বুধবার, ২৪ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ

এক দিনের ব্যবধানে সংক্রমণ বেড়েছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ

এক দিনের ব্যবধানে সংক্রমণ হার বেড়েছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। ২৫২ দিন পর গতকাল করোনায় সর্বোচ্চ আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৫৫৪ জন, মারা গেছেন ১৮ জন। এর আগের দিন আক্রান্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ৮০৯ জন। মার্চ মাসের শুরু থেকেই করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ হার উৎকণ্ঠা বাড়াচ্ছে।

 

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৫ জুলাই ৩ হাজার ৫৩৩ জনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। সে হিসাবে ২৫২ দিন সর্বোচ্চ শনাক্ত ছিল গতকাল। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রোগী শনাক্তের হার ছিল ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। হঠাৎ করেই পরের দিন ১ মার্চ শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৩১। গত সোমবার করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৮০৯ জন। শনাক্তের হার ছিল ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ। গতকাল করোনা আক্রান্তের হার ছিল ১৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ। প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। মৃত্যুহারও আশঙ্কাজনক। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে পুরুষ ১২ জন ও ছয়জন নারী। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৭ জন ও বাড়িতে একজন মারা যান। এ নিয়ে দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৮ হাজার ৭৩৮ জন। গতকাল দেশের সরকারি ও বেসরকারি ২১৯টি ল্যাবরেটরিতে ২৬ হাজার ৩৫৭টি নমুনা সংগ্রহ ও ২৫ হাজার ৯৫৪টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন আরও ৩ হাজার ৫৫৪ জন শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৭৭ হাজার ২৪১ জন। মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ৪৪ লাখ ৬০ হাজার ১৮৪ জন। এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১ হাজার ৮৩৫ জন। এ নিয়ে দেশে সুস্থ রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২৫ হাজার ৯৯৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ১২ শতাংশ। দেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগীর মৃত্যু হয়। গতকাল পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ৮ হাজার ৭৩৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬ হাজার ৬০৭ জন ও নারী ২ হাজার ১৩১ জন। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতির অন্যতম কারণ কয়েক প্রকারের করোনাভাইরাসের ভেরিয়েন্ট। প্রথম করোনাভাইরাসের যে ভেরিয়েন্ট সারাবিশ্বে সংক্রমণ ঘটিয়ে ছিল সেটি কভিড-১৯। এরপর দ্বিতীয় ভেরিয়েন্টের নাম ইউকে ই-১১৭, তৃতীয় ভেরিয়েন্টের নাম ইউকে ই-১৫২৫, চতুর্থ সাউথ আফ্রিকান ভেরিয়েন্ট ই-১৩৫, পঞ্চম ভেরিয়েন্ট ব্রাজিলিয়ান পি-১। যে টিকাগুলো আবিষ্কৃত হয়েছে সেগুলো বেশিরভাগ ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে কাজ করে। কিন্তু কোনো কোনো ভেরিয়েন্টের ব্যাপারে কাজ করে না বা কাজ করে কিনা এটা এখনো প্রমাণিত হয়নি। তাই টিকা নিলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় জোর দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ও দেশে নতুন ভেরিয়েন্টের কারণে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। করোনাভাইরাসের জিন বিশ্লেষণে নতুন দুটি ভেরিয়েন্ট পাওয়া গেছে। যার সঙ্গে যুক্তরাজ্যের অত্যধিক সংক্রমণকারী ভেরিয়েন্টের মিল রয়েছে। এবার অপেক্ষাকৃত কম বয়সীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। করোনা সংক্রমণ বাড়লেও টিকার নিবন্ধন কমেছে। দেশে করোনার গণটিকাদান শুরু হয় ৭ ফেব্রুয়ারি। শুরুর দিকে দৈনিক টিকাগ্রহীতার সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজারের বেশি ছিল। অথচ গতকাল টিকা নিয়েছেন ৭৮ হাজার ৩৩০ জন। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেছেন, নাগরিকদের নিজেদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা করতে হবে। টিকা নিলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। বাইরে বের হলে মাস্ক পরতে হবে, হাত ধুতে হবে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। করোনা টিকা নিলে মৃত্যুঝুঁকি কমে। এ জন্য করোনায় সম্মুখসারির কর্মী ও ৪০ বছরের বেশি বয়সীরা অবশ্যই টিকা নিবেন। টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পরে কয়েকজন আক্রান্ত হয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজ নিলে অ্যান্টিবডি আরও শক্তিশালী হবে। টিকা নেওয়ার পরে করোনা হলেও জটিলতা কমবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর