শুক্রবার, ১৯ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

স্বাস্থ্যবিধি না মানার হিড়িক

৯৪ দিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ । ১০০ দিনে সর্বাধিক শনাক্ত । ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ১৬ শনাক্ত ২১৮৭

নিজস্ব প্রতিবেদক

আবারও টানা বাড়ছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ। বাড়ছে মৃত্যুও। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ১৮৭ জন। এর আগে এক দিনে এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ ডিসেম্বর। ওই দিন ২ হাজার ২০২ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। গত এক দিনে করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও ১৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয় ২০ হাজার ৯২৫টি। এতে সংক্রমণ শনাক্ত হয় ১০ দশমিক ৪৫ শতাংশ মানুষের দেহে, যা গত ৯৪ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। সর্বশেষ এর চেয়ে বেশি সংক্রমণ হার শনাক্ত হয় গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর। ওই দিন শনাক্তের হার ছিল ১০ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এদিকে করোনার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হলেও বর্তমানে অধিকাংশ মানুষই তা মানছেন না। রাজধানীর গণপরিবহনগুলোতে দেখা গেছে, আগের মতোই গাদাগাদি করে চলছে মানুষ। অধিকাংশের মুখে নেই মাস্ক। অল্প কিছু শপিং মলে স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা থাকলেও অধিকাংশে নেই। বাজারে, রেস্তোরাঁয় কোথাও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে না পারলে করোনার লাগাম টানা কঠিন হয়ে যাবে। টিকা গ্রহীতাদের অনেকে একেবারেই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। অন্যদের মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মানায় অনীহা দেখা যাচ্ছে। অথচ, করোনার বিরুদ্ধে সর্বাধিক অ্যান্টিবডি তৈরি হয় টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ১৪ দিন পর। এখনো দেশের ৯৭ ভাগ মানুষ টিকার প্রথম ডোজই পায়নি। এ ছাড়া দেশে শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন স্টেইন (পরিবর্তিত রূপ) বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, টিকা নিয়েই নিজেকে সুরক্ষিত মনে করার সুযোগ নেই। তিনি নিজেও সংক্রমিত হতে পারেন, অন্যদেরকে সংক্রমিত করতে পারেন। যতদিন দেশের ৮০ ভাগ মানুষ টিকার আওতায় না আসে আর করোনা সারা বিশ্বে সাধারণ সর্দি-জ্বরে পরিণত না হয়, ততদিন স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৫৩৪ জন করোনা রোগী। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৯৩৯ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৮ হাজার ৬২৪ জন। সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ১৭ হাজার ৫২৩ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ৬১ শতাংশ ও মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে ১২ জন ছিলেন পুরুষ ও চারজন নারী। বয়স বিবেচনায় ১২ জন ছিলেন ষাটোর্ধ্ব, একজন পঞ্চাশোর্ধ্ব ও তিনজন ছিলেন চল্লিশোর্ধ্ব। এর মধ্যে ১৩ জন ঢাকা এবং একজন করে চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। সবার মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে। হাসপাতালগুলোতেও বাড়ছে করোনা রোগী। গতকাল করোনা হাসপাতালগুলোর সাধারণ শয্যায় ভর্তি ছিলেন ২ হাজার ৪০৭ জন রোগী। আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন ২৮৬ জন সংকটাপন্ন রোগী। মাসের শুরুতে ১ মার্চ সাধারণ শয্যায় ১ হাজার ৩৭৭ জন ও আইসিইউতে ১৫৪ জন ভর্তি ছিলেন। ১৭ দিনের ব্যবধানে হাসপাতালে মোট ভর্তি রোগী বেড়েছে ১ হাজার ১৬২ জন। বাংলাদেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্তের তথ্য জানানো হয় ও ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। রোগী শনাক্তের পর সংক্রমণ বাড়তে বাড়তে জুলাই-আগস্টে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। বছরের শেষে কমতে শুরু করে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ৩ শতাংশের নিচে নেমে আসে সংক্রমণ হার। ঢিলেঢালা অবস্থায় চলে যায় স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি। মার্চের শুরু থেকে ফের বাড়তে শুরু করেছে সংক্রমণ ও মৃত্যু।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর