সোমবার, ২২ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

জমে উঠছে বইমেলা

প্রথম যুক্ত হলো জাতীয় প্রেস ক্লাবের স্টল

মোস্তফা মতিহার

জমে উঠছে বইমেলা

বইপ্রেমীদের আগমন বাড়ছে মেলায় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

অমর একুশে বইমেলা শুরুর আগে এবারের মেলা নিয়ে নেতিবাচক ধারণাই ছিল লেখক-পাঠক-প্রকাশকসহ সব শ্রেণির মানুষের। ‘করোনার ভয়ে মানুষ আসবে না, মেলা জমবে না, ছুটির দিন ছাড়া লোকজন আসবে না, মেলা না হওয়াই ভালো ছিল’- এমন কথাবার্তা শোনা গিয়েছিল লোকমুখ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তবে, বাস্তবতা সম্পূর্ণ উল্টো। গতকাল মেলার চতুর্থ দিন নিন্দুকদের সব ধারণা মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়েছে বইপ্রেমীরা।

প্রকাশকরা ভেবেছিলেন শুক্র ও শনিবার দুই দিনের ছুটির পর রবিবার মেলায় লোকসমাগম খুব  একটা হবে না। কিন্তু বিকাল ৩টায় মেলার প্রবেশদ্বার উন্মোচনের পর ধীরে ধীরে লোকজন আসা শুরু করে। সন্ধ্যার দিকে সেই চিত্র এবারের মেলা নিয়ে প্রকাশকদের নতুন করে আশাবাদী করে তোলে। প্রকাশক ও বিভিন্ন স্টলের বিক্রয়কর্মীরা বলছেন, অন্যান্য বছর এক সপ্তাহ পর মেলায় লোকসমাগম বাড়ে এবং মেলা জমে ওঠে। এবার তৃতীয় ও চতুর্থ দিনেই মেলা জমে উঠেছে। শুধু লোকজন আসছেই না, প্রিয় লেখকের পছন্দের বইটি কিনেও বাড়ি ফিরছেন। অবসর প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা বলেন, যা আশা করেছিলাম তার চেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। ভেবেছিলাম নিয়ম রক্ষার বইমেলাতে করোনার ভয়ে মানুষ খুব একটা আসবে না। কিন্তু আমার ধারণা ভুল। এদিনের বইমেলায় আসেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। তিনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেশ কয়েকটি প্রকাশনা সংস্থার স্টল ঘুরে দেখেন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের স্টল উদ্বোধন : ‘অমর একুশে বইমেলা-২০২১’ এ প্রথমবারের মতো স্টল দিয়েছে জাতীয় প্রেস ক্লাব। ফিতা কাটার মধ্য দিয়ে গতকাল বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের বহেরা চত্বরে স্থাপিত এই স্টলের উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, যুগ্ম-সম্পাদক আশরাফ আলী, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য কাজী রওনাক হোসেন, রেজানুর রহমান, শাহনাজ বেগম পলি, শাহনাজ সিদ্দিকী সোমা প্রমুখ। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় উপহারস্বরূপ প্রতিমন্ত্রীর হাতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের স্মরণিকা ‘রক্তে গাঁথা বর্ণমালা’ তুলে দেন ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন। উদ্বোধনকালে ডা. মুরাদ হাসান বলেন, প্রেস ক্লাবের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা। সব শ্রেণির মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় এ বইমেলা। সাংবাদিকরা সবসময় খবর লেখেন। তাদের মধ্যে অনেকেই সৃজনশীল লেখা লেখেন। এই স্টল থাকায় সেই লেখকদের সঙ্গে পাঠকদের যুক্ত হওয়ার একটি সুযোগ সৃষ্টি হলো। ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, প্রেস ক্লাব প্রথমবারের মতো অমর একুশে বইমেলায় স্টল দিল। আমাদের যেসব সদস্যের বই প্রকাশ পেয়েছে তাদের সবার বই এই স্টলে স্থান পাবে। যার মধ্য দিয়ে মেলায় আসা পাঠকরা প্রেস ক্লাবের সদস্যদের সৃজনশীল লেখনীর সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন। এতে পাঠকদের সঙ্গে জাতীয় প্রেস ক্লাবের মেলবন্ধন সৃষ্টি হবে। এরপর প্রতিমন্ত্রী ফিতা কেটে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির স্টল উদ্বোধন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিআরইউর সভাপতি মুরসালিন নোমানী, সহ-সভাপতি ওসমান গনি বাবুল, যুগ্ম-সম্পাদক আরাফাত দাড়িয়া, তথ্য প্রযুক্তি ও গবেষণা সম্পাদক হালিম মোহাম্মদ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মিজান চৌধুরী প্রমুখ।

 

নতুন বই : বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপ-বিভাগের তথ্যমতে, গতকাল বইমেলায় নতুন বই এসেছে ৮১টি। তার মধ্যে গল্প ৮টি, উপন্যাস ১১টি, প্রবন্ধ ১টি, কবিতা ২৩টি, শিশুসাহিত্য ৩টি, জীবনী ৪টি, মুক্তিযুদ্ধ ১৭টি, বিজ্ঞান ১টি, ভ্রমণ ২টি, ইতিহাস ২টি, রাজনীতি ১টি, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যবিষয়ক ২টি, সায়েন্সফিকশন ১টি এবং অন্যান্য ৫টি। এর মধ্যে চারুলিপি থেকে প্রকাশ হয়েছে শেখ হাসিনার প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : জনক আমার, নেতা আমার’, অবসর প্রকাশনী এনেছে গোলাম মুরশিদের ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাংস্কৃতিক পটভূমি, আগামী প্রকাশনী এনেছে মহাদেব সাহার কাব্যগ্রন্থ ‘৫০ প্রেমের কবিতা’, বেলাল চৌধুরীর ‘বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ’, হাসনাত আবদুল হাইয়ের ‘বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ’, আনিসুজ্জামানের ‘বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ’, শামসুর রাহমানের ‘বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ’, অন্যপ্রকাশ এনেছে হরিশংকর জলদাসের ‘গগন সাপুই’, হাসনাত আবদুল হাইয়ের ‘জনকের গল্প’, হক ফারুক আহমেদের ‘জলের জমিন’, অনন্যা এনেছে আসিফ নজরুলের ‘নিষিদ্ধ কয়েকজন’, মুনতাসির মামুনের ‘মুক্তিযুদ্ধের ভিন্ন দলিলপত্র’ ইত্যাদি।

মূলমঞ্চ : বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ শীর্ষক আলোচনা। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী। আলোচনায় অংশ নেন কল্যাণী ঘোষ, বুলবুল মহলানবীশ এবং আশরাফুল আলম। সভাপতিত্ব করেন রামেন্দু মজুমদার।

প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন ও মুক্তি-সংগ্রামের ক্ষেত্রে ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এর মাধ্যমে বিশ্ববাসী জানতে ও বুঝতে পেরেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের যৌক্তিকতা, কর্মকান্ড ও মুক্তিযুদ্ধের বার্তা। দেশবাসী আশ্বস্ত হয়েছেন এই ভেবে যে, স্বাধীনতা সংগ্রাম চলছে; তরুণরা উদ্বুদ্ধ হয়ে দলে দলে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অংশগ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতাকামী জনগণ ও বিশ্ববাসীর জন্য ইতিবাচক বিশ্ব জনমতের জন্য স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বস্তুত ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর