শনিবার, ২০ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হয় সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি

তালুকদার আবদুল খালেক

বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হয় সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাকে বৃহত্তর  খুলনায় শুরু হয় প্রতিরোধ ও সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি। ওই সময় খুলনায় অবরোধ, মিছিল, অস্ত্র সংগ্রহ, মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করা এসব কিছুই চলছিল ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে। তখন সাতক্ষীরা, বাগেরহাট আলাদা জেলা হয়নি। বৃহত্তর খুলনা থেকেই প্রতিরোধ আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হতো। ১ মার্চের পর থেকেই মূলত সবাই প্রস্তুতি নিয়েছে, কোথায় অবরোধ হবে, কীভাবে অস্ত্র সংগ্রহ করা হবে। খুলনার পুলিশ লাইনের অস্ত্র এবং যেসব অস্ত্র বিক্রির দোকান ছিল সেখান থেকে অস্ত্র নেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের পার্লামেন্ট সদস্য, দলের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারির সঙ্গে লিয়াজোঁ করে আন্দোলন সংগ্রামের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ছাত্রলীগ ও ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতারা। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ খুলনায় ছিল হরতাল। শহীদ হাদিস পার্কে সব জায়গা থেকে লোকজন এলো। মিছিল যখন শুরু হয় তখন টিঅ্যান্ডটি অফিসের সামনে পাকিস্তানি সেনারা ছিল। মিছিল থেকে তাদের লক্ষ্য করে জুতা ছোড়া হলে পাকিস্তানি সেনারা গুলি ছোড়ে। তাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন মারা যায়। তখন কামরুজ্জামান টুকু টিঅ্যান্ডটি অফিসের সামনে মোক্তার রহমানের বাড়ির সীমানা পাঁচিল টপকে ওই লাশ নিয়ে আসেন। তারপর থেকেই খুলনায় পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। পাকিস্তানি সেনা-পুলিশ রাস্তায় বের হয়ে আসে। সব জায়গায় থমথমে পরিস্থিতি। ওই দিন কামরুজ্জামান টুকু, নজরুল, আইয়ুব, আমিসহ আরও কয়েকজন খাইবার সাহেবের জিপ নিয়ে খুলনার এমাথা ওমাথা ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করি। সারা রাত ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আমরা বিভিন্ন এলাকার নিরাপত্তায় পাহারা দিতাম। পার্লামেন্ট সদস্য হাবিবুর রহমান খানকে খুলনার গগন বাবু রোড থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে দিয়ে কারফিউর ঘোষণা দিতে বাধ্য করা হয়। শুরুর দিকে আমরা রেডিও সেন্টার আক্রমণ করলে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক যুদ্ধ হয়। ওই যুদ্ধে রূপসার মোফাজ্জেল মারা যায়। ১০ এপ্রিল সাউথ সেন্ট্রাল রোডে বর্তমান পাইওনিয়র কলেজ যেখানে অবস্থিত ওই জমির মালিককে বাড়ির সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর আস্তে আস্তে মানুষ শহর ছাড়তে শুরু করে। আমরা কামরুজ্জামান টুকুর নেতৃত্বে নদীর ওপারে আশ্রয় নিই। তারপর বাগেরহাট ও পরে পিরোজপুর চলে যাই। পিরোজপুরে যাওয়ার সময় সঙ্গে অস্ত্রসহ মাহবুবুল আলম হিরণ ছিল। মুক্তিবাহিনী হয়েছে এপ্রিল মাসের দিকে। ভারতে যাওয়ার পর ট্রেনিং নিয়ে ফিরলে মুক্তিবাহিনী গঠন হয়। কিন্তু এখানে প্রতিরোধ হয়েছিল একেবারে শুরুর দিকেই। আমরা মুন্সিপাড়ায় থাকতাম। আন্দোলন প্রতিরোধ অস্ত্র সংগ্রহে মূল ভূমিকা ছিল ছাত্রদের। তারপর রয়েছে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা। পিরোজপুরে যাওয়ার পর মুজিববাহিনীতে যোগ দেওয়া আমার ভাই আবুল হোসেনের নেতৃত্বে ওই অঞ্চলে যুদ্ধ হয়েছে। পরবর্তীতে মুজিববাহিনীর সঙ্গে আমি বাগেরহাটে চলে আসি। মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে ক্যাম্প করেছিল। তাদের খাওয়া-দাওয়া, তাদের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় যাওয়া। যারা ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে আসত ও বাগেরহাটের ওই অঞ্চলে যেত তারা সেখানেই থাকত। ওই সময় অর্থ সংগ্রহ করে তাদের খাওয়া-দাওয়া থাকার ব্যবস্থা করেছি। ওই সময় সবাই ভয়ের মধ্যে ছিল। কিন্তু আমরা সামনে থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদে থাকার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা করেছি।

লেখক : খুলনা সিটি মেয়র, অনুলেখক : সামছুজ্জামান শাহীন

সর্বশেষ খবর