বুধবার, ১৭ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

বীরনিবাস পাচ্ছেন ৩০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা

আনিস রহমান

দ্রুত এগিয়ে চলছে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বীরনিবাস প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের এই ‘বীরনিবাস’ উপহার দেওয়া হবে। গতকাল একনেকে ‘অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। ইতিমধ্যেই উপজেলা পর্যায়ে যাচাই-বাছাই শেষে আবেদন অনুমোদনের জন্য আসছে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে। গতকাল একনেক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মো. মামুন-আল-রশীদ বলেন, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভিটামাটি নেই এ রকম মুক্তিযোদ্ধা তেমন একটা নেই। যদি ভিটামাটিহীন কোনো মুক্তিযোদ্ধা পাওয়া যায় তাহলে সংশ্লিষ্ট ডিসি বা ইউএনও ওই মুক্তিযোদ্ধার জন্য যেন সরকারি খাস জমির ব্যবস্থা করে বীরনিবাস তৈরি করে দেন। এ সময় তিনি এই প্রকল্পটির আরও কয়েকটি অনুশাসনের কথা তুলে ধরে বলেন, প্রকল্পটির দ্রুত বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসক ও ইউএনওরা যাতে  প্রয়োজনে প্রকল্পের টাকা দ্রুত ছাড় করতে পারেন তার ব্যবস্থা নিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, ১৪ হাজার বাড়ির একটি প্রস্তাব আমরা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা এখন তা ফেরত নিয়ে ৩০ হাজার বাড়ি নির্মাণ করার প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাতে আরও বেশি মানুষকে বাড়ি দেওয়া যায়। আগের ডিজাইনে কিছুটা পরিবর্তন আছে। নির্মাণ ব্যয় কমিয়ে আনা হচ্ছে। আগে প্রতিটি বাড়ি নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০ লাখ ৬৭ হাজার টাকা এখন তা কমিয়ে আনা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রতিটি বাড়ির রং হবে জাতীয় পতাকার রং লাল-সবুজের সমন্বয়ে। বাড়ির আয়তনও হবে একই সমান। দুটি বেড রুম, বারান্দাসহ একতলা বিশিষ্ট প্রতিটি বাড়িতে থাকবে আলাদা বাথরুম, টিউবওয়েল এবং গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি পালনের জন্য পৃথক শেড।

 ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের নিজস্ব জমিতে এই বাড়ি নির্মাণ করছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও এলজিইডি মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রতিটি উপজেলায় ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় এই বাড়িগুলো নির্মাণ করা হবে।

সূত্র জানায়, এই আবাসন বরাদ্দের জন্য অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ-প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধার বিধবা স্ত্রী ও সন্তান আবেদন করতে পারবেন। বীরাঙ্গনাদের ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরাসরি বরাদ্দ দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই আবেদনটি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই শেষে সরাসরি তাদের বিপরীতে আবাসন বরাদ্দ দেবে। সুবিধাভোগী নির্বাচনের জন্য উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব মনোনীত করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে এই কমিটির কাজ এগিয়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন উপজেলায় এক শ্রেণির দালালের উদ্ভব ঘটেছে। তারা বাড়ি পেতে সহায়তা করার নামে অনেক মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে এক থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে। সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে কথা হয় ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার বনগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা হিরু মোল্লার ছেলে শহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি অভিযোগ করেন তার এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা নন এমন একজনকে বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাকে করা হচ্ছে বঞ্চিত।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যে বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে তার নাম ঠিক করা হয়েছে ‘বীরনিবাস’। অসহায় এবং আর্থিকভাবে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন সুবিধা নিশ্চিতকরণে দ্বিতীয় পর্যায়ে এই বাসস্থান নির্মাণের জন্য প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর আগে প্রথম ফেইজে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বসবাসের জন্য ২ হাজার ৯৬১টি আবাসন নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর