রবিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

সোনার গয়না রপ্তানিতে বিশাল সম্ভাবনা

রুহুল আমিন রাসেল

সোনার গয়না রপ্তানিতে বিশাল সম্ভাবনা

হাতে তৈরি সোনার গয়নার কদর বাড়ছে বিশ্ববাজারে। ফলে বাংলাদেশি কারিগরদের তৈরি সোনার গয়না রপ্তানির বিশাল সম্ভাবনা উঁকি দিয়েছে। প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা মূল্যের গয়না রপ্তানির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলারি ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন।

সংগঠনটি বলছে- ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, আমেরিকা ও কানাডার মতো উন্নত দেশে বাংলাদেশি গয়না রপ্তানির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রয়োজন সহজ অলংকার রপ্তানি নীতিমালা। এ জন্য আসছে বাজেটে নীতি সহায়তা প্রয়োজন। বিশ্ববাজারে হাতে তৈরি বাংলাদেশি সোনার গয়না রপ্তানির সম্ভাবনা তুলে ধরে বাংলাদেশ জুয়েলারি ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিশ্ববাজারে হাতে তৈরি যে কোনো পণ্যের কদর সবচেয়ে বেশি। আর এই পণ্য যদি হয় সোনার গয়না, তবে তো কথাই নেই। বাংলাদেশের সোনার অলংকার তৈরির কারিগররা খুবই নিখুঁতভাবে গয়না তৈরি করেন। যা মেশিনে সম্ভব নয়। আবার হাতে তৈরি গয়নায় সোনার পরিমাণও কম লাগে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববাজারে হাতে তৈরি সোনার গয়না রপ্তানিতে আসছে বাজেটে নীতি সহায়তা প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, ভারত বিশ্ববাজারে ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সোনার গয়না রপ্তানি করছে। মহামারী করোনাভাইরাসের আগে ১৭ হাজার ৬০০ টন সোনার গয়না রপ্তানি করেছে ভারত। বাংলাদেশ থেকেও প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা মূল্যের সোনার গয়নার পণ্য ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, আমেরিকা ও কানাডার মতো উন্নত দেশগুলোতে রপ্তানি সম্ভাবনা দেখছি।  

বাংলাদেশ জুয়েলারি ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ উত্তম বণিক বলেন- হাতে তৈরি সোনার গয়নার অপরিসীম সম্ভাবনা রয়েছে। সবচেয়ে বেশি আগ্রহ মধ্যপ্রাচ্যের। কিছু দিন আগেও দুবাই থেকে একটি ব্যবসায়িক দল ঢাকার বাজার পরিদর্শন করে মুগ্ধ হয়ে ফিরে গেছে। শুধু একটি কোম্পানিই প্রতিদিন ২০ কেজি হাতে তৈরি সোনার গয়না নিতে চেয়েছে। এটা রপ্তানি সম্ভাবনার বড় উদাহরণ। এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সরকারের নীতি সহায়তা প্রয়োজন। বেঙ্গল ডায়মন্ড লিমিটেডের এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও বলেন, বাংলাদেশি দক্ষ কারিগরদের হাতে তৈরি সোনার গয়না রপ্তানি শুরু করতে পারলে মাত্র এক বছরেই ভালো অবস্থানে যাবে জুয়েলারি ব্যবসা। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোতে থাকা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা বা জিএসপি সুবিধা রপ্তানিতে বড় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আরেকটি বিষয় হলো, ২১ ক্যারেটের সোনার গয়না তৈরিতে বাংলাদেশি কারিগররা খুবই দক্ষ। যার চাহিদা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্ববাজারে ব্যাপক। এই সুযোগ ও বিশাল রপ্তানি সম্ভাবনা কাজে লাগাতে আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে সোনার গয়না তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে নীতি সহায়তা দরকার। এর আগে আসছে ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট সামনে রেখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরকে বাজেট প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলারি ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন। গত ২২ মার্চ সংগঠনটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত প্রস্তাবনায় বলা হয়, বাংলাদেশে হাতের তৈরি অলংকার ৭ থেকে ৮টি স্থানের অত্যন্ত ছোট ছোট কারখানায় প্রায় ১০টি স্তরে প্রস্তুত সম্পন্ন হয়। এই কারখানাগুলো প্রতিটির মালিক ভিন্ন ব্যক্তি এবং একজনের সঙ্গে অন্যজনের কোনো লাভ- লোকসানের সম্পর্ক নেই। যা সুপারভাইজড বন্ডেড ওয়্যার হাউসের আওতায় আনলে ব্যাপক অর্থ খরচ করে নতুন কারখানা স্থাপন করতে হবে। যা প্রাথমিকভাবে অলংকার রপ্তানিতে ইচ্ছুক উদ্যোক্তাদের সাহস ও আগ্রহ হারাবে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অলংকার ব্যবসায়ীরা রপ্তানির প্রাথমিক পর্যায়ে নিজস্ব উৎস থেকে তৈরি অলংকার রপ্তানি করার পর পুনরায় বিশুদ্ধ সোনা আমদানি করে তা প্রতিস্থাপন করে। এসব বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের বর্তমান অলংকার রপ্তানি নীতিমালার সঙ্গে আমরা আরও কিছু সংযুক্ত করার প্রস্তাব করছি।

