শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৮ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

আন্তর্জাতিক চেইনগুলোর দৃষ্টি বাংলাদেশ

দেশে বাবা রাফি, এ অ্যান্ড ডব্লিউ বার্গার কিং, নান্দুস, সাবারো হারফিসহ বিখ্যাত ফুড চেইনগুলো খুলেছে একাধিক আউটলেট

জিন্নাতুন নূর

বিশ্বখ্যাত আন্তর্জাতিক ফুড চেইনগুলোর দৃষ্টি এখন বাংলাদেশে। ব্যবসা প্রসারের লক্ষ্যে তারা এ দেশে একের পর এক শাখা খুলে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জীবনমান বিবেচনায় রাজধানী ঢাকা ছাড়াও শিল্পনগরী চট্টগ্রাম, বিভাগীয় শহর সিলেট এবং সমুদ্রনগরী কক্সবাজারেও এই ফুড চেইনগুলো তাদের আউটলেট খোলার ব্যাপারে আগ্রহী। কয়েক বছর ধরে স্থানীয় রেস্টুরেন্টগুলোর ইতিবাচক ব্যবসার ধারা এবং খাদ্যরসিকদের ফাস্টফুডের প্রতি বাড়তি আগ্রহ এই ফুড চেইনগুলোকে বাংলাদেশে ব্যবসা প্রসারে উৎসাহিত করছে। ঢাকা ও অন্য বিভাগীয় শহরগুলোতে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ফাস্টফুড চেইন কর্তৃপক্ষ ব্যবসা শুরু করে ভালো সাড়া পেয়েছে। করোনা সংক্রমণ শুরুর পর খাদ্য-সচেতনরা এখন ভালো পরিবেশে মানসম্মত খাবার গ্রহণে আগ্রহী। এ কারণে ভালো সময় কাটানোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ফুড চেইনগুলোতে সুস্বাদু খাবার খেতে ভিড় জমাচ্ছেন ভোজনরসিকরা। তাদের মতে, একসময় দেশের বাইরে গিয়ে যে খাবারের স্বাদ নিতে হতো, এখন নিজ শহরে বসেই পরিবার-পরিজন নিয়ে মজাদার খাবারগুলোর স্বাদ নেওয়া যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক ফুড চেইনগুলোর সঙ্গে জড়িতরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সময়ের সঙ্গে চাহিদা বৃদ্ধির জন্য মানুষ এখন বিভিন্ন সুস্বাদু খাবারের দিকে ঝুঁকছে। যেহেতু দেশে বিনোদনের সুযোগ খুব সীমিত, এ জন্য খাবারের মধ্যেই মানুষ বিনোদন খুঁজছে। ছুটির দিনগুলোতে পরিবার নিয়ে বিনোদনের জন্য এখন মানুষ নগরীর বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ভিড় করছে। আর এ ক্ষেত্রে ভালো পরিবেশ ও মানসম্পন্ন খাবারের খোঁজে সচেতন খাদ্যরসিকরা আন্তর্জাতিক ফুড চেইনের শাখাগুলোর প্রতিই আগ্রহী। এ ছাড়া এই ফুড চেইনগুলো খাবার পরিবেশনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা এবং হাইজিনের ব্যাপারেও বেশ সচেতন।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও বিখ্যাত কাবাব ফুড চেইন হচ্ছে ‘বাবা রাফি’। ইন্দোনেশিয়ায় তাদের প্রধান কার্যালয়। বিশ্বের ৯টি দেশে ১ হাজার ৩০০টির বেশি আউটলেট আছে ‘বাবা রাফি’র। কাবাব ছাড়াও তারা বার্গার, স্যান্ডউইচ, শর্মা বিক্রি করে। বাংলাদেশে ২০১৬ সালে তারা যাত্রা শুরু করে। জানা যায়, ঢাকার ভিতর বসুন্ধরা সিটিতে ‘বাবা রাফি’র চারটি আউটলেট আছে। এ ছাড়া বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ভিতর আছে দুটি আউটলেট। এর বাইরে পূর্বাচল ৩০০ ফিট রাস্তায় অবস্থিত মেহেদি ফুড কোর্টে আরেকটি আউটলেট মিলিয়ে ঢাকায় বর্তমানে সাতটি আউটলেট আছে ‘বাবা রাফি’র। ‘বাবা রাফি’র এক্সিকিউটিভ (ট্রেইনিং) রাব্বুল ইসলাস রাজু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে শিগগিরই মাওয়া ঘাটে আরেকটি আউটলেট চালু করা হবে। এ ছাড়া শিল্পনগরী চট্টগ্রামে আরও একটি আউটলেট খোলার পরিকল্পনা রয়েছে।

আন্তর্জাতিক ফুড চেইনগুলোর একটি হচ্ছে ‘এ অ্যান্ড ডব্লিউ’ রেস্টুরেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত রেস্টুরেন্টটি বর্তমানে বিশ্বের ১৬টি দেশের ১ হাজার ২০০টির বেশি স্থানে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন খাবারের মধ্যে তারা হট ডগ, চিজ কাড, বার্গার ও চিকেন দিয়ে বিভিন্ন খাবার তৈরি করে। বাংলাদেশে রেস্টুরেন্টটি ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে ঢাকায় তাদের দুটি আউটলেট। এর একটি  গুলশানে, অন্যটি ধানমন্ডিতে। যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট ‘বার্গার কিং’। রেস্টুরেন্টটি বিখ্যাত তাদের বার্গারের জন্য। বার্গার ছাড়াও তারা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, কোমল পানীয়, মিল্ক শেক, হট ডগসহ বিভিন্ন খাবার বিক্রি করে। বিশ্বের ১৫ হাজারেরও বেশি স্থানে ‘বার্গার কিং’ সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ‘বার্গার কিং’ বাংলাদেশে তাদের যাত্রা শুরু করে। বার্গার কিংয়ের শিফট ম্যানেজার মো. জাহাঙ্গীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাজধানী ঢাকায় তাদের বনানী, গুলশান, ধানমন্ডি, বলাকা, উত্তরা, যমুনা ফিউচার পার্ক ও বসুন্ধরায় মোট আটটি আউটলেট খোলা হয়েছে। জানা যায়, দেশীয় খাদ্যপ্রেমী ছাড়াও তাদের আউটলেটগুলোতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিদেশিও খাবারের স্বাদ নিতে আসছেন। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণের জন্য আমরা সেবাগ্রহীতাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতে সতর্ক। এ ছাড়া আমরা শতভাগ হাইজিন ফুড সরবরাহ করছি।’ সাউথ আফ্রিকায় শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক ডাইনিং রেস্টুরেন্ট চেইনে সুনাম কুড়িয়েছে ‘নান্দুস’। বিশ্বব্যাপী নান্দুসের আছে ১ হাজারের বেশি আউটলেট। নান্দুসের প্রধান অফিস যুক্তরাজ্যে। আর বিশ্বের ৩০টির বেশি দেশে তারা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ২০০৭ সালে নান্দুস বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে যাত্রা শুরু করে। আর যাত্রার পর থেকে তাদের সুস্বাদু পেরি পেরি চিকেন দিয়ে খাদ্যরসিকদের মন জয় করে নেয়। বর্তমানে ঢাকায় তাদের গুলশান-১, গুলশান-২, ধানমন্ডি ও বনানীতে আউটলেট আছে। দেশের আরেকটি আন্তর্জাতিক জনপ্রিয় ফুড চেইন হচ্ছে ‘হারফি’। সৌদি আরবভিত্তিক এই ফাস্টফুড চেইনটি ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে তাদের যাত্রা শুরু করে। হারফি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ঢাকায় হারফির পাঁচটি আউটলেট খোলা হয়েছে। গুলশানে হারফি তাদের প্রথম আউটলেট খোলে। এরপর জনপ্রিয় এ রেস্টুরেন্টটি বনানী, উত্তরা, মিরপুর ও ধানমন্ডিতে খোলে আরও কয়েকটি আউটলেট।

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ফুড চেইনের আরেকটি জনপ্রিয় নাম ‘সাবারো’। মূলত রেস্টুরেন্টটি নিউইয়র্ক স্টাইল পিৎজা বানাতে দক্ষ। এর প্রধান কার্যালয় যুক্তরাষ্ট্রে। বিশ্বের ৩৩টি দেশের ৮০০টির বেশি স্থানে সাবারোর খাবার বিক্রি হচ্ছে। ইতালিয়ান-আমেরিকান খাবার, পিৎজা, পাস্তা ও সালাদ ছাড়াও অন্যান্য সুস্বাদু খাবার বিক্রি করে রেস্টুরেন্টটি। ২০১৫ সালে সাবারো বাংলাদেশে তার যাত্রা শুরু করে। ‘ক্রিস্পি ক্রিমি ডোনাটস’ আরেকটি আন্তর্জাতিক ফুড চেইন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই ফুড চেইনটি মূলত ডোনাটস ও কফির জন্য বিখ্যাত। বিশ্বের ১ হাজারের বেশি স্থানে তাদের আউটলেট আছে। বেক করা খাবার ছাড়াও তারা কোমল পানীয়, স্যান্ডউইচ, হিমায়িত বেভারেজ বিক্রি করে। ২০১৬ সালের মে মাসে তারা বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে।

সর্বশেষ খবর