শুক্রবার, ২ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

মামলার বাদীই খুনের পরিকল্পনাকারী

চাঞ্চল্যকর মনজিল হত্যা

মাহবুব মমতাজী

রাজধানীর বাড্ডায় নিজ ফ্ল্যাটে খুন হন মনজিল হক (৩০)। এই খুনের প্রায় সাড়ে তিন বছর পর সিআইডির তদন্তে বেরিয়ে এসেছে খুনের পরিকল্পনাকারী মামলার বাদী নিজেই। ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর আফতাবনগরের বি ব্লকের ৩ নম্বর রোডের বাসা থেকে মনজিলের গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই দিনই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী সিয়াম ও মনজিলের বান্ধবী শারমিন সুলতানা নিশিকে আটক করা হয়। পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ঘটনার দিনই মনজিলের চাচা ফরুক মিয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাত চারজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। প্রথমে মামলাটি তদন্ত করেন বাড্ডা থানার এসআই কামরুল হাসান। এরপর মামলাটি স্থানান্তর করা হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে। পাঁচ মাস পর সেখান থেকে মামলাটি স্থানান্তর করা হয় সিআইডিতে। চলতি বছরের ১৩ মার্চ চট্টগ্রামের শেরশাহ কলোনি থেকে মনজিলের সৎভাই ইয়াসিনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তার দেওয়া তথ্যে রাজধানীর কোনাপাড়া থেকে রবিউল ইসলামকে গ্রেফতার করে। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকেই  তিন দিনের রিমান্ডে নেয় তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক মো. শামসুদ্দিন। ১৮ মার্চ তারা মনজিল হত্যায় সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। সিআইডির পরিদর্শক মো. শামসুদ্দিন জানান, খুনের পরিকল্পনায় ইয়াসিন ছাড়াও আরও চারজনের নাম পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ছিলেন- মামলার বাদী ফারুক মিয়া, মনজিলের সৎমা লায়লা ইয়াসমিন লিপি, ইয়াসিনের মামা সিদ্দিক ও আবু ইউসুফ নয়ন। এরা ঘটনার আগের দিন রামপুরায় এক বাসায় ৫ লাখ টাকায় ভাড়াটে খুনি ঠিক করার সিদ্ধান্ত নেয়। খুনে ইয়াসিন ও রবিউলসহ আরও দুজন অংশ নিয়েছিলেন। এ দুজন পলাতক আছেন, তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আর খুন করার জন্য নিউমার্কেট থেকে দুটি ছুরি কেনার জন্য ইয়াসিনকে ২০ হাজার টাকা দেন তার দুই মামা সিদ্দিক ও আবু ইউসুফ নয়ন। ঘটনার দিনই মনজিলের ফ্ল্যাটে অজ্ঞাত চার যুবক এসেছিলেন বলে ভবনের অন্যান্য বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছিল পুলিশ। তারাই তাকে হত্যা করে।

সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার জাকির হোসাইন বলেন, খুনি এবং খুনের পরিকল্পনাকারীদের শনাক্ত করতে দীর্ঘ সময় তদন্ত করে প্রযুক্তির সহায়তায় ইয়াসিনকে গ্রেফতারের পরই পুরো রহস্য উদঘাটিত হয়েছে।

 তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মনজিলের জমি-জমা ও টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিতেই তাকে খুনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। খুনের পর ঘটনাস্থল থেকে দুটি রক্তমাখা ছুরি ও চার সেট কালো পোশাক উদ্ধার করা হয়। ভাড়াটে খুনিরা সেখানেই কালো পোশাকগুলো খুলে রেখে চলে যায়। আর ইয়াসিন তার কাপড় খুলে ফেলে দেয় বনশ্রীর ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলের সামনে। খুনের ঘটনা ঘটানোর পর বিকালে মালিবাগ আবুল হোটেলের সামনে দুই মামা সিদ্দিক ও নয়নের সঙ্গে দেখা করেন ইয়াসিন। তারাই ইয়াসিনকে চুয়াডাঙ্গায় আত্মগোপনে পাঠান। সেখানে এক মাস থাকার পর সিলেটে গিয়ে এক বছর অবস্থান করেন। এরপর ইয়াসিন চট্টগ্রামে ফুফু রেহেনা আক্তারের কাছে চলে যান। তার আশ্রয়ে আড়াই বছর ধরে সেখানে অবস্থান করছিলেন। চট্টগ্রামে ইয়াসিন নাম বদলে আরিফ নাম ধারণ করে। এই নামে স্থানীয় কিছু অনলাইন পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু করেন। তার ফুফুও নাম বদলে বেবি সুলতানা নাম রাখেন। ইয়াসিন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন তার এক বন্ধুর মাধ্যমে। মনজিল খুন হওয়ার প্রায় ৫ বছর আগে একটা বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের কয়েক মাস পরেই স্ত্রীকে তালাক দেন। এরপর বি-ব্লকের ৩ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাড়ির সপ্তম তলার বাসায় একাই থাকতেন। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার হোমনায়।

সর্বশেষ খবর