার হাজীপুর এলাকা থেকে কবির আহাম্মদকে গ্রেফতার করে। তাকে ব্যাপক জেরা করা হলে বেরিয়ে আসে দুই সহোদর হত্যা মামলার রহস্য। জেরার মুখে কবির গোয়েন্দাদের জানায়, ‘বন্ধু আবুল কাশেম তার কাছে ২ লাখ টাকা পেত। এ টাকার জন্য খুব তাগাদা দিচ্ছিল। এক গভীর রাতে আড্ডা দেওয়ার কথা বলে আবুল কাশেমকে বাসার বাইরে ডেকে নিয়ে আসি। আমরা বন্ধুরা মিলে তাকে নিয়ে যাই উপজেলা সদরের পশু হাসপাতালের পাশের বাগানে। সেখানে নিয়ে নেশাজাতীয় দ্রব্য মেশানো কোমলপানীয় পান করানো হয় আবুল কাশেমকে। একপর্যায়ে কবিরসহ ছয়জন মিলে কাশেমকে খুন করি। পরে পালিয়ে যাই সিলেটে। সিলেটে গিয়ে নিকটাত্মীয়দের সহায়তায় বিভিন্ন স্থানে দিনমজুরের কাজ করি। ছদ্মবেশ নিয়ে থাকি। পরে আমার পরিকল্পনায় খুন করা হয় মামলার বাদী জাকির হোসেনকে। ওই ঘটনায় অংশ নেয় চারজন।’ পুলিশ জানায়, আবুল কাশেম বন্ধুকে উপকার করতে টাকা ধার দিয়েছিল। কিন্তু কবির আহাম্মদ তার প্রকৃত বন্ধু ছিল না। বন্ধু চিনতে ভুল করেছে। যে কারণে আবুল কাশেম নিজেই নয়, খুন হতে হয়েছে তার বড় ভাইকেও।

সর্বশেষ খবর