শনিবার, ২০ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

সকালে ঢিলেঢালা বিকালে উৎসবমুখর

মোস্তফা মতিহার

সকালে ঢিলেঢালা বিকালে উৎসবমুখর

প্রকৃতিতে বসন্তের বাতাস বইলেও বইমেলায় এখনো বসন্ত দেখা দেয়নি। গতকাল ছিল মেলার দ্বিতীয় দিন আর প্রথম শুক্রবার। কর্মব্যস্ত দিনের চেয়ে এমন ছুটির দিনে মেলা জমে ওঠার কথা থাকলেও তেমনটি লক্ষ্য করা যায়নি। ছুটির দিন বলে এদিনের মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়। দ্বার উন্মোচনের পর থেকেই ঢিলেঢালাভাব ছিল মেলার দুই প্রাঙ্গণ বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। করোনার কারণে এখনো শিশুপ্রহর চালু না হওয়াতে সকালে দেখা যায়নি খুদে পাঠকদের। সকালের সময়টা প্রায় অলসভাবেই কাটিয়েছেন বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার বিক্রয়কর্মীরা। তবে বিকালের দিকে এই চিত্র পাল্টাতে থাকে। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হওয়ার পর থেকে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে লোকসমাগম বাড়লেও বইয়ের বিক্রি বাড়েনি বলে প্রকাশকদের হতাশাও কাটেনি। তবে প্রথম দিকে বইয়ের বিক্রি কমই থাকে- এমনটিই বলছেন অনেক প্রকাশক। দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল বলেন, মেলা শুরুর আগে যে রকম শঙ্কায় ছিলাম, সেই শঙ্কা কিছুটা হলেও কেটে গেছে। ভাবছি লোকজন       আসবে না। সকাল থেকেই হতাশ ছিলাম। কিন্তু বিকালের লোকসমাগম আমাকে আশাবাদী করে তুলেছে। বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের বিক্রি আশাব্যঞ্জক। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে যতটা প্রত্যাশা করেছি তার চেয়ে বেশি বিক্রি করেছি। আশা করছি সামনের দিনগুলোতে আরও ভালো বিক্রি হবে। আদর্শ প্রকাশনীর মামুন বলেন, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকাতে এবারের মেলায় অন্যান্যবারের তুলনায় লোক সমাগম কম হবে। আর লোক কম হলে বিক্রি কম হবে এটাই স্বাভাবিক। এদিকে বাংলা একাডেমি বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও এখনো অনেক প্যাভিলিয়ন ও স্টলের নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। বইমেলার নীতিমালাতেও রয়েছে মেলা শুরুর আগেই নির্মাণকাজ শেষ করতে হবে। কিন্তু বেশিরভাগ প্রকাশকই নীতিমালা মানছেন না। কথা প্রকাশনী, পুঁথি নিলয়, স্টুডেন্ট ওয়েজ, নালন্দা, অন্যপ্রকাশ, পার্ল পাবলিকেশন্সসহ অনেক প্রকাশনী এখনো স্টল ও প্যাভিলিয়নের নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি। নির্মাণকাজের বালুর স্তূপসহ নির্মাণ দ্রব্যসামগ্রী যত্রতত্র ছড়িয়ে থাকাতে মেলার পরিবেশের সৌন্দর্যের হানি ঘটছে। আর হাতুড়ি বাটালের টুংটাং শব্দ মেলায় আগতদের বিরক্তির কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। জরুরি প্রয়োজনীয় টয়লেট ব্যবস্থা এখনো চালু করতে পারেনি মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট এলাকার প্রবেশ পথের পার্কিং ব্যবস্থাও এখন পর্যন্ত চালু হয়নি। এ ছাড়া আশ্রয় কেন্দ্র এবং বসার স্থানের নির্মাণ কাজ মেলার দ্বিতীয় দিনেও শেষ করতে পারেনি একাডেমি কর্তৃপক্ষ। বিগত বছরগুলোর মতো এবারের মেলায়ও বাংলা একাডেমি কথা রাখতে পারেনি। দ্বিতীয় দিন বিকালে প্রকাশনা সংস্থা টাঙ্গণের সামনে কথা হয় রাজধানীর উত্তরা থেকে আগত ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষিকা কাজী সানজিদার সঙ্গে। তিনি বলেন, ভেবেছিলাম করোনার কারণে লোকজন আসবে না। কিন্তু মেলায় এসে আমার ধারণাই পাল্টে গেল। লোকসমাগম বাড়লেও বিক্রিও ধীরে ধীরে বাড়বে। এদিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলায় প্রবেশের নির্দেশনা থাকলেও অনেকেই তা মানছেন না। এ ছাড়া মেলার অভ্যন্তরে অনেকেই মাস্ক না পরে দিব্যি ঘুরে বেড়ালেও সেদিকে কারও কোনো খেয়ালই ছিল না। খোদ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা লেখক মোশতাক আহমেদই স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করেননি। মাস্ক না পরা অবস্থাতেই অনিন্দ্য প্রকাশনীর সামনে বসে পাঠকদের অটোগ্রাফ দিচ্ছিলেন এই লেখক ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। নতুন বই : বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপ-বিভাগের তথ্য মতে, মেলার দ্বিতীয় দিনে বই প্রকাশিত হয়েছে ৫৫টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো- গ্রন্থকুটির প্রকাশিত হাবীবুল্লাহ সিরাজীর কাব্যগ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা’, আগামী প্রকাশনী এনেছে মোনায়েম সরকারের ‘স্বাধীন স্বদেশে জনকের প্রতিধ্বনি’ ও হুমায়ুন মালিকের উপন্যাস ‘মুজিব’, আসাদ মান্নানের কাব্যগ্রন্থ ‘এলিজি মুজিব নামে’, আবদুল গাফ্্ফার চৌধুরীর ‘শেখ কামাল যদি আজ বেঁচে থাকতেন’, অনন্যা প্রকাশ করেছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের প্রবন্ধগ্রন্থ ‘মানুষ মানুষের জন্য এবং অন্যান্য’ এবং হরিশংকর জলদাশের ‘পৌরাণিক গল্প’, অনিন্দ্য এনেছে মোশতাক আহমেদের সায়েন্স ফিকশন ‘দ্য নিউ ওয়ার্ল্ড’। মূল মঞ্চ : বিকাল ৪টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ’ শীর্ষক আলোচনা। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুভাষ সিংহ রায়। আলোচনায় অংশ নেন সংসদ সদস্য আরমা দত্ত এবং নাসির উদ্দীন ইউসুফ। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর