শিরোনাম
বুধবার, ৩১ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

২৬ বছর পর খুলনায় কাশেম হত্যা মামলার রায় ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

খুলনার আলোচিত মহানগর জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ আবুল কাশেম হত্যা মামলায় পলাতক আসামি মো. তারিক হোসেনকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আদালত। অন্য ছয় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায়  তাদের খালাস দেওয়া হয়েছে। খালাসপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল গফফার বিশ্বাস, কেসিসি নির্বাচনে সাবেক জাপা মেয়র প্রার্থী মুশফিকুর রহমান, তার ভাই ওসিকুর রহমান, মফিজুর রহমান, তরিকুল হুদা টপি ও মিল্টন। গত সোমবার দুপুরে জন?নিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাইফুজ্জামান হিরো এই রায় ঘোষণা করেন। দীর্ঘ ২৬ বছর পর চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হলো। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আরিফ মাহমুদ লিটন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রায় ঘোষণার সময় সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল গফফার বিশ্বাস আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। এদিকে আলোচিত এই মামলার রায়কে কেন্দ্র করে আদালতপাড়ায় ছিল কৌতূহলী মানুষের ভিড়। নিরাপত্তা নি?শ্চিত করার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। জানা যায়, ১৯৯৫ সালের ২৫ এপ্রিল দুপুরে নগরীর পিকচারপ্যালেস মোড়ে আবুল কাশেম ও তার ব্যক্তিগত গাড়ির চালক মিকাইল হোসেনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মামলাটি খুলনা থানায় দায়ের করা হলেও পরে এটি তদন্ত করে সিআইডি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক সাইফুর রহমান ১৯৯৬ সালের ৫ মে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এ মামলার বিচারাধীন সময় মামলার অন্যতম আসামি সাবেক ডেপুটি মেয়র ইকতিয়ার উদ্দিন বাবলু নগরীর বানরগাতি এলাকায় গুলিতে নিহত হন।

এদিকে দীর্ঘ ২৬ বছরে এ হত্যাকান্ড নিয়ে খুলনা মহানগর জাতীয় পার্টিতে কয়েকদফা দ্বিধা-বিভক্তির সৃষ্টি হয়েছে। মামলার আসামি খুলনা-৩ আসনের জাপার সাবেক এমপি আবদুল গফফার বিশ্বাস এরই মধ্যে দলীয় রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। ২০১৮ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আরেক আসামি মুশফিকুর রহমানকে জাপার মেয়র প্রার্থী করা হলে দলে বড় ধরনের ভাঙন সৃষ্টি হয়। ওই সময় জাপার মহানগর সভাপতি শেখ আবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মো. তরিকুল ইসলামসহ সামনের সারির নেতারা পদত্যাগ করেন। কিন্তু রায়ে আবদুল গফফার বিশ্বাস, মেয়র প্রার্থী মুশফিকুর রহমান, তার ভাই ওসিকুর রহমান খালাস পাওয়ায় দীর্ঘদিনের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে বলে মনে করেন জাপার সিনিয়র নেতারা। 

জানা যায়, রায় ঘোষণার পর জাপা নেতা মুশফিকুর রহমানের কর্মী-সমর্থকরা আদালতপাড়া থেকে মিছিল নিয়ে ডাকবাংলা মোড়ের দলীয় কার্যালয়ে যান। সেখানে নেতা-কর্মীদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করা হয়। এ রায়ে নিহতের পরিবারের সদস্যরা ন্যায়বিচার না পাওয়ার কথা বলে আদালত প্রাঙ্গণেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবে রায়ে স্বস্তি জানিয়েছে জাপার সিনিয়র নেতারা। জাপার সাবেক মহানগর আহ্বায়ক আবদুল গফফার বিশ্বাস বলেন, ‘২৬ বছর ধরে এ অস্বস্তি টেনে নিতে হয়েছে। ঘটনার সময় খুলনায় না থাকলেও আমাকে আসামি করা হয়। এতে দলের মধ্যেও দ্বিধাবিভক্তি তৈরি হয়েছে।’ জাপা কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, দলের জনপ্রিয় সিনিয়র একজন নেতা নিহত হয়েছেন, ওই মামলার আসামি আবার নিজ দলের নেতারাই- সব মিলিয়ে টানাপোড়েন ছিল দীর্ঘ সময়। এই রায়ের মাধ্যমে কলঙ্কমুক্ত হলো জাতীয় পার্টি। বিগত দিনের বিভেদ ভুলে তৃণমূলে এবার দল গঠনে সবাই ঐক্যবদ্ধ হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন নেতারা।

 

সর্বশেষ খবর