বৃহস্পতিবার, ১ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

দ্বৈত ভোটার ৫ লাখ ২৯ হাজার

১০৫৭ জনের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশনা, বাকিদের বিরুদ্ধে হবে কি না আজ কমিশন বৈঠকে সিদ্ধান্ত

গোলাম রাব্বানী

একজন নাগরিক, একাধিকবার বা একাধিক জায়গায় ভোটার হওয়ার সুযোগ নেই বলে নির্বাচন কমিশন বারবার বললেও; সারা দেশে ৫ লাখ ২৯ হাজার ৮০৬ জন দ্বৈত ভোটার শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া দ্বৈত ভোটার হওয়ার চেষ্টা করেছেন আরও ৬ লাখ ৩৮ হাজার ১৩৯ জন। তাদের আঙ্গুলের ছাপ ইসির সার্ভারে থাকা ভোটারের আঙ্গুলের  ছাপের সঙ্গে মিল রয়েছে। এদিকে দ্বৈত ভোটার হওয়ার কারণে ১ হাজার ৫৭ জন নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। তবে তারা কীভাবে দ্বৈত ভোটার হলেন? সেই উত্তর দিতে পারছে না নির্বাচন কমিশন। এমন কি এ বিষয়ে কোনো কথাও বলতে রাজি হননি জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ূন কবীর।   

ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০০৮ সাল থেকে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৫ লাখ ২৯ হাজার ৮০৬ জন দ্বৈত ভোটার শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৬ লাখ ৩৮ হাজার ১৩৯ জনের আঙ্গুলের ছাপ ইসির সার্ভারে থাকা বর্তমান ভোটারের আঙ্গুলের ছাপের সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে। তারা বলেন, ইতিমধ্যে ১০৫৭ জন দ্বৈত ভোটারের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রেজিস্ট্রেশন অফিসার তথা উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসার ৫৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। ইসির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যারা দুইবার করে ভোটার হয়েছেন, তারা সবাই দুটি করে পরিচয়পত্র পায়নি। যারা দুটি করে পরিচয়পত্র নিয়েছেন, তাদের বেশিরভাগেরই পরিচয়পত্র লক করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যাদের আঙ্গুলের ছাপে মিল পাওয়া গেছে, তাদের মধ্যেও দ্বৈত ভোটার থাকতে পারেন। ইসির একটি টিম এই বিষয় খতিয়ে দেখছে।  আইন অনুযায়ী, একাধিকবার ভোটার হওয়া, জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো মিথ্যা বা বিকৃত তথ্য প্রদান বা তথ্য গোপন করা দন্ডনীয় অপরাধ। এই অপরাধে জেল-জরিমানার বিধান আছে। আবার কোনো নিবন্ধন কর্মকর্তা কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া, দায়িত্বে অবহেলাপূর্বক কোনো কাজ বা ইচ্ছাকৃত ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য দোষী হলে তাঁরও জেল-জরিমানার বিধান আছে। অন্যদিকে দ্বৈত ভোটারের বিরুদ্ধে মামলা করার বিষয়ে ২০১৮ সালে নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেই অনুযায়ী ১০৫৭ জনের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশনাও দেওয়া হয়। তবে বর্তমানে সারা দেশে থাকা ৫ লাখ ২৯ হাজার ৮০৬ জন দ্বৈত ভোটারের বিরুদ্ধে মামলা হবে কি না? সেই বিষয়ে আজ কমিশনের ৭৮তম সভায় সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। ইসির বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে বিষয়টি রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে কীভাবে দ্বৈত ভোটার হওয়া রোধ করা যায়, সে বিষয়ে আজকের কমিশন বৈঠকে বেশ কিছু সুপারিশ উপস্থাপন করবে কমিশনের সংশ্লিষ্ট কমিটি। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, নাগরিকদের একটি অংশ অজ্ঞতাবশত দ্বিতীয়বার ভোটার হওয়ার চেষ্টা করেন। বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি করার জন্য মানুষ একাধিক এনআইডি করার চেষ্টা করেন। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের একটি অংশ এ দেশের নাগরিক সেজে বিদেশ যাওয়ার জন্য জালিয়াতির মাধ্যমে এনআইডি করেন। এর বাইরে ভুয়া তথ্য দিয়ে ব্যাংক ঋণ নেওয়া, অন্যের সম্পত্তি আত্মসাৎ; অনৈতিকভাবে অন্যের পেনশন ও মুক্তিযোদ্ধাভাতা ভোগ করা; বয়স কমানো ও স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করে সরকারি চাকরিতে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা, তথ্য পরিবর্তন করে বিদেশ যাওয়ার জন্য অনেকে জালিয়াতির মাধ্যমে এনআইডি করে থাকেন বা করার চেষ্টা করেন। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইনে বলা আছে, কোনো নাগরিক জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তির লক্ষ্যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো মিথ্যা বা বিকৃত তথ্য প্রদান বা তথ্য গোপন করিলে তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদন্ড বা অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন। কোনো নাগরিক জ্ঞাতসারে একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করিলে তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনূর্ধ্ব এক বৎসর কারাদন্ড বা অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন। আইনে বলা আছে- কোনো রেজিস্ট্রেশন অফিসার, সহকারী রেজিস্ট্রেশন অফিসার অথবা এই আইন দ্বারা বা ইহার অধীন ভোটার তালিকা প্রণয়ন, পুনঃপরীক্ষা, সংশোধন বা হালনাগাদ সংক্রান্ত কোনো দায়িত্ব পালন করিবার জন্য নির্দেশিত কোনো ব্যক্তি, কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া, দায়িত্বে অবহেলাপূর্বক কোনো কাজ বা ইচ্ছাকৃত ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য দোষী হন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ছয় মাস কারাদন্ড বা অনধিক ২ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন।

সর্বশেষ খবর