রবিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

বোরোয় বাম্পার ফলনের আশা

উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ কোটি ৫ লাখ টন

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

শম্ভুগঞ্জ থেকে সীমান্তবর্তী উপজেলা হালুয়াঘাটের পিচঢালা পথ ধরে রাস্তার দুই পাশে যতদূর চোখ যায়, বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। সবুজ ধানের চারা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বাতাসে দোল খাচ্ছে। কচি ধান পাতার লুটোপুটি দেখে চওড়া হয়ে উঠে কৃষকের হাসি। খেতের আলে বসে আগাছা নিড়ানি দিতে দিতে বর্গাদার খালেক মিয়া বলে উঠেন, ‘মনে হইতাছে এইবার ফলন ভালা পাইয়াম।’ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সবুজ ধান খেতের এই চিত্র শুধু ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর নয়; নয় নরসিংদী, বরিশাল, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল কিংবা বগুড়ায়। সারা দেশের ৬৪ জেলার ৫৫ হাজার বর্গমাইলের ফসলের মাঠজুড়ে এখন সবুজের হাতছানি। বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এবার  বোরো আবাদের যে পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল সরকার, প্রকৃত আবাদের পরিমাণ তার চেয়েও বেশি। চলতি মৌসুমে ৪৮ লাখ ৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল, আবাদ হয়েছে ৪৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭৬০  হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় এ বছর মোট আবাদ  বেড়েছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে। গত মৌসুমে বোরো আবাদ হয়েছিল ৪৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ২ কোটি ১ লাখ ৮১ হাজার টন। আবাদ বেশি হওয়ায় এ মৌসুমে বোরো থেকে প্রায় ২ কোটি ৫ লাখ ৮১ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। প্রায় ৪ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদন বেশি আশা করছে সরকার। সম্প্রতি এক ওয়েবিনার শেষে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, বোরো ধানের আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি হয়েছে। এ ছাড়া উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য এ বছর হাইব্রিড ধানের আবাদ বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল, সেটিও লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে। আশা করা যায়, বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ধানের উৎপাদন অনেক ভালো হবে। কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, গত মৌসুমে বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আবাদ। সে কারণে এবার বোরো মৌসুম থেকে উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় সরকার। উচ্চফলনশীল ধানের আবাদ বাড়ানোর জন্য জেলায় জেলায় কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হয়। তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় বিনামূল্যে সার ও ধানের বীজ। কর্মকর্তারা জানান, এবার হাইব্রিড জাতের বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১১ লাখ ৪ হাজার ৬৩৩ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১২ লাখ ১৩ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে সম্প্রতি জানান, গত মৌসুমে বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে, তার ঘাটতি মেটাতে অতিরিক্ত প্রায় ২ লাখ হেক্টর জমিতে উচ্চফলনশীল ধানের আবাদ বাড়ানো হয়েছে। কৃষকদের বিনামূল্যে সার ও ধানের বীজ দেওয়া হয়েছে। এ বাবদ সরকার প্রায় ৭৬ কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছে। আমরা এবার বোরো আবাদে বাম্পার ফলনের আশা করছি। শুধু হাইব্রিড আবাদ থেকেই প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টন বেশি ফলন আশা করা হচ্ছে বলে জানান কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব।

এখন শুধু অপেক্ষা : বোরো আবাদ উঠে সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে। ধানের থোর ফুটতে শুরু করেছে। হালকা বৃষ্টির পানি পেলে সেই থোরের ভিতর পুষ্ট হবে ধানের ছড়া। তবে আছে শঙ্কাও। সাধারণত এ সময়ে শিলাবৃষ্টি হয় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। কখনো কখনো কালবৈশাখীর প্রচন্ড বাতাস তছনছ করে দেয় পাকা ধানের খেত। আর তাতেই কৃষকের সোনালি ফসলের স্বপ্ন বিবর্ণ হয়ে যেতে পারে এক লহমায়। সে কারণে ফলন তোলার আগে এপ্রিল-মে’র এই মধ্যবর্তী সময় আতঙ্কে থাকে কৃষক। ধারাবাজারের আনিছ নামে এক কৃষক বলেন, ‘খেতো সার, কীটনাশক, পানি সব দিয়া শেষ করছি। অহন আল্লা’র নাম লইয়া বইয়া রইছি, যেন বালায় বালায় আবাদটা তুলবার পাই। বাহিডা কফালের জোর ..!’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর