মঙ্গলবার, ২৩ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

পুঠিয়ার চার নদীর চিহ্ন নেই

অস্তিত্ব হারাচ্ছে আরও চার

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

পুঠিয়ার চার নদীর চিহ্ন নেই

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া নারদ ও ঝলমলিয়া এলাকার মুসা খাঁ নদ হয়ে গেছে বিলীন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট-বড় আট নদীর মধ্যে চারটির চিহ্ন নেই। অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে অপর চারটিও। রক্ষণাবেক্ষণ ও খনন না করায় এ ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া দখলদাররা দুই পাড় কেটে নদীর বেশির ভাগ দখল করে নিয়েছে। এক সময়ের খরস্রোতা নদীগুলোর এক অংশে চাষ হচ্ছে ফসল অপর অংশে দীর্ঘদিন থেকে পানি চলাচল না থাকায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে বর্ষা মৌসুমে দুই কূল উপচে জনপদ প্লাবিত হচ্ছে। খরা মৌসুমে ফসলি জমিতে সেচ সংকটের সৃষ্টি হচ্ছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এক সময়ের গভীর খরস্রোতা মুসা খাঁ, নারদ, হোজা ও সন্ধ্যা নদী অস্তিত্ব হারাতে চলেছে। রায়চাঁদ, নিশানিশি, আইচাঁদ, সোকা নদীর চিহ্ন পর্যন্ত নেই। তবে গত দুই বছর আগে নারদ ও হোজা নদীর সংস্কার করা হলেও পানি চলাচল না থাকায় এবং বিভিন্ন স্থানে বাঁধের কারণে আবারও তা ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের তথ্যমতে, এক সময় পুঠিয়া, নাটোর রাজপরগনাসহ পশ্চিম বাংলার কলকাতা ও গাজীপুর রাজাদের যোগাযোগ মাধ্যম ছিল এই নদীপথ। তাদের যাতায়াত ও পণ্য বহনে নদীগুলো ব্যবহার করা হতো। সে সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সওদাগররা নদীপথে বাণিজ্য করত। জনশ্রুতি আছে মুসা খাঁ নদীর উপজেলার পানানগর এলাকায় খরস্রোতে ধনপতি চাঁদ সওদাগরের কয়েক হাজার মণ মালবোঝাই বাণিজ্যিক নৌকা ডুবে হারিয়ে যায়। অথচ বর্তমানে সে স্থানে পানি তো দূরের কথা নদীর কোনো চিহ্ন পর্যন্ত দেখা যায় না। মুসা খাঁ নদী বর্তমানে ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে। এ উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হওয়া সুন্দর, পাবলই, বারনই, রায়চাঁদ নদীর বর্তমানে চিহ্ন পর্যন্ত নেই। জানা গেছে, আশির দশকে রাজশাহীর পদ্মার শাখা বড়াল নদীর মুখে স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়। যার ফলে পুঠিয়ার মুসা খাঁসহ সব নদী ও খালের পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আসু চন্দ্র দাস নামের এক প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, কয়েক দশক আগে উপজেলার নারদ নদীর তীরে পুঠিয়ার কেন্দ্রীয় শ্মশানঘাট ছিল। কিন্তু সেখানে বছরের বেশির ভাগ সময় পানি স্বল্পতার কারণে তা স্থানান্তর করা হয় মুসা খাঁ নদীর পীরগাছা এলাকায়। তিনি আরও বলেন, ওই নদীগুলোর বেশির ভাগ জায়গা অবৈধভাবে ভরাট করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা নিজেদের দখলে নিয়েছে। জিউপাড়া এলাকার শফিকুল ইসলাম বলেন, কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ও রক্ষণাবেক্ষণ না করায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলো অস্তিত্ব হারিয়েছে। খরা মৌসুমে কৃষিকাজে ব্যবহারের জন্য ওই নদীগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পাওয়া যায় না। আবার নদীগুলো ভরাট হওয়ায় বর্ষা মৌসুমের অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের পথও বন্ধ হয়ে গেছে। পুঠিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম হীরা বাচ্চু বলেন, বর্তমান সরকার নদী রক্ষা ও পুনঃসংস্কারের কাজ জোরদার করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় এই উপজেলায় পানি চলাচলের জন্য কয়েকটি নদী দখলমুক্ত করে এর মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। ইতিমধ্যে আরও কয়েকটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। নদীগুলোতে পর্যায়ক্রমে কাজ করা হবে।

সর্বশেষ খবর