ওই পত্রে বলা হয়, বর্তমানে বন্ডেড ওয়্যার হাউস ছাড়াও এই বাংলাদেশ জুয়েলারি ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত দেশের যে কোনো বৈধ অলংকার ব্যবসায়ী, তাহার নিজস্ব উৎস থেকে সর্বনি¤œ ৮ শতাংশ মূল্য সংযোজন করে বিদেশে রপ্তানি করতে পারবে। একজন বৈধ অলংকার ব্যবসায়ী সরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত, তাই তার প্রতিষ্ঠানের সব অলংকার বৈধ বলে বিবেচিত। ওই ৮ শতাংশ মূল্য সংযোজী বৈদেশিক মুদ্রায় ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে ফেরত আনবেন। বাকি ৯২ শতাংশ পুনঃ আমদানি করে তা প্রতিস্থাপন করতে হবে। এই ক্ষেত্রে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষ ছাড়াও বাংলাদেশ জুয়েলারি ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন সরাসরি তত্ত্বাবধান করবেন। এই প্রস্তাবনা নিয়ে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন-এফবিসিসিআই সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে। যেহেতু স্বর্ণালংকার আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যে রপ্তানি করা হয়। তাই স্বর্ণালংকার রপ্তানির জন্য কাঁচামাল হিসেবে বিশুদ্ধ সোনা দেশের যে কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং ডিলারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে সরবরাহের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সংগঠনটি বলেছে, বাংলাদেশের গয়নার ডিজাইনের মতো ভারতের গয়নার ডিজাইনের হুবুহু সদৃশ্য আছে। কিন্তু আমাদের গয়নার কারুকার্যতা ভারতের তুলনায় অনেক সুন্দর ও ওজনে হালকা থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় স্বর্ণালংকার রপ্তানিকারকরা অনেক বছর ধরে বিশ্ববাজারে ব্যবসা করার জন্য এগিয়ে আছে। এ অবস্থায় আমাদের অলংকার বিশ্ববাজারে পরিচিতি করে তুলতে প্রাথমিকভাবে কমপক্ষে তিন বছরের জন্য সরকারের পক্ষ হইতে মূল্য সংযোজনের ওপর ৫০ শতাংশ ভতুর্কি দেওয়া হলেই সফলতা লাভ করা যাবে।

ওই পত্রে আরও বলা হয়, বর্তমানে দেশের ডায়মন্ড কাটিং ও পলিশিং ইন্ডাস্ট্র্রিজ স্থাপিত হয়েছে এবং আরও বেশ কয়েকটি ডায়মন্ড কাটিং ও পলিশিং ইন্ডাস্ট্রিজ স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। যা বাংলাদেশকে রপ্তানি বাণিজ্যে বিশ্বে এক সুউচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করবে। এ অবস্থায় অমসৃণ হীরা আমদানির ওপরে শূন্য শতাংশ শুল্ক ধার্য করলে রপ্তানি এবং অভ্যন্তরীণ বাজার বড় কর্মসংস্থান তৈরি হবে। অমসৃণ হীরা কাটিং, পলিশিং না করে কোনোভাবেই ব্যবহার করা যায় না। তাই অমসৃণ হীরা কাটিং করতে অনেক উচ্চ প্রযুক্তির মেশিনারিজ এবং বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন হয়, সেই ক্ষেত্রে কোনো অসৎভাবে ব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। এসব কিছু বিবেচনায় নিয়ে অলংকার রপ্তানি নীতি তৈরি করে বিশ্ববাজারে সহজভাবে প্রবেশ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ জুয়েলারি ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন।

সর্বশেষ খবর